নবজাতকের জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে কি না, বুঝবেন কীভাবে, চিকিৎসা কী

কিছু নবজাতক জন্মের সময় হৃদ্‌রোগ নিয়ে জন্ম নেয়ছবি: আনস্প্ল্যাশ

কিছু নবজাতক জন্মের সময় হৃদ্‌রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। সাধারণত হাজারে ৮ থেকে ১০টি শিশু জন্মগত হৃদ্‌রোগ নিয়ে জন্মায়। এসব শিশুর ২০ থেকে ২৫ শতাংশের হৃদ্‌যন্ত্রে অস্ত্রোপচার করতে হয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই অস্ত্রোপচারের দরকার হয় প্রথম বছরের মধ্যেই।

জন্মগত হৃদ্‌রোগের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানা যায়নি। এটি একটি মাল্টিফ্যাক্টরিয়াল রোগ; যার মধ্যে মায়ের রোগবালাই, ভ্রূণ বা জেনেটিক কারণ রয়েছে। জন্মগত হৃদ্‌রোগে যদি ভাইবোন আক্রান্ত হয়, তবে অন্য ভাইবোনের এতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ৩ থেকে ৫ শতাংশ বেড়ে যায়। এ ছাড়া গর্ভাবস্থায় মায়ের সংক্রমণ যেমন টক্সোপ্লাজমা, রুবেলা, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ফিনাইলকেটোনুরিয়া, ফলিক অ্যাসিডের অভাব দায়ী হতে পারে। জন্মগত হৃদ্‌রোগকে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়—সায়ানোটিক ও অ্যাসিনোটিক।

সায়ানোটিক জন্মগত হৃদ্‌রোগে শিশু নীল হয়ে যায়। শরীরে অক্সিজেনের সরবরাহ কম থাকে। অ্যাসিনোটিকে শিশুর রক্তে পর্যাপ্ত অক্সিজেন থাকলেও শরীরে অস্বাভাবিকভাবে প্রবাহিত হয়। হৃৎপিণ্ডে ছিদ্র, ভালভের সমস্যা বা হৃদ্‌যন্ত্রের কার্যকারিতার সমস্যায় এ রকম ঘটে।

সব ধরনের জন্মগত ত্রুটির মধ্যে ভেন্ট্রিকুলার সেপ্টাল ডিফেক্ট বা হার্টের নিচের দিকের পর্দায় ছিদ্র সবচেয়ে সাধারণ। একবার চিকিৎসা করা হলে অ্যাসিনোটিক হৃদ্‌রোগের শিশু পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে।

কীভাবে বুঝবেন

  • অ্যাসিনোটিক হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত অনেক শিশুর কোনো লক্ষণ থাকে না। হৃৎপিণ্ড অতিরিক্ত স্পন্দিত হয়। এটিকে মাঝারি ধরনের সমস্যা বলা যেতে পারে। প্রথম অবস্থায় তেমন সমস্যা না হলেও পরে সমস্যা বাড়তে থাকে।

  • অ্যাসিনোটিক হৃদ্‌রোগে সাধারণ লক্ষণ হিসেবে শ্বাসকষ্ট, দ্রুত হৃৎস্পন্দন, ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া, কখনো কখনো অচেতন হয়ে পড়ার মতো সমস্যা হতে পারে।

  • সায়ানোটিক হৃদ্‌রোগের ক্ষেত্রে শিশুর মধ্যে যেসব লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা হলো, হাত–পায়ের ত্বক ও নখের নীলচে বর্ণ হওয়া, খিঁচুনি বা অচেতন অবস্থা, ওজন বৃদ্ধি না পাওয়া।

আরও পড়ুন

রোগনির্ণয়

রোগনির্ণয়ে বুকের এক্স-রে, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রামের দরকার হয়। এ ছাড়া কার্ডিয়াক ক্যাথেটারাইজেশন, সিটি বা এমআরআই অব হার্ট ব্যবহার করা হয়।

চিকিৎসা

  • মৃদু ধরনের অ্যাসিনোটিক হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত শিশুর কোনো চিকিৎসা প্রয়োজন না-ও হতে পারে। শুধু ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যায়।

  • হৃৎপিণ্ডে মাঝারি বা বড় ছিদ্রযুক্ত ত্রুটিতে শিশুর অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক অপারেটেড বাচ্চার দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ প্রয়োজন হয়।

অধ্যাপক ডা. মীর জামাল উদ্দীন, ক্লিনিক্যাল ও ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হসপিটাল লি., শ্যামলী, মিরপুর, ঢাকা

আরও পড়ুন