শরীরে কোনো ক্ষত হয়েছে? এই নিয়মগুলো মানুন
শরীরের কোনো অংশে আঘাত লাগলে বা সার্জারি করা হলে যে ক্ষত তৈরি হয়, তা অনেক সময় জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। যাকে বলা হয় ক্ষতস্থানের সংক্রমণ। প্রাথমিক পর্যায়ে এ সংক্রমণ শুধু ক্ষতস্থানেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না নিলে তা সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
কোনো আঘাত বা সার্জারি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেখানে সংক্রমণ তৈরি হয় না। সাধারণত সংক্রমণ হতে পাঁচ থেকে সাত দিন সময় লাগে। এ সময়টাতে জীবাণু বংশবৃদ্ধি করে ও সংক্রমণ তৈরি করে।
একটি ক্ষতস্থানে সংক্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের দরকার। নোংরা ক্ষতে সংক্রমণ দ্রুত বিস্তার লাভ করে। এ ছাড়া রোগীর রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হলে, পুষ্টির অভাব হলে কিংবা অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট বা প্রতিরোধক জীবাণু দিয়ে আক্রান্ত হলে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। কিছু কিছু সার্জারিতে সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে।
হঠাৎ আঘাত পেলে
আঘাতের পরিমাণ সামান্য হলে ক্ষতস্থান প্রথমে পরিষ্কার পানি ও অ্যান্টিসেপটিক সলিউশন দিয়ে ধুয়ে ৪৮ ঘণ্টার জন্য ঢেকে রাখতে হবে। এরপর অ্যান্টিবায়োটিক মলম ব্যবহার করতে হবে।
আঘাতের মাত্রা বেশি হলে নিকটস্থ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হবে। চিকিৎসা নেওয়ার আগে হাসপাতালের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন কি না, সেটা দেখে নেওয়া জরুরি। যেকোনো সার্জারির পর ক্ষতস্থানের পরিচর্যা কীভাবে করতে হবে, তা চিকিৎসক বা নার্সের কাছ থেকে ভালো মতো প্রশ্ন করে জেনে নিতে হবে।
সংক্রমণ ঠেকাতে করণীয়
১. আমাদের সমাজে প্রচলিত কিছু ধারণা আছে, যেমন টক খেলে, ডিম, দুধ বা চা খেলে ক্ষত সময়মতো সাড়ে না। আবার অনেকে ক্ষতস্থানে কোনো পানি ছোঁয়াতে চান না। এসবের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। আগে ধারণা করা হতো, ক্ষতস্থান বেশি দিন ঢেকে রাখলে দ্রুত সেরে ওঠে। কিন্তু এখন গবেষণায় দেখা গেছে, ক্ষত তৈরি হওয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ঢেকে রাখাই যথেষ্ট। আমাদের দেহের চামড়া থেকে নিয়মিত ক্ষতিকারক পদার্থ ঘামের সঙ্গে নিঃসৃত হতে থাকে। তাই ক্ষতস্থান বেশি দিন ঢেকে রাখলে ও পরিষ্কার না করলে এসব পদার্থ জমা হয়ে সংক্রমণের আশঙ্কা বেড়ে যায়। তাই ক্ষত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পর থেকে ক্ষতস্থান খোলা রেখে নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে পরিষ্কার করলে ও মলম ব্যবহার করলে দ্রুত সেরে ওঠে।
তবে কিছু কিছু ক্ষতস্থান বেশি দিন ঢেকে রাখা প্রয়োজন হতে পারে। যেমন পোড়ার ক্ষত। এ ছাড়া শল্যচিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
২. সব সময় চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা উচিত। কোন জীবাণুতে ক্ষতস্থান আক্রান্ত হয়েছে, সে বিষয়ে চিকিৎসকই সঠিক পরামর্শ দিতে পারবেন। এ ছাড়া ক্ষতের প্রকারভেদ দেখে টিটেনাস ইনজেকশন নিতে হবে কি না, সেটা জানার জন্যও চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে ভালো হয়।
৩. ক্ষতস্থান সেরে ওঠার জন্য পুষ্টিকর খাবারের সঙ্গে সঙ্গে কিছু ভিটামিন ও মিনারেলেরও প্রয়োজন হয়। ডিমের সাদা অংশে ও মাংসে প্রয়োজনীয় প্রোটিন থাকে, এ ছাড়া ভিটামিন সি–সমৃদ্ধ টকজাতীয় ফল খাওয়া যেতে পারে। জিংক ও ভিটামিন বি ক্ষত সাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আলু, মিষ্টি আলু, বাদাম, ডার্ক চকলেট ও মাংসে জিংক থাকে। অপারেশন পরবর্তী সময়ে সাপ্লিমেন্টারি ভিটামিন ক্ষতস্থান সাড়াতে সাহায্য করে।
৪. ডায়াবেটিসের রোগীদের ক্ষতস্থান সেরে উঠতে বেশি সময় লাগে। এ ছাড়া যাদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম, তাদের ক্ষত সাড়তে বেশি সময় প্রয়োজন হয়। এ জন্য কো-মরবিড রোগ, যেমন উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, কিডনির রোগ ইত্যাদি থাকলে সেগুলোর চিকিৎসাও একই সঙ্গে চালিয়ে যেতে হবে। ক্ষতস্থান দ্রুত সেরে ওঠার জন্য ডায়াবেটিসের মাত্রা খাবার পর অবশ্যই ১০ মিলিমোল পার লিটারের নিচে রাখার চেষ্টা করতে হবে।
সংক্রমণ হয়ে গেলে
অনেক সময় সব ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হয়ে যেতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে সংক্রমণ হওয়ার কারণ সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। অনেক রোগীই জানেন না, তাঁদের ডায়েবেটিস বা কিডনির কোনো রোগ আছে কি না। এ ছাড়া অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্ট ব্যাকটেরিয়া দিয়ে ক্ষতস্থানে সংক্রমণ হতে পারে, তখন চিকিৎসা নিয়েও ভালো ফল পাওয়া যায় না।
এসব ক্ষেত্রে নিয়মিত ড্রেসিংয়ের পাশাপাশি রক্ত বা পুঁজের কালচার সেনসিটিভিটি পরীক্ষা করাতে হবে। সে রিপোর্ট অনুযায়ী কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে। তাই দেহে কোনো ক্ষত হলে ভয় না পেয়ে সংক্রমণ প্রতিরোধ করে বা সংক্রমণ হলে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা গ্রহণ করে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা যায়।