আপনার শিশুর কি ডেঙ্গু?

জ্বর হলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করতে হবে । প্রতীকী এই ছবির মডেল আজমির
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

ডেঙ্গুজ্বরে শিশুর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। শারীরিক দুর্বলতায় ভুগতে পারে শিশু, ফুসকুড়ির যন্ত্রণাতেও অতিষ্ঠ হয়ে পড়তে পারে। অনেক অসুস্থ শিশু মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে। সঠিক চিকিৎসা না নেওয়া হলে শিশুর জীবননাশের শঙ্কাও থাকে।

শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গুর উপসর্গ বড়দের মতো নাও হতে পারে। ছোট শিশুর পক্ষে অনেক উপসর্গের কথা সঠিকভাবে প্রকাশ করাও সম্ভব হয় না। মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, হাত-পায়ে ব্যথার মতো যন্ত্রণার কথাও অনেকে বোঝাতে পারে না। অনেকে শিশুর খাওয়া কমে যায়। দেখলেই বোঝা যায়, সে কোনো অস্বস্তিতে ভুগছে। চারপাশের পরিবেশের প্রতি বিরক্ত থাকতে পারে, অভিভাবককেও অতিরিক্ত বিরক্ত করতে পারে। শিশুর ডেঙ্গুজ্বর প্রসঙ্গে এমন নানা তথ্য দিলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সারাবন তহুরা।

যা করতে হবে

ডেঙ্গুজ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে জ্বরের প্রথম তিন দিনের মধ্যেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। জ্বরের কততম দিনে কোন পরীক্ষা করালে ডেঙ্গুজ্বর নির্ণয় করা যাবে কিংবা ডেঙ্গুজ্বর হয়নি বলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, সিবিসি বা অন্য কোনো রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে কি না, বা কোনো পরীক্ষা পুনরায় করাতে (ফলো আপ) হবে কি না, সেগুলো চিকিৎসকই বলে দেবেন।

অল্প অল্প করে বারবার তরল খাবার দিন। তবে অতিরিক্ত চাপাচাপি করবেন না; কারণ, বমি হয়ে গেলে শিশুরই ক্ষতি।

জ্বর বা ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য ওষুধ দেবেন না।

খেয়াল রাখুন বিপদচিহ্ন

নিচের লক্ষণগুলোর যেকোনটি দেখা দিলেই সত্বর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন—

  • প্রস্রাব কম হওয়া

  • নেতিয়ে পড়া

  • পেটব্যথা

  • শ্বাসকষ্ট

  • খিঁচুনি

  • কিছুই খেতে না পারা

  • জ্বর একেবারেই না কমা

  • হঠাৎ ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

  • হঠাৎ করেই শান্ত শিশুর চঞ্চল হয়ে যাওয়া কিংবা চঞ্চল শিশুর একদম শান্ত হয়ে যাওয়া

  • শিশু অতিরিক্ত ত্যক্ত-বিরক্ত করা

  • যেকোনো রক্তক্ষরণ (চামড়ার নিচেও হতে পারে)

পাঁচ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর যেকোনো কারণে জ্বর হলেই খিঁচুনি হতে পারে। মডেল: আজমির
ছবি: সাবিনা ইয়াসমিন

আরও যা জেনে রাখা ভালো

ডেঙ্গুজ্বরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। তবে একই সঙ্গে অন্য সংক্রমণ থাকলে অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েডজাতীয় ওষুধ দেবেন না।

শিশুকে বাড়িতে পর্যাপ্ত তরল খাওয়ানো না গেলে হাসপাতালে নিয়ে যান। বাড়ি বা ওষুধের দোকানে নিয়ে শিরাপথে স্যালাইন দেবেন না। প্রয়োজনীয় মাত্রার চাইতে কম বা বেশি তরল শিরাপথে দেওয়া হলে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি হয়।

জ্বরের সঙ্গে খিঁচুনি হলে সেটি ডেঙ্গুজ্বর নয় বলে ধরে নেওয়া যাবে না। পাঁচ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর যেকোনো কারণে জ্বর হলেই খিঁচুনি হতে পারে। পরিবারের অন্য শিশুদের এমন খিঁচুনির ইতিহাসও থাকতে পারে।