চুল পড়া বা টাকের একটি আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট বা চুল প্রতিস্থাপন। দেহের অন্যান্য অঙ্গের (যেমন কিডনি, চোখ) মতো চুলও প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মাথার এক অংশ থেকে চুল নিয়ে অন্য অংশে লাগিয়ে দেওয়া হয়।
মাথার সামনের অংশকে বলা হয় টেম্পোরারি জোন। এ অংশের চুল স্থায়ী নয়। বয়সের সঙ্গে, বংশগত বা হরমোনের কারণে অথবা কোনো শারীরিক জটিলতায় এ চুল ঝরে যায়।
মাথার পেছন দিকে ও কানের দুই পাশের অংশকে বলে পারমানেন্ট জোন। এই অংশের চুল স্থায়ী।
পারমানেন্ট জোনের যেখান থেকে চুল বা ফলিকল তুলে আনা হয়, তাকে বলা হয় ‘ডোনার এরিয়া’।
কতভাবে চুল প্রতিস্থাপন
চুল প্রতিস্থাপন একটি সূক্ষ্ম সার্জারি। এর তিনটি পদ্ধতি রয়েছে।
১. এফইউটি (ফলিকিউলার ইউনিট ট্রান্সপ্যান্টেশন)
২. এফইউই (ফলিকিউলার ইউনিট এক্সট্র্যাকশন)
৩. ডিএইচআই (ডাইরেন্ট হেয়ার ইমপ্ল্যান্টেশন)
কীভাবে চুল প্রতিস্থাপন
এফইউটি পদ্ধতিতে মাথার পেছন থেকে চওড়ায় প্রায় আধা ইঞ্চি পরিমাণ চামড়া কেটে তুলে আনা হয়। সেখান থেকে ফলিকল কেটে বের করে লাগানো হয় মাথার সামনের অংশে। এ পদ্ধতি তুলনামূলক জটিল।
এফইউই পদ্ধতিতে একটি মাইক্রোমটর দিয়ে ডোনার এরিয়া থেকে প্রতিটি চুলকে আলাদা করে তুলে আনা হয়। পরে সামনের অংশে আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়। এতে কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন পড়ে না।
ডিএইচআই চুল প্রতিস্থাপনের সবচেয়ে আধুনিক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে হ্যান্ড পাঞ্চ ব্যবহার করে প্রতিটি চুল হাত দিয়ে তোলা হয়। এতে জটিলতা কম।
কাদের জন্য
বয়স ২৫-৩০ না হতেই বংশগত বা হরমোনের কারণে যাঁরা টাকের সমস্যায় পড়ে যান।
মেনোপজের পর নারীদের মধ্যে যাঁদের টাক পড়ে।
দুর্ঘটনার কারণে যাঁরা চুল হারিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ সেসব ক্ষেত্রে নতুন করে চুল গজানো প্রায় অসম্ভব।
চুল প্রতিস্থাপনের সুবিধা
প্রতিস্থাপিত চুল কিছুদিন পর ঝরে গিয়ে আবার গজাতে শুরু করে। চার থেকে ছয় মাসের মধ্যে এই চুল গজানো শুরু হয়। সে হিসাবে আপনি এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে চুল প্রতিস্থাপনের সুবিধাগুলো পেতে শুরু করবেন।
চুল প্রতিস্থাপনের পর বিশেষ কোনো যত্নের প্রয়োজন পড়ে না। এমনকি ফলোআপেরও তেমন দরকার নেই।
প্রতিস্থাপিত চুল কেটে ছোট করা, রিবন্ডিং বা কার্ল করতেও কোনো সমস্যা হয় না।
শুধু মাথা নয়, ভ্রু, গোঁফ ও দাড়িতেও চুল প্রতিস্থাপন করা যায়।
ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, চর্ম, যৌন ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জারি বিভাগ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল, ঢাকা