পেটে ব্যথা, অস্বস্তি হলেই আমাদের প্রথম মনে হয়, নিশ্চয়ই পেটে গ্যাস হয়েছে। বেশির ভাগ সময় গ্যাস্ট্রিক ধরে নিয়ে অ্যান্টাসিড বা ওমিপ্রাজলের মতো ওষুধ সঙ্গে সঙ্গে খেয়েও ফেলি কেউ কেউ।
দুটো বিষয় লক্ষ করা উচিত। প্রথমত, পেটব্যথা মানেই গ্যাসের ব্যথা নয়। দ্বিতীয়ত, দিনের পর দিন না বুঝে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ মুড়ি-মুড়কির মতো খাওয়াটা ঠিক নয়।
পেটের ওপরের দিকে ব্যথা হলে তা পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার ছাড়া অন্য কিছুও হতে পারে। যেমন: নন-আলসার ডিসপেপশিয়া হলে পেটে অস্বস্তি, পেট ভার, বুকজ্বালা, বমি ভাব হতে পারে। পিত্তথলিতে পাথর থাকলেও এ ধরনের উপসর্গ হতে পারে। এমনকি কখনো কখনো হৃদ্রোগেও বুকে ব্যথা না হয়ে পেটের ওপরের দিকে ব্যথা হয় এবং রোগীকে ভ্রান্তিতে ফেলে দেয়। যকৃৎ বা অগ্ন্যাশয়ের কোনো রোগে পেটের উপরিভাগে ব্যথা হতে পারে। মানসিক টানাপোড়েনেও কিন্তু পেটব্যথা বা জ্বালা করে।
আইবিএস বা ইরিটেবল বাউয়েল সিনড্রোমে পেটের যেকোনো ব্যথার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য বা বেশি বেশি পায়খানা হয়। দিনের প্রথমার্ধে বা সকালেই ব্যথা বেশি থাকে, বারবার টয়লেটে যেতে হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে তেমন কিছু পাওয়া যায় না। পেপটিক আলসার পাকস্থলীতে হলে খাওয়ার পরে বাড়ে। পিত্তথলির ব্যথাও খাওয়ার পরে, বিশেষ করে ভারী খাবার খেলে বাড়ে। কিন্তু অন্ত্রের আলসার বা ডিওডেনাল আলসার খালি পেটেই বেশি হয়। পেটব্যথার সঙ্গে অরুচি এবং ওজন কমে গেলে পাকস্থলী বা অন্ত্রে ক্যানসার আছে কি না সন্দেহ করা উচিত। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি নামের রোগজীবাণু পাকস্থলীতে প্রদাহ সৃষ্টি করলে পেটব্যথা হয়। এ ধরনের ব্যথায় এন্ডোসকপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি সংক্রমণে ওষুধের কোর্স শেষ করতে হয়।
পেটব্যথার কারণ না জেনে-বুঝে গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে থাকলে পাকস্থলীর পিএইচ বা রাসায়নিক পরিবেশ বিনষ্ট হতে পারে। নানা ধরনের ভিটামিন খনিজ শোষণে সমস্যা হতে পারে এবং সে কারণে ভিটামিনশূন্যতা ও রক্তশূন্যতা হতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, এসব ওষুধ দীর্ঘ মেয়াদে খেলে অস্টিওপোরোসিস, কিডনির ক্ষতি ইত্যাদি হতে পারে। গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ দিনের পর দিন খেলে অনেক সময় উপসর্গ রহিত হয় এবং জটিল কোনো রোগ, যেমন ক্যানসার বা অগ্ন্যাশয়ের সমস্যা সহজে ধরা পড়ে না।
তাই মাঝেমধ্যেই পেটব্যথা, অস্বস্তি হলে চট করে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি অরুচি, ওজন হ্রাস, রক্তশূন্যতা, কোষ্ঠ অভ্যাসের আকস্মিক পরিবর্তন থাকলে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।