শিশুদের মেরুদণ্ডে ব্যথা নানা কারণে হতে পারে এবং একে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত। ব্যথার কারণ নির্ভর করে শিশুর বয়স, দৈনন্দিন কার্যক্রম ও শারীরিক অবস্থার ওপর। এ সমস্যার কিছু সম্ভাব্য কারণ ও তাদের চিকিৎসা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
কারণ
অতিরিক্ত ভার বহন করা: স্কুলব্যাগ ভারী হলে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে, যা প্রায়ই শিশুর পিঠে ও মেরুদণ্ডে ব্যথার কারণ হয়ে থাকে।
দুর্বল ভঙ্গি: দীর্ঘক্ষণ ভুল ভঙ্গিতে বসা বা দাঁড়ানো, যেমন হেঁট হয়ে বসা, মোবাইল টেপা বা ভিডিও গেম খেলা।
চোট বা আঘাত: খেলাধুলার সময় পড়ে যাওয়া বা দুর্ঘটনার কারণে মেরুদণ্ডে আঘাত লাগতে পারে।
সংক্রমণ বা প্রদাহ: মেরুদণ্ডে কোনো সংক্রমণ হলে ব্যথা হতে পারে।
অস্থির বৃদ্ধি: শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি দ্রুত হলে কিছু ক্ষেত্রে পেশি ও হাড়ের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে ব্যথা হতে পারে।
জন্মগত সমস্যা: জন্মগতভাবে মেরুদণ্ডে কোনো ত্রুটি বা বিকৃতি থাকলে ব্যথা হতে পারে।
অস্টিওম্যালেশিয়া বা হাড়ের দুর্বলতা: ভিটামিন ডি বা ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড় দুর্বল হয়ে গেলে ব্যথা হতে পারে।
টিউমার বা সিস্ট: মেরুদণ্ডে কোনো টিউমার থাকলে তা ব্যথার কারণ হতে পারে, যদিও এটি বিরল।
চিকিৎসা ও পরামর্শ
ব্যথা এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
সমস্যার প্রকৃতি বুঝতে এক্স-রে বা এমআরআই করার প্রয়োজন হতে পারে।
সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও ভারসাম্যপূর্ণ স্কুলব্যাগ ব্যবহার করার অভ্যাস করানো।
ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার, যেমন দুধ, ডিম, মাছ খাওয়ানো।
সূর্যের আলোতে রোজ কিছুক্ষণ সময় কাটানো।
হালকা ব্যথার জন্য ফিজিওথেরাপি উপকারী হতে পারে।
পেশি ও মেরুদণ্ড শক্তিশালী করতে হালকা ব্যায়াম বা খেলাধুলা করানো।
যদি ব্যথা গুরুতর হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া যেতে পারে।
আঘাতজনিত ক্ষেত্রে বিশ্রাম ও প্রাথমিক চিকিৎসা, যেমন আইস প্যাক ব্যবহার করা যেতে পারে।
সতর্কতা
শিশু যদি নিয়মিত ব্যথার অভিযোগ করে বা ব্যথা বাড়তে থাকে, তবে অবিলম্বে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। শিশুকে বেশি ভারী কাজ করতে দেবেন না। খেলাধুলার সময় সুরক্ষা নিশ্চিত করুন। পুষ্টিকর খাবার ও শারীরিক কার্যক্রমে নজর দিন। ব্যথার ধরন দীর্ঘস্থায়ী হলেও দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এম. ইয়াছিন আলী: চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা