যমজ সন্তানের যত্ন নিন এভাবে
দুটি শিশু হয়তো একই সঙ্গে কেঁদে উঠল। হতে পারে তাদের কান্নার কারণ খিদে কিংবা ভেজা ন্যাপি। তাদের শান্ত করতে মায়ের মন তো অস্থির হয়ে উঠবেই। কিন্তু সব সময় দুই সন্তানের সব প্রয়োজন মা একলা মেটাতে পারবেন না। তাই মা ভরসা করতে পারেন এমন কাউকে পাশে থাকা চাই। দুটি শিশু হয়তো একই সঙ্গে আদর চাইছে, তখন মায়ের মতোই ভালোবাসার স্পর্শ দেওয়ার মতো নির্ভরযোগ্য আরেক জোড়া হাত কিন্তু থাকতে হবে। আবার একটি শিশু হয়তো ক্ষুধায় কাঁদছে, অন্যজনের আবার তক্ষুনি ন্যাপিটা বদলে দেওয়া জরুরি। একলা মা কোন দিকে যাবেন বলুন তো? অথচ মাকে একটু সহযোগিতা করলে একই সঙ্গে দুটি সন্তানকে লালন–পালন করার দ্বিগুণ দায়িত্বটাও সহজ হয়ে উঠবে। যমজ সন্তানের যত্নআত্তির বিস্তারিত জানালেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট তাসনুভা খান।
পুষ্টি পাবে তো
যে মায়ের গর্ভে দুটি সন্তান বেড়ে উঠেছে, তারা যাতে পর্যাপ্ত দুধ পায়, স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই তা নিশ্চিত করে তাঁর দেহ। শারীরবৃত্তীয় এই নিয়মকানুন একেবারেই প্রাকৃতিক। মায়ের আত্মবিশ্বাসটা কেবল জরুরি। শিশুদের পুষ্টি নিয়ে মাকে নেতিবাচক কথা বলা যাবে না, তাঁকে শঙ্কিত করে তোলা যাবে না। যমজ সন্তানের বাড়তি চাহিদা মেটাতে কিন্তু মায়ের দুধ বাড়ানোর কোনো ওষুধেরও প্রয়োজন হয় না। কেবল খেয়াল রাখতে হবে মায়ের পুষ্টির দিক। দুটি সন্তানের পুষ্টি জোগাচ্ছেন তিনি, তাই তাঁর খাওয়াদাওয়া হতে হবে ঠিকঠাক। আর মাকে অবশ্যই প্রচুর পানি ও তরল খাবার খেতে হবে।
দুধ খাওয়ানোর সময়
দুই শিশুকে একই সঙ্গে দুধ খাওয়াতে কিন্তু কোনো বাধা নেই। নিজের দুই হাতের নিচে দুটি বালিশ দিয়ে একই সঙ্গে দুই সন্তানকে দুধ খাওয়াতে পারেন মা। তবে মা এ কাজটি একলা পারলেও কাছে থাকুন আপনজন, যাতে প্রয়োজন হলেই হাতটা বাড়িয়ে দেওয়া যায়। বিশেষত নতুন মা এবং অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের জন্ম দেওয়া মায়েদের দিকে বাড়তি খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। সব সময়ই যে দুই শিশুর একই সঙ্গে ক্ষুধা লাগবে, তা-ও না। তাই একটি বিষয় জেনে রাখা প্রয়োজন। স্বাভাবিকভাবেই সব মায়ের দুধের প্রবাহটা এমন হয় যে প্রথমে প্রবাহিত দুধে জলীয় অংশ বেশি থাকে, এরপর আসে ক্যালরিসমৃদ্ধ দুধ। তাই একটি স্তন থেকে একটি শিশুকে দুধ খাওয়ানোর পর অপর শিশুকে অপর স্তন থেকে দুধ খাওয়ানো ভালো। না হলে যে শিশুটি পরে খাবে, সে কিন্তু প্রয়োজনীয় জলীয় অংশটি থেকে বঞ্চিত হবে।
যত্নআত্তি
দুটি শিশুর যত্নআত্তি ও ঘুম একই সঙ্গে হলে মা একটু বিশ্রাম পাবেন। নিজের জন্য একটু সময় পাবেন। তা না হলে একজনের পর অন্যজনের যত্নআত্তি করতে করতে হাঁপিয়ে উঠবেন মা। ঘুম পাড়ানো থেকে শুরু করে সবকিছুতেই মাকে সাহায্য করার জন্য কাউকে প্রয়োজন হবে। গোসলের সময় একটি বড় পাত্রে পানি নিয়ে একই সঙ্গে দুজনকে গোসল করিয়ে দিতে হবে। রোদে নিয়ে যাওয়ার সময়ও তাই। এভাবে আপনজনের সহযোগিতায় একটা নিয়মের মধ্যে দুই সন্তানের যত্নআত্তি করতে হবে। তাহলে তাদের একই সময়ে খাওয়াদাওয়া, গোসল, পড়ালেখা, খেলাধুলা ও ঘুমের অভ্যাস গড়ে উঠবে। কোনো বয়সেই তাদের দেখভাল করাটা খুব কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে না।
নিত্যদিনের ব্যবহার্য
দুটি শিশুর জন্য জামাকাপড়, ন্যাপি, ফিডার, ঝুনঝুনি বা অন্য খেলনা কিংবা অন্যান্য অনুষঙ্গ রাখুন আলাদা। দুজনের জন্য দুটি রং নির্দিষ্ট করে ফেলতে পারেন। তাহলে আলাদা রাখার কাজটা সহজ হবে। তবে একটু বড় হলে, অর্থাৎ শিশুরা বুঝতে শেখার পর অবশ্য আর খেলনা আলাদা করার প্রয়োজন হয় না।
অসুস্থতায় আলাদা রাখবেন?
ভাইরাসজনিত বিভিন্ন রোগ একটি শিশু থেকে অন্য শিশুর মধ্যে দ্রুত ছড়ায়। তবে একই সঙ্গে বেড়ে উঠতে থাকা শিশুদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অন্যজনকে তার থেকে আলাদা করে তেমন লাভ হয় না। কারণ, উপসর্গ দেখা দেওয়ার আগেই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে। উপসর্গ দেখা দেওয়ার পর তাই আর তাদের আলাদা করার পেছনে কোনো বৈজ্ঞানিক যুক্তি নেই। বরং একসঙ্গে থাকলেই মানসিক দিক থেকে তাদের জন্য ভালো।