বাড়িতে প্রসব কেন অনিরাপদ?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ২০২৩ সালের একটি প্রতিবেদন বলছে, দেশে এখনো বাড়িতে সন্তান প্রসবের হার প্রায় ৩৩ শতাংশ। তারও বেশ বড় একটা অংশের প্রসব অদক্ষ দাইয়ের হাতে হয়ে থাকে। ফলে একদিকে যেমন মায়েরা প্রসবকালীন বিভিন্ন জটিলতার শিকার হন, তেমনই নবজাতকের জটিলতাও নেহাত কম হয় না। উপযুক্ত স্বাস্থ্যসেবা পেলে যেখানে প্রসূতি মা ও সন্তান দুজনই সুস্থ থাকত, সেখানে তাদের কেউ একজন বা দুজনই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। গত ১৩ মার্চ বাড়িতে সন্তান প্রসবের পর সাফজয়ী নারী ফুটবলার রাজিয়া সুলতানার মৃত্যু এ রকমই অনিরাপদ প্রসবের এক নির্মম উদাহরণ।
বাড়িতে অনিরাপদ হাতে প্রসবে মা ও সন্তান উভয়েরই বিপদ হতে পারে।
মায়ের সম্ভাব্য বিপদগুলোর মধ্যে আছে—
বিলম্বিত প্রসব।
প্রতিবন্ধক প্রসব বা অবস্ট্রাকটেড লেবার।
প্রসবপরবর্তী রক্তক্ষরণ।
খিঁচুনি।
অনিরাপদ হাতে প্রসব হওয়ায় বিভিন্ন ইনফেকশন, যেমন ধনুষ্টংকার।
ভেসিকো ভ্যাজাইনাল ফিস্টুলা ও রেকটো ভ্যাজাইনাল ফিস্টুলা।
সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা না নিতে পারায় মৃত্যু।
বাড়িতে প্রসব হলে নবজাতক যেসব সমস্যার সম্মুখীন হয়, সেগুলোর জন্যে দ্রুত ও সময়োপযোগী ব্যবস্থা নেওয়া অনেক সময়ই সম্ভব হয় না। ফলে বাচ্চাকে তাৎক্ষণিক ও ভবিষ্যৎ জীবনে বিভিন্ন ধরনের জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হয়। সেগুলো হলো:
পেরিন্যাটাল অ্যাস্ফ্যাক্সিয়া বা বাচ্চা জন্মের পর কাঁদতে দেরি করা বা শ্বাস নিতে দেরি করা। নবজাতক জন্মের পর কাঁদতে দেরি করলে অক্সিজেনের অভাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিশেষ করে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। বাচ্চা পরে সেরেব্রাল পালসিতেও আক্রান্ত হতে পারে।
শিশুর বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ যেমন জন্মগত নিউমোনিয়া, মেনিনজাইটিস, অন্ত্রে প্রদাহ, নাভিতে ইনফেকশন হতে পারে। বাচ্চার জন্ডিস দীর্ঘস্থায়ী হয়ে মস্তিষ্ককেও আক্রমণ করতে পারে।
বাচ্চার খিঁচুনি হতে পারে, যা পরে বিভিন্ন জটিল রূপ ধারণ করতে পারে। এমনকি আজীবন মৃগীরোগ থেকে যেতে পারে।
নিরাপদ জায়গায় নিরাপদ প্রসব
মা ও শিশু উভয়েরই মৃত্যুহার আর জটিলতা কমাতে নিরাপদ প্রসবের বিকল্প নেই। নিরাপদ প্রসবও হতে হবে নিরাপদ জায়গায়। হাসপাতাল হবে মানসম্মত ও পরিচ্ছন্ন। নিরাপদ যন্ত্র দিয়ে নিরাপদ হাতে প্রসব হতে হবে। প্রসবের জন্যে প্রশিক্ষিত দাই থাকতে হবে। প্রসবকালীন জটিলতায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসকের কাছে রেফারেল ও দরকার হলে সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে ডেলিভারির ব্যবস্থা থাকতে হবে। সদ্যজন্মানো শিশুর যেকোনো জটিলতায় তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
ডা. ফারাহ দোলা, বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর