যে ৮টি খাবারের অংশ কখনোই আবর্জনা হিসেবে ফেলে দেবেন না

রোজ হরেক পদের ফল বা শাকসবজি খাই আমরা। আর এসব রান্না বা খাওয়ার আগে–পরে কিছু অংশ ফেলে দিই আবর্জনা হিসেবে। ফলে আমাদের অজান্তেই ডাস্টবিনে চলে যায় বেশ কিছু মূল্যবান পুষ্টির উপাদান। এসব অংশ আবর্জনা হিসেবে ফেলে না দিয়ে খাবার বা অন্য প্রয়োজনে ব্যবহার করা যায় অনায়াসে। বাজারে দাম চড়া বলে খাবারের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করা এখন বুদ্ধিমানের কাজ। জেনে রাখুন, শাকসবজি ও ফলমূলের কোন কোন ফেলনা অংশ কীভাবে কাজে লাগাবেন...

গাজরের সবুজ কাণ্ড

গাজর
ছবি: পেক্সেলস

গাজরের লম্বা সবুজ কাণ্ডে থাকে কিছু দরকারি প্রোটিন ও ভিটামিন। স্বাদে কিছুটা তেতো হলেও এটি শরীরের জন্য বেশ উপকারী। তাই এ অংশ ফেলে না দিয়ে সালাদে সহজে ব্যবহার করা যেতে পারে।

পেঁয়াজের খোসা

পেঁয়াজ
ছবি: প্রথম আলো

পেঁয়াজ কাটার সময় আমরা এর পাতলা আবরণ ছাড়িয়ে নিই। কিন্তু পেঁয়াজের এই পাতলা আবরণ কিছু বিশেষ পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। পেঁয়াজের খোসায় আছে কোয়ারসেটিন, যা একটি ফ্ল্যাভনয়েড পলিফেনন ধরনের উপাদান। এটি আমাদের শরীরে প্রদাহ ও রক্তচাপ কমায়, ধমনিতে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দিয়ে রক্তপ্রবাহ নির্বিঘ্ন রাখে এবং হৃৎপিণ্ড সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

মাশরুমের কাণ্ড

মাশরুম
ছবি: প্রথম আলো

আমরা শুধু মাশরুমের মাথার চওড়া গোলাকার অংশটি খাই এবং নিচের সাদা লম্বা অংশ ফেলে দিই। অথচ এই অংশও বেশ পুষ্টিকর এবং এটি খাবার হিসেবে নিরাপদ। এটি সালাদ হিসেবে, সবজির সঙ্গে, স্যান্ডউইচের পেস্ট হিসেবে খাওয়া যায়।

লেবুর খোসা

লেবু
ছবি: সংগৃহীত

টাটকা লেবু কেটে ভেতর থেকে রস চিপে নিই আমরা। কিন্তু খোসাটা কী করি? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লেবুর খোসা আমরা ফেলে দিই ডাস্টবিনে। কিন্তু এতে আছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পুষ্টির উপাদান যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, নিয়াসিন, থায়ামিনসহ আরও কিছু খনিজ পদার্থ। তাই লেবুর খোসা ফেলে না দিয়ে কাজে লাগান। কাজে লাগাতে পারেন বাসনকোসন মাজতে। বিশেষ করে তৈজস বা চিনামাটির বাসনকোসন বেশ চকচকে হয়, সুগন্ধিও মেলে। শরবত কিংবা স্যুপে লেবুর খোসা দিলে আলাদা সুগন্ধি পাবেন।

ভুট্টার মজ্জা

ভুট্টার মজ্জা স্যুপ হিসেবে খেতে পারেন
ছবি: প্রথম আলো

ভুট্টার দানাগুলো খেয়ে আমরা এর শক্ত মজ্জাটি ফেলে দিই। কিন্তু শক্ত মজ্জাটি গরম পানিতে সেদ্ধ করে স্যুপ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। এটি মূত্রথলি ও প্রস্টেট গ্রন্থির প্রদাহ দূর করে, কিডনিতে পাথর জমতে দেয় না।

কলার খোসা

কলা
ছবি: পেক্সেলস

কলার জনপ্রিয়তা দুনিয়াজোড়া। কিন্তু আমরা প্রায় সবাই কলার ভেতরের সাদা নরম অংশটি খেয়ে খোসা ফেলে দিতে অভ্যস্ত। কলার এই খোসার কয়েকটি বিশেষ গুণ আছে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ট্রিপটোফ্যান, যা আমাদের শরীরে সেরোটনিনের পরিমাণ বাড়ায় (সেরোটনিন হলো মস্তিষ্কের স্নায়ু সংযোগকারী একটি নিউরোট্রান্সমিটার)। প্রশ্ন হলো, কলার খোসা কি খাওয়ার জিনিস? হ্যাঁ, পাকা কলার খোসাও রান্না করে খাওয়া যায়। গরম পানিতে ১০ মিনিটের বেশি সেদ্ধ করে খোসা নরম করে নিন। এরপর তা কোনো মিল্কশেক বা স্যুপে মিশিয়ে খেয়ে নিন।

তরমুজের সবুজ অংশ

তরমুজ
ছবি: প্রথম আলো

শরীরে পানির অভাব দূর করতে তরমুজ দারুণ উপকারী। নানা রকম শরবত বানিয়ে তরমুজ খাওয়া হয়। তবে আমরা সাধারণত তরমুজের ভেতরের লাল নরম অংশটি খাই এবং বাইরের শক্ত সবুজ আবরণ ফেলে দিই। কিন্তু এই আবরণ বেশ উপকারী। সবুজ আবরণের ভেতরের দিকের সাদা অংশটি কেটে রান্না করে খাওয়া যায়। অংশটিতে আছে অ্যামিনো অ্যাসিড এবং সাইট্রোলিন, যা পরে মানবদেহে বিপাকক্রিয়ার ফলে আরজিনিনে রূপান্তরিত হয়। এটি আমাদের শরীরে রক্তের প্রবাহ ঠিক রাখে।

আনারসের মজ্জা

আনারস
ছবি: সংগৃহীত

আনারসের নরম হলুদাভ অংশটি খেয়ে বেশির ভাগ সময় আমরা ভেতরের মজ্জাটি ফেলে দিই। কিন্তু আনারসের এই মজ্জায় থাকে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এ ছাড়া ব্রোমেলেন নামক এক ধরনের এনজাইমও থাকে, যা নাক ও সাইনাসের প্রদাহ কমায় এবং মাংসপেশির ব্যথা দূর করে। আর্থ্রাইটিস প্রতিরোধেও এটি কার্যকর।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুন