এই পাঁচ কৌশলে কি সত্যিই লম্বা হওয়া যায়
সন্তান ঠিকভাবে বাড়ছে তো? অনেক অভিভাবকেরই ভাবনার একটা বিশাল অংশজুড়ে থাকে এই প্রশ্ন। সন্তানের সুস্থ, স্বাভাবিক ও সফল জীবনের জন্য তাঁদের প্রয়াস চলে অবিরাম। শিশুর উচ্চতা বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশলও অবলম্বন করেন কেউ কেউ। আদতেই কি সেসব কার্যকর? নাকি লম্বা হওয়ার জন্য ভিন্ন কোনো উপায় অবলম্বন করলে উপকার মেলে?
নির্দিষ্ট একটা বয়সের পর উচ্চতা আর বাড়ে না। তাই ছোটবেলা থেকে এ বিষয়ে খেয়াল না রাখলে পরে আর কিছু করার থাকে না। তবে এটাও সত্য যে জিনগত কারণে কারও উচ্চতা কম হয়, কারও বেশি। তবে জিনগত দিক থেকে একটি শিশুর বেশ লম্বা হওয়ার বৈশিষ্ট্য থাকা সত্ত্বেও জীবনযাপনের ভুল পদ্ধতির কারণে তার উচ্চতা কম থেকে যেতে পারে। তাই এসব বিষয় সম্পর্কে জেনে রাখা ভালো, যা উচ্চতা বাড়ানোর জন্য প্রয়োজনীয় ও সহায়ক ভূমিকা রাখে। এমনটাই বলছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান।
ঠিকঠাক পুষ্টি গ্রহণ
দেহ গঠনের বনিয়াদ আমিষজাতীয় খাবার। মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, সয়া, টোফু, নানান ধরনের ডাল ও বীজ, বাদাম প্রভৃতি খাবারে মিলবে আমিষ। প্রাণিজ উৎসের আমিষ বাড়ন্ত শরীরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। উদ্ভিজ্জ উৎস থেকে খাবার খেলে একাধিক উদ্ভিজ্জ উৎস বেছে নিতে হবে আমিষের জন্য। ক্যালসিয়ামও চাই হাড় গঠনের জন্য। তাই শিশুকে দিতে পারেন দুধ, দুধের তৈরি খাবার (যেমন দই, পনির), কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ, পালংশাক, ব্রকলি প্রভৃতি। ভিটামিন ডি চাই পর্যাপ্ত। তাই শিশুকে রোজ ১৫–৩০ মিনিট শরীরের অধিকাংশ স্থান খোলা রেখে রোদে থাকতে দেওয়াও জরুরি। জিংকও প্রয়োজন দেহের বৃদ্ধির জন্য। বাদাম, শিমজাতীয় বীজ ও অন্যান্য বীজে পর্যাপ্ত জিংক থাকে। গরুর মাংসেও থাকে জিংক।
পর্যাপ্ত ঘুমানো
ঘুমানোর সময় শিশুদের দেহে গ্রোথ হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শিশুর বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য। তাই শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা খুবই জরুরি। রাত জেগে পড়ালেখা করার পর বা ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ে সময় কাটানোর পর শিশুকে সকালে জোর করে ঘুম থেকে স্কুলে পাঠানোটাই যদি হয় নিত্যদিনের চিত্র, তাহলে শিশুর উচ্চতা সঠিকভাবে না বাড়ার ঝুঁকি থাকে। সময়মতো শিশুকে ওঠাতে হলে সময়মতো ঘুমাতে পাঠাতেও হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা
উচ্চতা বাড়ানোর জন্য ঝুলে থাকা বা সাইকেল চালানোর মতো শরীরচর্চার প্রচলন আছে। বৈজ্ঞানিকভাবেই এসব ব্যায়ামকে উচ্চতা বাড়াতে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দৌড়ঝাঁপ, দড়িলাফ, ছোটাছুটি—সবই করতে দিন শিশুকে। রোজ অন্তত একটা ঘণ্টা এমন খেলা খেলতে দিন, যাতে দেহের পেশিগুলো ভালোভাবে নড়াচড়া করা হয়। নৃত্যকলা কিংবা কিছু যোগব্যায়ামেও উপকার মিলতে পারে।
সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখা
বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্কুলব্যাগের ভারে নুয়ে পড়া শিশুটি কীভাবে লম্বা হবে, বলুন! মেরুদণ্ডের স্বাভাবিক আকৃতি বজায় না থাকলেই কিন্তু মুশকিল। শোয়া, বসা, দাঁড়ানো বা হাঁটাচলা—কোনো সময়ই কিন্তু মেরুদণ্ড বাঁকিয়ে রাখা যাবে না। এমনকি বড় হয়ে যাওয়ার পরও ভুল দেহভঙ্গির কারণে একসময় উচ্চতা কমে যেতে পারে।
মনের যত্ন নেওয়া
মনের স্বাস্থ্যের সঙ্গে শরীরের স্বাস্থ্য পরোক্ষভাবে যুক্ত। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুর বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। শিশুর মনের যত্ন নিন। নেশাদ্রব্যের কারণে উচ্চতা বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। খেয়াল রাখুন, শিশু কাদের সঙ্গে মেলামেশা করছে। আগ্রহের বশেও যেন শিশু নেশাদ্রব্য গ্রহণ না করে, সেদিকে কড়া নজর রাখুন। তবে ভয় দেখাবেন না বা আতঙ্কে ফেলবেন না তাকে।