সবকিছু ঠিক থাকলে এই সময় মেট্রোরেলে অফিসের পথে থাকতাম
সবকিছু ঠিক থাকলে এই সময় মেট্রোরেলে অফিসের পথে থাকতাম। অথচ এখন কক্সবাজারে সমুদ্রের পাড়ে বসে আছি। আজ ২৩ জুলাই কক্সবাজারে আমাদের ষষ্ঠ সকাল। এখানে আমরা শুধু একা নই, আমাদের মতো হাজার হাজার মানুষ আটকে আছেন।
আমি ঢাকায় থাকি, আর আমার স্বামী বগুড়ায়। দুজনে ব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা স্বস্তি পেতেই দীর্ঘদিন ধরে সমুদ্রবিলাসের পরিকল্পনা করেছিলাম। ১৭ জুলাই আশুরার ছুটি। সঙ্গে আরও এক দিন ছুটি যোগ করে কক্সবাজারে আসি। কিন্তু কে জানত, দুই দিনের সফর এত লম্বা হয়ে যাবে।
এই কয়েক দিন কক্সবাজার শহর থেকে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা, কলাতলীসহ বিভিন্ন পয়েন্ট আলাদা করে ফেলা হয়েছে। এ দিকে পুলিশ, র্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) আর সেনাবাহিনীর সদস্যদের কড়া পাহারা। আমাদের হোটেল কলাতলীতে। সৈকতের কাছাকাছি হওয়ায় বেশ সুবিধা হয়েছে। দুজন সকালের নাশতা সেরেই সৈকতে আসি। ঘণ্টাপ্রতি ৬০ টাকায় বসে পড়ি ছাতার নিচে, মাঝেমধ্যে চা, বাদাম ও ডাব খাই। ঢেউ আছড়ে পড়ে পাড়ে। জীবন নিয়ে চলে আমাদের বিস্তর আলোচনা। এখন আর সমুদ্রের স্নানে মন নেই। পানিতেও নামতে ইচ্ছা করে না। সমুদ্রের গর্জনে যেখানে মনটা ফুরফুরে থাকা দরকার, সেখানে এখন হুটহাট মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। পরিবার–পরিজন থেকে শত শত কিলোমিটার দূরে আমরা। যোগাযোগমাধ্যম কেবল মুঠোফোন। যতটা পারছি চেষ্টা করছি নিজেদের শক্ত রাখার কিন্তু মা–বাবা আর বোনের সঙ্গে কথা হলেই কেমন যেন ভেঙে পড়ি। ফোনের ওপাশ থেকে কবে আসবি, এ কথাটা যেন বুকের মধ্যে এসে লাগে।
বহু বছর পর ইন্টারনেটের বাইরে আমরা। হুটহাট মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপে টুংটাং নেই। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে স্টোরি দেওয়া নেই। মনে হচ্ছে অনেকটা নেটওয়ার্কের বাইরে আছি। সকাল, দুপুর, বিকেল, রাত যখন–তখন সৈকতে আসি, দেখা হয় অনেক মানুষের সঙ্গে। আবার কারও সঙ্গে লিফটে, হোটেলে খেতে গেলে, না হয় সৈকতে দেখা হয়। এই কয়েক দিনে অনেক নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে। সবার মধ্যেই আতঙ্কের ছাপ। অনেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসে বিপদে পড়েছেন। কারও কারও বাজেট ট্রিপ ছিল। এখন এ অবস্থায় টাকাও জোগাড় করতে পারছেন না। এই পর্যটকেরা কক্সবাজারের হোটেলে ভাড়া না বাড়ায় একটু স্বস্তি পেয়েছেন।
এক বয়স্ক দম্পতি ভারত থেকে এসেছেন। দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করেন, কী খবর তোমাদের দেশের? তোমাদের দেশে এসে যে আটকে গেলাম।
কী বলব তাঁদের! নিজেদেরই তো যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়নি এখনো। তাঁদের সামনে পড়লে লজ্জাই লাগে!
আজ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় নিরাপত্তা বাহিনীর তত্ত্বাবধানে কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী গাড়ি ছেড়েছে। আমরা আরও দুই দিন থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ, আমাদের একজনের যেতে হবে বগুড়া। ঢাকায় গিয়ে কার বাসায় দুজন উঠব, এসব ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। আশা করি, দুই দিনের মধ্যেই ফিরতে পারব।