এই ক্যানসারে নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হন
মুখগহ্বর থেকে পাকস্থলী পর্যন্ত সংযোগ করা নলটি খাদ্যনালি। মুখ থেকে পাকস্থলীতে খাবার পৌঁছে দেওয়াই যার কাজ। নানা কারণে এ খাদ্যনালির অভ্যন্তরে ক্যানসার হতে পারে। যে ক্যানসারে আবার নারীদের তুলনায় পুরুষেরা বেশি আক্রান্ত হন।
কোষের প্রকৃতি অনুযায়ী খাদ্যনালির ক্যানসার চার ধরনের হতে পারে। তবে এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে ধরনটি দেখা যায়, তা হলো স্কোয়ামাস সেল ক্যানসার। খাদ্যনালির ক্যানসারের ৯০ শতাংশের জন্য দায়ী এ ধরন। আশার কথা হলো, প্রাথমিক অবস্থায় চিহ্নিত করা গেলে এ ধরনের ক্যানসার সার্জারি, কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
খাদ্যনালিতে কেন ক্যানসার হয়
খাদ্যনালিতে ক্যানসারের সঠিক কারণ এখনো অজানা। ধারণা করা হয়, রোগটি ডিএনএতে পরিবর্তনের জন্য হয়ে থাকে। ফলে অতিমাত্রায় কোষ বৃদ্ধি করে টিউমারের জন্ম দেয়। তবে কিছু বিষয় এর ঝুঁকি বাড়ায়।
যে কারণগুলো খাদ্যনালিতে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় বলে বিবেচিত—
১. জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রো–ইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ। এটি একটি হজমজনিত সমস্যা, যা হলে পাকস্থলীর অ্যাসিড বা অম্ল ওপর দিকে এসে খাদ্যনালিতে ধাক্কা দিতে শুরু করে। ক্রমাগত এই অ্যাসিডের সংস্পর্শে এলে খাদ্যনালির কোষে স্থায়ী পরিবর্তন দেখা দেয়। ফলে ক্যানসার হতে পারে। তাই দীর্ঘস্থায়ী জিইআরডি খাদ্যনালিতে ক্যানসারের কারণ হতে পারে।
২. তামাক, অ্যালকোহল, ফাস্ট ফুড বেশি গ্রহণ করা।
৩. পেটের যেকোনো ধরনের দীর্ঘমেয়াদি হজমজনিত সমস্যা।
৪. প্লাস্টিক বা ক্ষতিকর রাসায়নিকের সংস্পর্শে দীর্ঘদিন কাজ করা।
৫. ঘন ঘন বা অবিচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘদিন গরম পানীয় পান করা।
কীভাবে বুঝবেন
শক্ত খাবার গিলতে অসুবিধা হওয়া এবং পরবর্তী সময়ে তরল খাবার খেতে, এমনকি ঢোক গিলতেও কষ্ট হওয়া। দীর্ঘদিন ধরে হজমে সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, বারবার ঢেঁকুর তোলা, পেটব্যথা ইত্যাদি। অরুচি, ওজন হ্রাস। কাশি, রাতে শ্বাসকষ্ট, গলা ও বুকে ব্যথা। দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
তবে এ লক্ষণগুলো খুবই পরিচিত ও সাধারণ হওয়ার ফলে অনেকেই আমলে নেন না, দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ, হজমের ওষুধ খেতে থাকেন। বেশির ভাগই শুরুর দিকে বুঝতে পারেন না যে এটা ক্যানসারের পর্যায়ে যেতে পারে। তাই দীর্ঘদিন এ ধরনের পরিপাকের সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
প্রতিরোধযোগ্য
জীবনযাত্রার পরিবর্তন এনে খাদ্যনালির ক্যানসার থেকে নিজেকে রক্ষা করা যায়।
ধূমপান ও তামাকজাতীয় দ্রব্য বর্জন করুন।
ফাস্ট ফুড, অতিরিক্ত চর্বি ও অ্যালকোহল–জাতীয় খাবার বর্জন করুন। তার বদলে প্রচুর শাকসবজি ও তাজা ফল খান।
পরিমিত পুষ্টিকর খাবার ও হাঁটাচলার মাধ্যমে ওজন ঠিক রাখুন।
চিকিৎসা
খাদ্যনালির ক্যানসার হলে চিকিৎসাপদ্ধতিটি কোষের ধরনের ওপর নির্ভর করে। সাধারণত ধরন বিবেচনা করে সার্জারি, কেমোথেরাপি, ইমিউনোথেরাপি বা রেডিওথেরাপি ব্যবহার করা হয়। যদি সঠিক সময়ে ক্যানসার ধরা পড়ে, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৪৭-৫০ শতাংশের কাছাকাছি হতে পারে। আর যদি ক্যানসার ক্রমেই শক্তিশালী হতে থাকে তবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ২৫ শতাংশে নেমে আসে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে পারলে এ ঘাতক ব্যাধি বা খাদ্যনালির ক্যানসার থেকে সুরক্ষা পাওয়া যায়।
*অধ্যাপক ডা. মো. সেতাবুর রহমান: সাবেক বিভাগীয় প্রধান, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, ঢাকা