সুস্বাদু রান্নার জন্য নানা রকম মসলার কোনো বিকল্প নেই। এই মসলা কখনো বেটে, কখনো এর গুঁড়া ব্যবহার করা হয়। তবে আমাদের দেশে গোটা বা কাঁচা মসলা দিয়ে রান্নার প্রচলন কম।
মসলা শুধু রান্নার স্বাদই বাড়ায় না, মসলার রয়েছে অনেক স্বাস্থ্যগত উপকারিতা। পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ, এলাচি, লবঙ্গ, দারুচিনি, তেজপাতা, মেথি, কালিজিরা, শর্ষে, হিং, সাদা তিল—এ রকম প্রতিটি মসলা ঠিক ওষুধের মতোই কাজ করে। মসলার ঔষধি গুণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে দেহের সব কোষকে সুরক্ষা দেয়। যেকোনো রোগের সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে মসলার ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
তবে বর্তমানে কোনো কোনো অসাধু ব্যবসায়ী গুঁড়া মসলায় কাপড়ে ব্যবহৃত বিষাক্ত রং, কাঠ ও ইটের গুঁড়া, ধানের তুষ, আরগেমেন বীজ, সিসা বা লেড ক্রোমেট, ক্যাসিয়ার বার্ক, নিষিদ্ধ ম্যালাকাইট গ্রিন ইত্যাদি মেশায়। এই বিষাক্ত পদার্থগুলো কিডনি, লিভারের বিভিন্ন রোগসহ সব ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেক বাড়ায়। তাই বাজার থেকে কেনা গুঁড়া মসলার পরিবর্তে ঘরে বেটে নেওয়া তাজা মসলা অধিক স্বাস্থ্যকর। এ ছাড়া হলুদ, আদা, রসুন, পেঁয়াজ কিন্তু চাইলেই গোটা ব্যবহার করা যায়।
তাজা বাটা বা গোটা মসলা ব্যবহারে রান্নায় চমৎকার ঘ্রাণ আসে। তাজা বাটা মসলায় কিছু পরিমাণ তেল থাকায় রান্নায় স্বাদের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। মসলার এই প্রাকৃতিক তেল বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকালে নষ্ট হয়ে যায়।
অনেক সময় আমরা লবঙ্গ বা গোলমরিচ গুঁড়া করে অনেক দিন ব্যবহার করি। এতে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান ইউজেনল ও ক্যারিওফিলিন নষ্ট হয়। এ ক্ষেত্রে একটু ছেঁচে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবহার করা ভালো।
আবার রসুনের ক্ষেত্রে কুচি করে তাৎক্ষণিক ব্যবহার করা হলে অ্যালাইনেজ নামক এনজাইম নিঃসৃত হয়ে উপকারী অরগানো সালফার অ্যালিসিন তৈরি করে। এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অ্যালিসিনের উপকারিতা পাওয়া যায়। কিন্তু যখন রসুন বাটা হয় এবং লম্বা সময় ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হয়, তখন ঠান্ডা তাপমাত্রা ও বাতাসের সংস্পর্শে অ্যালিসিনের পরিমাণ অনেকাংশে কমে যায়। এ ছাড়া বর্তমানে রান্নায় বহুল ব্যবহৃত হয় গার্লিক পাউডার (রসুনের গুঁড়া)। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, স্বাদ বাড়ালেও বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত হওয়ায় অ্যালিসিনের কার্যকারিতা অনেকটাই নষ্ট হয়ে যায়।
আদা বাটার ফলেও কিছু উপকারী উপাদান হারিয়ে যায়। বাটা আদা অপেক্ষা মিহি কুচি করা আদা রান্নায় ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যায়। বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুত শুকনো আদার ক্ষেত্রেও জিঞ্জারলের উপকারিতা কমে যায়।
আমাদের দেশীয় রান্নায় সাধারণত হলুদের গুঁড়া ব্যবহৃত হয়। তবে ফ্রেশ হলুদ বেটে রান্নায় ব্যবহার করলে স্বাদ বেশি আসে ও কারকিউমিনের সম্পূর্ণ উপকারিতা পাওয়া যায়। পেঁয়াজ বাটার ফলে কিছু সালফার যৌগ নষ্ট হয়।
মসলা ব্যবহারের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, বাটা ও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণের ফলে যাতে মসলার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাতাসের সংস্পর্শে জারিত হয়ে হারিয়ে না যায়। আর বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত গুঁড়া মসলার ক্ষেত্রে উপকারী উপাদানগুলোর ৬০ শতাংশ আমরা পাই। বাকি ৪০ শতাংশ প্রস্তুতকালে হারিয়ে যায়।
ফাহমিদা হাসেম, জ্যেষ্ঠ পুষ্টিবিদ, ল্যাবএইড কার্ডিয়াক হাসপাতাল