চুল রং করলে কি ক্ষতি হতে পারে

মডেল: রাবু
ছবি: অগ্নিলা

কারও চুল সাদা হয়ে গেলে, কেউ আবার ফ্যাশন ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মেলাতে চুলে রং করেন। চুল রং করলে একটা নির্দিষ্ট সময় পরপর রং করার প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই ‘হেয়ার কালারের’ অনেকগুলোতেই এমন কিছু রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, যা চুলের পাশাপাশি শরীরের নানা রকম ক্ষতি করে।
যুক্তরাষ্ট্রের মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত সমীক্ষা থেকে জানা গেছে, হেয়ার স্টাইলিংয়ের জন্য ব্যবহৃত পণ্যগুলোর মধ্যে যে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়, তাতে ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়তে পারে। হেয়ার কালারের মধ্যে ডায়ামিনোসেল সালফেট ও প্যারা-ফেনিল্যান্ডামাইনের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। এই রাসায়নিক ক্যানসারের মতো কোষ উৎপন্ন করতে সাহায্য করে। এই রাসায়নিকগুলো হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দিতেও সক্ষম। চুলের রঙের কারণে হাঁপানির মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে বা এই সমস্যা বাড়তে পারে।

যাঁরা নিয়মিত চুল রং করেন, তাঁদের ত্বকে অ্যালার্জির সমস্যা দেখা দেয়। হেয়ার কালারে থাকে ক্ষতিকর রাসায়নিক পিপিডি, যা ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অনেকের ত্বক আবার কিছুটা সেনসিটিভ। হেয়ার কালারের ফলে মাথার ত্বকে র‍্যাশ, জ্বলা, ফুলে যাওয়া ও খুশকির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ছাড়া অ্যালার্জি যদি মারাত্মক পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে এর প্রভাব চোখে পড়ে। চুলের পাশাপাশি ত্বকের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে হেয়ার কালার। চুলের ক্রিটিক্যালস সহজে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। চুল রুক্ষ হয়ে যাওয়া বা চুল পড়াও একটি ক্ষতিকর দিক। কারণ, এই রঙে থাকে অ্যামোনিয়া।
চুলে বারবার রং করলে মাথার ত্বকের স্বাভাবিক লিপিডের স্তর নষ্ট হয়ে যায়। চুলের গোড়া থেকে ময়েশ্চার বেরিয়ে যায়, ফলে চুল হয়ে ওঠে রুক্ষ। আর তারপরই চুল পড়তে শুরু করে। রঙে থাকা পিপিডি, লেডের মতো ক্ষতিকর উপাদানগুলো চুলের গোড়ায় জমা হতে থাকে। এখান থেকে তা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, যা ক্যানসারের কারণও হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বাদের গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।

মডেল: অন্তরা
ছবি: প্রথম আলো

কোন রঙে কী ক্ষতি

হেয়ার কালার মূলত চুলের তিন ধরনের ক্ষতি করে।
১. অস্থায়ী রং: এ ধরনের রংগুলো ক্ষণস্থায়ী। চুলের এই রং একবার শ্যাম্পু করলেই উঠে যায়। খুব একটা ক্ষতি করতে পারে না। কারণ, তা চুলের গোড়ায় প্রবেশ করে না। কেবল ওপর দিয়ে সাময়িকভাবে চুলের রংটা বদলে দেয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করলে এ ধরনের অস্থায়ী রং থেকেও ক্ষতি হতে পারে।
২. আধা স্থায়ী রং: চুলের এ ধরনের রং থেকে দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি হয়। এই রং ৮-১২ বার শ্যাম্পু করলে চুল থেকে ওঠে। এগুলো মোটেও ভালো নয়। দু-একবার মাথায় দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু বেশি দিলে চুল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
৩. স্থায়ী রং: স্থায়ীভাবে চুলের ক্ষতি করে। দীর্ঘদিন এই রং ব্যবহার করলে এর মধ্যে থাকা অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, পিপিডি, লেডের মতো ভয়ংকর ক্ষতিকর উপাদানগুলো চুলের গোড়ায় জমা হতে থাকে। সেখান থেকেই অ্যালার্জি, এমনকি ত্বকের ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। এই রং চুলে দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
উপাদানের দিক থেকেও চুলের রং বা হেয়ার ডাইকে ভাগ করা যেতে পারে।
১. কেমিক্যাল রং: এ ধরনের চুলের রং দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে চুল এবং স্বাস্থ্যের ভয়াবহ ক্ষতি হতে পারে। বাজারে এ ধরনের হেয়ার ডাইয়ের দাম কিছুটা বেশি।
২. সিনথেটিক রং: সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে যে চুলের রং, কলপ বা হেয়ার ডাইগুলো দেখা যায়, সেগুলো মূলত এই শ্রেণির। এগুলোও চুল এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
তাহলে কি চুলে রং করা যাবে না?
চুলে রং না করারই পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। এর চেয়ে বরং চুলে খাঁটি নারকেল তেল, শ্যাম্পু, কন্ডিশনারের মতো জিনিস ব্যবহার করা ভালো। যাঁদের চুল পেকে যাচ্ছে বা সাদা হয়ে যাচ্ছে, তাঁরা অনেকেই চুল রং করতে আগ্রহী হন। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি জিনিস মাথায় রেখে চুলে রং করলে সমস্যা কম হবে।
৬ শতাংশের কম পিপিডি আছে, এমন হেয়ার কালার ব্যবহার করুন। তাহলে চুলের ক্ষতি কম হবে। চুলে কলপ দেওয়ার বা হেয়ার ডাই করার আগে ভালো করে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিন। সেই সঙ্গে ভিটামিন-সি ক্যাপসুল খান। ভুলেও দীর্ঘ সময় রং ধরে রাখবে, এমন স্থায়ী হেয়ার কালার লাগাবেন না। একবার শ্যাম্পু করলেই উঠে যাবে, এমন রঙের দিকে নজর দেওয়া ভালো। অ্যালার্জি থাকলে চুলে রং করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।


লেখক: ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা