আজ থেকে ডায়েট শুরু করবেন যেভাবে
এই বিয়ের দাওয়াতটা খেয়েই ডায়েট শুরু করব। শুক্রবারের কাচ্চিই শেষ, এরপর ভুলেও আর গরু-খাসি খাব না। এমন পণ আমরা রোজ নিজের সঙ্গে নিজে করি। আর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই ‘চিকেন ফ্রাই’ খেতে খেতে নতুন ডায়েটের তারিখ ঠিক করি। তবে এভাবে প্রতিজ্ঞা রাখা কঠিন। প্রতিজ্ঞাটা আজই পালন করা শুরু করতে হবে। কালকের জন্য ফেলে রাখা চলবে না।
ডায়েট শুরু করার জন্য নতুন বছর একটা ভালো উপলক্ষ। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়া যতটা সহজ, বাস্তবায়ন করা ততটাই কঠিন। কিছু ভুল পদ্ধতির কারণে অনেকে তাঁদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন না। অনেকে খাদ্যতালিকা পরিবর্তন করার সময় বাড়াবাড়ি রকমের পরিবর্তন করে ফেলেন। যেগুলো দু–এক দিন মেনে চলা যায়, কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে মেনে চলা কঠিন। যে কারণে অধিকাংশ লোকজনই কিছুদিনের মধ্যেই লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যান। তাই লক্ষ্যগুলো এমনভাবে নির্ধারণ করতে হবে যেন পূরণ করা সহজ হয়। কীভাবে লক্ষ্য ঠিক করবেন? জেনে নিন—
লক্ষ্য থাকুক অটুট
আমরা অনেক ক্ষেত্রে অনেক অযৌক্তিক লক্ষ্য নির্ধারণ করি। পরিণতিতে ব্যর্থ হই। যেমন কেউ যদি লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, আমি নতুন বছর থেকে প্রচুর শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া শুরু করব, সেটা ভুল হবে। বরং তাঁকে ঠিক করতে হবে, নতুন বছর থেকে আমি দিনে দুই বেলা অবশ্যই শাকসবজি খাব। ফলে লক্ষ্য অনেক সুনির্দিষ্ট হবে। আর তা পূরণ করতেও সুবিধা হবে।
লিখে রাখুন
কী করতে চান, লিখে ফেলুন। প্রথমেই কী পরিবর্তন চাই, সেগুলো অবশ্যই লিখিত আকারে থাকতে হবে। এরপর শুরুতে প্রতিদিন একবার করে হলেও সেগুলো পড়ার অভ্যাস করলে লক্ষ্যে স্থির থাকা সহজ হবে। এবার ঠিক করুন আপনার টার্গেট কী? ওজন কমানো, রোগ সারানো নাকি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। এবার তালিকা করুন, এগুলোর জন্য কী কী অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। সেই সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য পূরণের জন্য সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কত সময় লাগবে, সেটি নির্ধারিত থাকতে হবে। লক্ষ্য পরিমাপযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ আমি কতটুকু লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছি বা পারব, সেটা যাচাইয়ের জন্য অবশ্যই একটি পরিমাপক থাকবে। এটি চিহ্নিত করে রাখতে হবে।
ডায়েট কেন করবেন
ডায়েট আপনি কেন করতে চাইছেন, সেটা সঠিকভাবে জানা থাকা চাই। হুজুগে বা ঝোঁকের বশে যদি কেউ ওজন কমানোর মিশনে নামেন, তাহলে সেটা পূর্ণ করা কঠিন হবে। তাই নিজেকে যাচাই করুন, ডায়েট কি আপনি কারও কটু কথা শুনে করতে যাচ্ছেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে নাকি একান্তই নিজ উদ্যোগে ভালো থাকার কথা ভেবে? নিজের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে যদি লক্ষ্য নির্ধারণ করেন, তাহলে অবশ্যই আপনি সঠিক রাস্তায় আছেন। কিন্তু লোকের কথায় বশীভূত হয়ে যদি লক্ষ্য নির্ধারণ করে থাকেন, তাহলেই বিপদ। আপনার জন্য দুঃসংবাদ, আপনি কখনোই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। সে জন্য অবশ্যই নিজে প্রয়োজন অনুভব করলেই লক্ষ্য নির্বাচন করুন।
সু–অভ্যাসে সুস্থতা
ওজন কমাতে, সুস্থ জীবন যাপন করতে বা রোগমুক্ত থাকতে চাইলে সঠিক খাদ্যাভ্যাসের বিকল্প নেই। আর সে কারণেই আপনি যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন, সেখানে পৌঁছাতে হলে অবশ্যই আপনাকে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। একবারে তো আর অভ্যাস পরিবর্তন করা যাবে না। অল্প অল্প করে পরিবর্তনের চেষ্টা করতে হবে। নিজের যে পরিবর্তনগুলো এক এক করে শুরু করতে পারেন—
ওজন কমাতে হলে প্রথমে বাইরের সব ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার ও চিনিজাতীয় খাবার বর্জন করুন। শুরুতে কষ্ট হবে, মনের সঙ্গে এই যুদ্ধে আপনাকে জিততেই হবে। যে অভ্যাস এত বছর ধরে গড়ে তুলেছেন, সেই অভ্যাস কাটাতে তাই এক দিন নয়, দুই থেকে তিন সপ্তাহের টার্গেট নিন। এই সময়ে বাইরে গেলে ভাজাপোড়া বা ফাস্ট ফুড–জাতীয় খাবারের পরিবর্তে সস, কেচাপ ও ড্রেসিং–বিহীন সালাদ, ফ্রেশ ফলের জুস খেতে পারেন। সঙ্গে রাখুন শুকনা বা তাজা ফলমূল। যখনই কোনো অস্বাস্থ্যকর খাবার দেখে খেতে ইচ্ছা করবে বা বেশি খিদে পাবে, ব্যাগ থেকে বের করে মুখে দিন ফলমূল।
অনেকেই সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন। ফলে অফিস বা ক্লাসে দেরি হওয়ার ভয়ে সকালের নাশতা এড়িয়ে যান। রাতে বাসায় ফিরে খেয়ে ফেলেন বেশি। এই দুটোই বদভ্যাসের মধ্যে পড়বে। সকালে না খাওয়া আর রাতে বেশি খাওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। এ অভ্যাস পরিবর্তনের জন্য লক্ষ্য স্থির করুন। সে জন্য শুরুতে ভোরে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস করুন। রাতের মতো সকালের নাশতার টেবিলে সবাই একসঙ্গে বসার অভ্যাস করতে পরেন। একইভাবে রাতে বেশি খেয়ে ফেলা কোনো কাজের কথা নয়। কী খাচ্ছেন, বুঝে খান।
তিন বেলা নয়, ছয় বেলা
সারা দিনের কোনো বেলাতেই খাবার একবারের বেশি খাওয়া যাবে না। তিন বেলার খাবার পাঁচ থেকে ছয়টি ভাগে ভাগ করে খাওয়া ভালো। ব্যস্ততার কারণে যেটা আমাদের অনেকেই করতে পারি না। ওজন কমানো, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন কিংবা রোগমুক্ত থাকতে এ নিয়ম দারুণ টনিক হিসেবে কাজ করে। প্রথম লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করার পরই এ লক্ষ্যকে টার্গেট করুন। এ অভ্যাস গড়ে তুলতে চাইলে অবশ্যই পচনশীল নয় ও সঠিক খাদ্যগুণ বজায় থাকে, এমন কিছু খাবার নিজের সঙ্গে বহন করতে হবে। সকাল ও দুপুরের মধ্যবর্তী সময়, দুপুর ও বিকেলের মধ্যবর্তী সময় হালকাপাতলা স্বাস্থ্যকর নাশতা করতে হবে। কারণ, দীর্ঘ সময় টানা না খেয়ে থাকলে বেশি শক্তি অপচয় হয় ও পরের বেলা বেশি খাবার খাওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়।
আরও যা করতে হবে
অল্প দূরত্বের রাস্তা হেঁটে যেতে চেষ্টা করুন। প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। একবারে এ অভ্যাস গড়ে তোলা কঠিন। সে জন্য প্রথম ১ সপ্তাহে ১০ মিনিট, তারপর ১ সপ্তাহ ১৫ মিনিট, এভাবে অভ্যাস আয়ত্ত করে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
বাইরে বের হলে সামান্য গলা শুকিয়ে গেলেই কোমল পানীয়র বদলে সঙ্গে রাখা লেবুপানি, জিরাপানি বা বিভিন্ন ফ্রেশ ফলের জুস পান করতে পারেন। আর পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস গড়ে তুলুন। তৃষ্ণা না পেলেও কিছু সময় পরপর পানি পান করুন, এতে উপকার পাবেন।
অনেকেই কোনো ডিভাইস দেখতে দেখতে বা শুনতে শুনতে খাবার গ্রহণ করতে পছন্দ করেন। বেশির ভাগ শিশু–কিশোরের মধ্যে এ–জাতীয় সমস্যা দেখা যায়। এতে করে অজান্তেই অল্প সময়ে বেশি খাবার খাওয়া হয়ে যায়। এ অভ্যাসও পরিবর্তন করতে হবে। সে জন্য প্রয়োজন পরিবারের সহয়তা। পরিবারের সবাই মিলে একত্রে টেবিলে বসে খাবার গ্রহণ করলে ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন হওয়া শুরু করবে। খাদ্য চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাসটিও গড়ে উঠবে। সময় নিয়ে অভ্যাসটি গড়ে তোলার জন্য হাতের পরিবর্তে চামচ দিয়ে খাওয়া অভ্যাস করতে পারেন। এতে ইচ্ছা থাকলেও কম খাওয়া হবে। অভ্যাসগুলো রপ্ত করতে সময় বেশি লাগলেও ফল ভালো হবে নিশ্চিত।