৮ বছরে তার পেছনে ৭ লাখ টাকা ঢাললাম, এখন বলছে বিয়ে করবে না
পাঠকের প্রশ্ন বিভাগে আইনগত সমস্যা নিয়ে নানা রকমের প্রশ্ন পাঠিয়েছেন পাঠকেরা। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মিতি সানজানা নির্বাচিত প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন এবার।
প্রশ্ন: পড়াশোনা শেষ করার পর আমি এখন চাকরিজীবী। আমার সঙ্গে একটি মেয়ের আট বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক। শুরু থেকে আমি তাকে প্রয়োজনীয় খরচ দিয়ে আসছি। তখন তার পরিবার আমার সঙ্গে মেয়েটির বিয়ের ব্যাপারে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিল। সে জন্য আমি তার ভরণপোষণ চালিয়ে এসেছি। তার পড়ালেখার খরচও আমি চালাই। তাকে আমি স্বর্ণের চেইন, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে সে যা চেয়েছে—সব দিয়েছি। সম্প্রতি সে ডিগ্রি পাস করেছে। তার ফ্যামিলি আমাদের বিয়েতে রাজি ছিল। কিন্তু দিন দশেক আগে তার পরিবার থেকে আমাকে দাওয়াত দেওয়া হয়। আমি যাওয়ার পর প্রেমিকার মা বলছেন, তাঁর আরেক জামাই নাকি আমাদের বিয়েতে রাজি নন। যে কারণে তাঁরা আমার সঙ্গে মেয়ে বিয়ে দিতে পারবেন না। এই আট বছরে আমি তার পেছনে প্রায় সাত লাখ টাকা ঢাললাম, এখন বলছে বিয়ে করবে না।
এদিনের পর থেকে আমার সঙ্গে তাঁদের পরিবার যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন। মেয়েও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করে না। আমার সঙ্গে এমন প্রতারণার জন্য আমি কী কী আইনি পদক্ষেপ নিতে পারি, সেটা আমার খুব জানা প্রয়োজন। দয়া করে পরামর্শ দেবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: আপনার তথ্যমতে, আট বছরে আপনি প্রায় সাত লাখ টাকা তাঁর পেছনে ব্যয় করেছেন। এখন মেয়েটির পরিবার নানা অজুহাতে আপনার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দিচ্ছে। আপনি তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাচ্ছেন।
আইনে প্রেমের প্রতারণাবিষয়ক প্রত্যক্ষ কোনো ধারা বা অনুচ্ছেদ নেই। আপনি জানিয়েছেন, বিভিন্ন সময় ভালোবেসে তাঁকে উপহার দিতেন। প্রেম–ভালোবাসার ক্ষেত্রে উপহার আদান–প্রদান খুব স্বাভাবিক। ভালোবাসার স্বীকৃতিস্বরূপ কোনো উপহার দেওয়া–নেওয়া হলে সে বিষয়ে আইনে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
প্রেম বা বিয়ে যেকোনো ক্ষেত্রে ভাঙন আসতে পারে। তবে সম্মানজনকভাবে সেটি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা দুই পক্ষের করা উচিত। আইনগত সংজ্ঞা অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কাউকে ফাঁকি দিয়ে প্রতারণামূলকভাবে বা অসাধু উপায়ে কোনো ব্যক্তির কাছে কোনো অর্থসম্পত্তি প্রদানে প্ররোচিত করেন, তাহলে তা হবে প্রতারণা। কেউ যদি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ব্যক্তিকে এমন কোনো কাজ করতে বা করা থেকে বিরত থাকতে প্ররোচিত করেন, যার ফলে ওই ব্যক্তির শরীর, মন বা সম্পত্তির ক্ষতির আশঙ্কা থাকে; তাহলে সেটি প্রতারণা হবে।
দণ্ডবিধির ৪১৫ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি যদি অসৎ উদ্দেশ্যে কারও ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁর কাছ থেকে কোনো কিছু আদায় করেন, সেটা ওই ব্যক্তির সম্মতি সাপেক্ষে হলেও প্রতারণা হবে। এ অপরাধের জন্য এক বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানার বিধান রয়েছে। কাজেই আপনার প্রেমিকা যদি আপনার সঙ্গে অর্থ বা সম্পদের জন্য প্রেম করেন এবং আপনার বিশ্বাস অর্জন করেন, তারপর আপনার অর্থ বা সম্পদ হাতিয়ে নেন বা অন্য কোনো ক্ষতি করেন; তবে তার জন্য আইনি প্রতিকার রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে আপনাকে প্রমাণ করতে হবে যে মেয়েটি ও তাঁর পরিবার অর্থ আত্মসাৎ ও প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই আপনার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। আশা করি, আপনার উত্তর পেয়েছেন।
পাঠকের প্রশ্ন, বিশেষজ্ঞের উত্তর
পাঠকের প্রশ্ন পাঠানো যাবে ই–মেইলে, ডাকে এবং প্র অধুনার ফেসবুক পেজের ইনবক্সে।
ই–মেইল ঠিকানা: [email protected] (সাবজেক্ট হিসেবে লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’)
ডাক ঠিকানা
প্র অধুনা, প্রথম আলো, প্রগতি ইনস্যুরেন্স ভবন, ২০–২১ কারওয়ান বাজার, ঢাকা ১২১৫।
(খামের ওপর লিখুন ‘পাঠকের প্রশ্ন’) ফেসবুক পেজ: fb.com/Adhuna.PA