যাঁদের ভ্রমণে মোশন সিকনেস হয়

বমি বা মাথা ঘোরানোর চিন্তায় ভ্রমণের আনন্দ মাটি করা যাবে না
ছবি : প্রথম আলো

 শুরু হয়েছে ঈদযাত্রা। অনেকেই পরিবার–পরিজন নিয়ে দেশের বাড়ির পথ ধরেছেন বা ধরবেন। অনেকেরই দীর্ঘ যাত্রায় কিছু শারীরিক সমস্যা অনুভূত হয়। যেমন মাথা ঘোরা, বমি ভাব বা বমি হওয়া। যাত্রাপথে মাথা ঘোরানো আর বমির সমস্যা খুবই পরিচিত সমস্যা। বিশেষ করে শিশুরা যাত্রাপথে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে। কারও কারও ক্ষেত্রে এত মারাত্মক হয় যে দূরপাল্লার যাত্রা এড়িয়ে চলতে চান। যানবাহনে চড়লে, বিশেষ করে কার, বাস, ট্রেন, এমনকি উড়োজাহাজেও এ রকম সমস্যা হতে পারে। এই সমস্যা মোশন সিকনেস নামে পরিচিত। আমাদের শরীরের ভারসাম্য রক্ষার জন্য মস্তিষ্ক, চোখ, অন্তঃকর্ণ একসঙ্গে কাজ করে। গতিশীল যানবাহনে চড়লে মস্তিষ্ক, চোখ এবং অন্তঃকর্ণের সংকেতের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা হয় কারও কারও ক্ষেত্রে। দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে সাংঘর্ষিক সংকেতের কারণে মাথা ঘোরা, বমি বা বমি ভাবের সৃষ্টি হতে পারে। আবার, যাঁদের মোশন সিকনেস নেই, তাঁদেরও অ্যাসিডিটি থেকে, ধোঁয়া বা গরম থেকেও বমি ভাবের সৃষ্টি হতে পারে।

যাঁদের মোশন সিকনেস আছে, তাঁরা দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণে বেশ ভোগান্তিতে পড়েন বলে দূরপাল্লার যাত্রা তাঁদের জন্য বেশ যন্ত্রণাদায়ক। কিন্তু ভ্রমণে এসব শারীরিক সমস্যার জন্য তো ঈদযাত্রা বন্ধ করা যাবে না। তাই কীভাবে মাথা ঘোরা বা বমির হাত থেকে বাঁচা যায়, সেই চেষ্টাই করতে হবে।

  • যানবাহনে সামনের দিকে বসলে কিছুটা আরাম হয়। জানালা খোলার ব্যবস্থা থাকলে জানালা খুলে বা খুলতে না পারলেও বাইরে তাকিয়ে থাকলে অসুবিধা কম অনুভূত হয়। অনেকেই আরাম করে আধশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ রাখলে বা ঘুমালে আরাম বোধ করেন।

  • বমির চিন্তা মাথা থেকে তাড়ানোর জন্য গান শোনা যেতে পারে, ভ্রমণসঙ্গীর সঙ্গে গল্প করা যেতে পারে।

  • ভ্রমণে খুব ভরপেট বা একদম খালি পেটে না থেকে হালকা শুকনো খাবার খাওয়া উচিত। ক্যাফেইন বা অ্যালকোহল–জাতীয় খাবার পরিহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। কখনো কখনো টক–জাতীয় খাবার বা চকলেট, লং, শুকনো আদা ইত্যাদি মুখে রাখলে বেশ আরাম হয়।

  • সঙ্গে দরকার ধূমপান পরিহার করা এবং ভ্রমণের আগের রাতে পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করা।

তবে, কারও কারও ক্ষেত্রে এত কিছু করেও শেষ রক্ষা হয় না। তাঁদের জন্য রয়েছে বাজার চলতি নানা পদের ওষুধ। বমির কিছু ওষুধ রয়েছে, যা ভ্রমণের আগের রাতে বা ঘণ্টাখানেক আগে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খেয়ে নিলে বেশ আরাম পাওয়া যায়। মোদ্দা কথা, বমি বা মাথা ঘোরানোর চিন্তায় ভ্রমণের আনন্দ মাটি করা যাবে না। শরীরে সমস্যা থাকতেই পারে কিন্তু তা মোকাবিলা করে সবার ঈদযাত্রা আনন্দময় হতে হবে। কারণ, বছর ঘুরে খুশির ঈদ একবারই আসে।

ডা. শাহনূর শারমিন: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ