গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কখনো ভোগেনি, এমন মানুষ দেশে খুঁজে পাওয়া কঠিন। পেট ফাঁপা, পেট চিনচিন করা বা সমস্যার কারণে অনেকে দিনের পর দিন গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ খেতে থাকে, কিন্তু সেরে ওঠার নাম নেই। কিন্তু কেন?
আসলে গ্যাস্ট্রিক বলে চিকিৎসাশাস্ত্রে কিছু নেই। পেটের যেকোনো সমস্যাকেই সাধারণ মানুষ গ্যাস্ট্রিক মনে করে থাকে। তবে পেপটিক আলসার এবং নন–আলসার ডিসপেপসিয়া নামে দুটি সমস্যা আছে, যেগুলোকেও অনেকেই গ্যাস্ট্রিক বলে অভিহিত করে থাকি। এগুলো কেন হয় আর এ থেকে রেহাই কীভাবে পেতে হয়, তা না জানলে কেবল মুড়ি–মুড়কির মতো গ্যাসের ওষুধ খেলে চলবে না। মনে রাখবেন, দীর্ঘ মেয়াদে টানা গ্যাস্ট্রিকের বড়ি খাওয়ার নানা জটিলতা আর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে।
পেপটিক আলসার মানে পাকস্থলীতে বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথম অংশে ঘা বা আলসার। এর কারণ দুটি। একটি হচ্ছে হেলিকোব্যাকটার পাইলোরি (এইচ পাইলোরি) নামের একধরনের ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যটি হচ্ছে এনএসএআইডি–জাতীয় ব্যথানাশক ওষুধ সেবন। যদি পাকস্থলীতে এই বিশেষ জীবাণু হেলিকোব্যাকটার পাইলোরির সংক্রমণ থাকে, তবে সাধারণ গ্যাসের ওষুধে সেটা পুরোপুরি সেরে যাবে না, আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও মিটবে না। এ ক্ষেত্রে ভালো হওয়ার জন্য এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক ও ওষুধ খেতে হবে।
এইচ পাইলোরি সাধারণত ছোটবেলায় পানি ও খাবারের সঙ্গে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। তারপর পাকস্থলী ও এর ঘনিষ্ঠ অংশে প্রদাহ সৃষ্টি করে। কখনো আলসার বা ঘা হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির সারা বছর পেটের নানা সমস্যা, ফাঁপা, ব্যথা, জ্বলা ইত্যাদি উপসর্গ লেগেই থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের দেশে বয়সভেদে শতকরা ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ এইচ পাইলোরি সংক্রমণে আক্রান্ত। তবে আশার কথা হলো, যারা এই ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, তাদের বেশির ভাগেরই পেপটিক আলসার হয় না। এর জন্য অন্য আরও কিছু রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকি আছে।
কীভাবে শনাক্ত করা যায়
কিছু ল্যাবরেটরি পরীক্ষার মাধ্যমে খুব সহজেই এইচ পাইলোরির সংক্রমণ শনাক্ত করা যায়। যেমন: ইউরিয়া ব্রেদ টেস্ট, রক্তের অ্যান্টিবডি টেস্ট (অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি আই জি-জি), স্টুল অ্যান্টিজেন ইত্যাদি। কখনো কখনো এটি শনাক্ত করতে এন্ডোস্কপি পরীক্ষাও করা হয়ে থাকে।
যখন অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি চিকিৎসা দরকার
এইচ পাইলোরির সঙ্গে যদি পেপটিক আলসার অথবা গ্যাস্ট্রাইটিস থাকে, তবে তখন এইচ পাইলোরিনাশক অ্যান্টিবায়োটিক অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। আন্দাজে সারা বছর গ্যাস্ট্রিকের ওষুধ বা অ্যান্টাসিড সেবন করলে লাভ হবে না। এটি কয়েকটি সমন্বিত অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদি কোর্সের মাধ্যমে সেবন করতে হয়।
তা ছাড়া অ্যাট্রোপিক গ্যাস্ট্রাইটিস, মাল্ট লিম্ফোমা ও গ্যাস্ট্রিক ক্যানসারের অস্ত্রোপচারের পর অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। যাদের খুব নিকটজনের গ্যাস্ট্রিক ক্যানসার হয়েছে, তাদের যদি এইচ পাইলোরি থাকে, তখন আলসার না থাকলেও অ্যান্টি–এইচ পাইলোরি চিকিৎসা নিতে হবে।
জটিলতা
এইচ পাইলোরি সংক্রমণের যথাযথ চিকিৎসা না নিলে এ থেকে পেপটিক আলসার, অ্যাট্রোপিক গ্যাস্ট্রাইটিস, মাল্ট লিম্ফেমা ও গ্যাস্ট্রিক (পাকস্থলীর) ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে।
প্রতিরোধের উপায়
এইচ পাইলোরি ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ বন্ধ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। তবে ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা এবং খাবার ও পানীয় গ্রহণে সাবধানতা অবলম্বন করলে অনেক সময় সুফল পাওয়া যেতে পারে।