মাংসপেশির ব্যথা নানা কারণে হতে পারে। কোনো কারণে মাংসপেশির শক্তি কমে গেলে, অতিরিক্ত কাজ বা অতিরিক্ত ট্রেনিং করলে, সহিষ্ণু ক্ষমতা (এনডুরেন্স পাওয়ার) কমে গেলে ব্যথা হয়। আবার কোনো কারণে মাংসপেশিতে খিঁচুনি (মাসল ক্রাম্প) হলে, থেঁতলে (ব্রুইজিং) গেলে, আঘাতে মাংসপেশি সম্পূর্ণ বা আংশিক ছিঁড়ে গেলে অথবা বাতরোগেও মাংসপেশিতে ব্যথা হয়। কিছু অসুখে নির্দিষ্ট কিছু মাংসপেশির নির্দিষ্ট স্থানে ব্যথা হতে পারে, যেমন ফাইব্রোমায়ালজিয়া। বিভিন্ন রকম ট্রমা বা আঘাতের কারণে হাড়ের জোড় ছুটে গেলে (জয়েন্ট ডিসলোকেশন) অথবা হাড়ের জোড় আংশিক ছুটে গেলেও (সাবলাক্সেশন) নির্দিষ্ট মাংসপেশিতে ব্যথা হয়।
মাংসপেশির ব্যথার মেয়াদ অনুযায়ী এবং কারণ অনুযায়ী চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন।
হঠাৎ পায়ের মাংসপেশিতে ব্যথা হলে রোগীরা ঘরেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে পারেন। যেমন ঠান্ডা ও গরম পানিতে পা ডোবানো। পায়ে ব্যথা অনুভব করলে রক্ত চলাচল বাড়ানোর প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে সুফল মিলতে পারে। পায়ে রক্তপ্রবাহ বৃদ্ধি করতে একটি গামলায় ঠান্ডা পানি ও আরেকটি গামলায় গরম পানি নিন। এবার আরামদায়ক চেয়ারে বসে পা দুটিকে ঠান্ডা পানিতে ডুবিয়ে রাখুন এবং পাঁচ মিনিট পর গরম পানিতে পা দুটিকে ডুবিয়ে রাখুন।
মাংসপেশির ব্যথার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য আরেকটি চিকিৎসা পদ্ধতি হলো রাইস।
আর-রেস্ট বা বিশ্রাম: ব্যথার সময় চলাফেরা না করা।
আই-আইচ বা বরফ : ব্যথায় আক্রান্ত স্থানে বরফের টুকরা বা বরফকুচি দিয়ে ৫ থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত ম্যাসাজ করা।
সি-কম্প্রেশন বা চাপ : আক্রান্ত মাংসপেশি কোনো কিছু দিয়ে চাপ দিয়ে বেঁধে রাখা।
ই-এলিভেশন বা উঁচু করে রাখা: আক্রান্ত স্থান হৃৎপিণ্ডের অবস্থানের (হার্ট লেভেল) চেয়ে একটু উঁচুতে রাখা।
এই পদ্ধতি তিন দিন অনুসরণ করার পরও ব্যথা না কমলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
স্ট্রোক বা বিভিন্ন রকম নিউরোলজিক্যাল কারণে নার্ভের সাপ্লাই না পেলে মাংসপেশি অবশ হয়ে দুর্বল হয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে মাংসপেশির শক্তি বাড়ানোর জন্য স্ট্রেন্থেনিং ব্যায়াম, খিঁচুনি হলে বিভিন্ন রকম স্ট্রেচিং ব্যায়াম, মাংসপেশির টেনডন (হাড়ের সঙ্গে মাংসপেশিকে জুড়ে রাখে যে টিস্যু) যদি আংশিক ছিঁড়ে যায়, তবে ফিজিওথেরাপি দরকার হয়।
মাংসপেশির ব্যথার চিকিৎসায় সাধারণত ব্যথানাশক ওষুধ ব্যবহার না করাই ভালো। ব্যথার ওষুধ শুধু সাময়িকভাবে ব্যথা কমাতে পারে, কিন্তু যেসব কারণে মাংসপেশির ব্যথা হয়, তার সমাধান করে না।
লেখা: এম ইয়াছিন আলী, চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমন্ডি, ঢাকা