অস্ত্রোপচারের আগমুহূর্তের আতঙ্ক ও সমাধান

পৃথিবীতে অনেক সৌভাগ্যবান মানুষ আছেন, যাঁদের কোনো দিন কোনো অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়নি। কিন্তু এ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাঁদের যেতে হয়েছে, তাঁদের অধিকাংশেরই মূল ভয়ের জায়গা ছিল প্রি-অপারেটিভ রুম (অস্ত্রোপচারের আগমুহূর্তে যে কক্ষে রোগীকে রাখা হয়)। ভয় বা আতঙ্কের উৎস হলো অজ্ঞানতা। তাই প্রি-অপারেটিভ রুম সম্পর্কে ভালোভাবে জানা থাকলে সহজেই এ আতঙ্ক কাটানো যায়।

প্রি-অপারেটিভ রুম কী
সাধারণত অস্ত্রোপচারের রোগীরা হাসপাতালের কেবিন বা ওয়ার্ডে ভর্তি থাকেন। সেখান থেকে অস্ত্রোপচারকক্ষে যাওয়ার আগে একটা নির্দিষ্ট রুমে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। এ ঘরই প্রি-অপারেটিভ রুম। সব অস্ত্রোপচারেরই নির্দিষ্ট সময় থাকে। সে সময়ের আধা ঘণ্টা আগে রোগীকে প্রি-অপারেটিভ রুমে নিয়ে আসা হয়। এরপর ওটি (অপারেশন থিয়েটার বা অস্ত্রোপচারকক্ষ) খালি থাকা সাপেক্ষে এখানে অবস্থান করে অপেক্ষা করতে হয়।

এখানে কী কী করা হয়
উন্নত মানের প্রি-অপারেটিভ রুমে রোগীদের ভাইটাল সাইন মনিটরিংয়ের সব ব্যবস্থা থাকে। অর্থাৎ হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, অক্সিজেন স্যাচুরেশন ইত্যাদি সেখানে দেখা হয়। রোগীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রাও দেখা হয়। এসবের মধ্যে কোনো অসংগতি পেলে সে অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

ফাইল ছবি: রয়টার্স

প্রি-অপারেটিভ রুমে অস্ত্রোপচারের আগে আপনার আবেদনকারী বা অ্যানেসথেটিস্ট এসে রোগীর সঙ্গে দেখা করবেন এবং সব রিপোর্ট চেক করে যাবেন। এ সময় কোনো সমস্যা বোধ করলে তা আপনার অ্যানেসথেটিস্টকে অবহিত করতে পারেন।
এরপর কর্তব্যরত নার্স চেকলিস্ট দেখে পরীক্ষা করে দেখবেন অপারেশনের নাম, স্থান—এগুলো ঠিক আছে কি না। এরপর শরীরে কোনো ধাতব গয়না বা তাবিজ-কবচ আছে কি না, তা দেখবেন। থাকলে সেটা খুলে রাখতে বলবেন। তা না হলে অস্ত্রোপচারের সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে আঘাত পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এ ছাড়া রোগীদের ওটিতে যাওয়ার আগে প্রস্রাব করিয়ে নেওয়া হয়।

প্রি-অপারেটিভ রুমের সমস্যা ও সমাধান
প্রি-অপারেটিভ রুমের পরীক্ষায় অনেক সময় কিছু অসংগতি ধরা পড়তে পারে, যাতে অস্ত্রোপচার ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচিত হলে এর সময় পিছিয়ে দেওয়া হতে পারে। যেমন রক্তচাপ বা রক্তে চিনির পরিমাণ বেড়ে বা কমে যাওয়া। অনেক সময় রোগী আতঙ্কে শকে চলে যেতে পারেন। এসব ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের নতুন সময় নির্ধারণ করা হয়।
অনেক সময় দুর্ঘটনার রোগী একই প্রি-অপারেটিভ রুমে অবস্থান করতে পারেন। তাঁদের দেখেও অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আবার অস্ত্রোপচারের নির্ধারিত সময়ে তা শুরু না হলেও অনেক রোগী উত্তেজিত হয়ে যান।

প্রতীকী ছবি

এ সময় উত্তেজিত হলে আপনার ক্ষতির আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই অযথা রেগে না গিয়ে ধ্যান করতে পারেন, ভালো কোনো স্মৃতি রোমন্থন করতে পারেন কিংবা সহযোগী রোগীর সঙ্গে হালকা চালে কথাবার্তা বলতে পারেন।

নিজে অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যাওয়া সাহসিকতার কাজ। এটা পরবর্তীকালে রোগীর আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করবে। অনেক রোগীই অস্ত্রোপচারের পর বলে থাকেন, ‘আরে আমি এত বড় অপারেশন করে ফেলেছি, এখন আর কোনো কিছুতেই আমার ভয় লাগে না।’

তাই প্রি-অপারেটিভ রুমকে সহজভাবে নিন। তাহলে আপনার অস্ত্রোপচারও কম ঝুঁকিপূর্ণ হবে।

  • ডা. রেজা আহমদ

    কনসালট্যান্ট সার্জন, ইবনে সিনা হাসপাতাল, সুবহানীঘাট, সিলেট।