লিচুর বিচি কি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী?
লিচুর মজাদার রসালো শাঁসটুকু খাওয়ার পর বিচিটা আমরা ফেলে দিই। সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত লেখা এবং ভিডিওতে বলা হচ্ছে, লিচুর বিচি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। উপকারিতার কথা শুনে অনেকে সত্যতা যাচাই না করে লিচুর বিচি খাচ্ছেনও। এই প্রবণতা ভারতসহ আশপাশের কিছু দেশে বেশি খেয়াল করছি আমরা। এমনকি ভারতের কিছু প্রথম সারির গণমাধ্যমেও এই লিচুর বিচির উপকারিতা নিয়ে চটকদার খবরও নজরে এসেছে। আদতে কি লিচুর বিচি উপকারী?
বিভিন্ন অনলাইনে যা বলা হচ্ছে
বিভিন্ন স্বাস্থ্যবিষয়ক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টাল বলতে চাইছে, লিচুর বিচিতে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এটি শরীরের হজম ও বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। গ্যাসের সমস্যা দূর করে। এমনকি আর্থ্রাইটিস, হৃদ্রোগ ও ক্যানসারের বিরুদ্ধেও লড়াই করে। তাদের মতে, এটি ত্বকের জন্য উপকারী এবং শরীরের রক্ত সরবরাহ বাড়াতে ও গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
তাদের ভাষ্যমতে, লিচুর বিচি সরাসরি খাওয়া ঠিক নয়। সঙ্গে এ–ও বলছে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া লিচুর বিচি গ্রহণ করা যাবে না। চিকিৎসক পরামর্শ দিলে লিচুর বিচি গুঁড়া করে খুব অল্প পরিমাণে অন্যান্য খাবারের সঙ্গে খেতে হবে।
লিচুর বিচির স্বাস্থ্যঝুঁকি
লিচুর বিচিতে কিছু রাসায়নিক পদার্থ থাকে, যেমন মিথাইলিন সাইক্লোপ্রোপাইল–অ্যালানাইন (এমসিপিএ) ও মিথাইলিন সাইক্লোপ্রোপাইল–গ্লিসাইন (এমসিপিজি)। এসব রাসায়নিক পদার্থ মস্তিষ্কের গ্লুকোজের পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে, এতে মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। বিশেষ করে খালি পেটে খেলে বা যাঁরা অপুষ্টিতে ভুগছেন, তাঁদের বেলায় ঝুঁকি বেশি।
এ ছাড়া গোটা লিচুর বিচি খেতে গেলে গলায় আটকে যেতে পারে। এমন ঘটনা ঘটেছেও। এ ছাড়া এটি অন্ত্রনালির পথ বন্ধ করে দিতে পারে, যা থেকে পেটব্যথা, বমি বমি ভাব হতে পারে। সব মিলিয়ে লিচুর বিচি খাওয়া নিরাপদ নয়। এ ব্যাপারে ব্যাপক গবেষণা প্রয়োজন।
হয়তো গবেষণার পর লিচুর বিচি খাওয়ার উপযোগী হিসেবে ঘোষণা হতে পারে। এমনকি এটি ওষুধ কিংবা ওষুধের উপাদান হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে। যদি গবেষণায় প্রমাণিত হয়, লিচুর বিচি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, পরবর্তী সময়ে এটি প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ার উপযোগী করে নিতে হবে। তার আগপর্যন্ত নিজে থেকে বা না বুঝে, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ না নিয়ে লিচুর বিচি খাওয়া উচিত হবে না।
ডা. সাইফ হোসেন খান, মেডিসিন কনসালট্যান্ট, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, ধানমন্ডি, ঢাকা