মনরোর সেই গাউনটি ‘নষ্ট করেছেন’ কিম
১৯ মে ১৯৬২। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের থার্ড ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে একটি বডি হাগিং ন্যুড বোল্ড সিল্ক গাউন পরে হাজির হলেন বিশ্বখ্যাত মার্কিন অভিনেত্রী, সংগীত তারকা, মডেল ও ফ্যাশন আইকন মেরিলিন মনরো। পোশাকটি সেদিন সবার নজর কেড়েছিল। ১০ দিন পরই ছিল যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডির ৪৫তম জন্মদিন। সেদিন ১৫ হাজার দর্শকের সামনে ওই একই পোশাকে মনরো গাইলেন, ‘হ্যাপি বার্থডে, মিস্টার প্রেসিডেন্ট’। সেই মুহূর্ত আর সেই পোশাকটি হয়ে রইল ইতিহাসের সাক্ষী। ২০২২ সালের ২ মে মেট গালায় বডি হাগিং সেই ড্রেসটি পরে উপস্থিত হলেন কিম কার্ডাশিয়ান। মাঝখানের ৬০ বছরে পোশাকটি কেউ পরেননি। কেউ না। মেট গালারও প্রায় দেড় মাস পর সেই পোশাককে ঘিরেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
মেট গালায় খুব অল্প সময়ের জন্য পোশাকটি পরেছিলেন কিম কার্ডাশিয়ান। শুধু রেড কার্পেটে হাঁটার মুহূর্তেই তাঁকে গাউনটিতে দেখা যায়। এর সঙ্গে তিনি সাদা পশমের একটি স্টোল বা উত্তরীয় ব্যবহার করেন। কেননা, চেষ্টা করেও কোনোভাবেই পেছনের চেইনটা লাগাতে পারছিলেন না কিম। তাই সেটি খোলাই ছিল। সেটি ঢাকতেই স্টোলের ব্যবহার করেন তিনি। তবে আরও একটি কারণে স্টোলটি হাতে নিয়েছিলেন। সেটি পরে বলছি। মেট গালার রেড কার্পেটে হাঁটার দুই মিনিটের মধ্যে কিম আসল পোশাকটি বদলে নিজের শরীরের মাপে বানানো একই রকম দেখতে একটি নকল পোশাক পরেন। অবশ্য বিষয়টি তিনি গোপন করেননি।
২০১৬ সালে ৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার দিয়ে পোশাকটি কিনে নিয়েছিল রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট মিউজিয়াম। মানে বাংলাদেশি অর্থমূল্যে প্রায় ৪৪ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে পোশাকটি কেনে তারা। এটিই তখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি পোশাকের স্বীকৃতি পায়। মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে ধার নিয়ে পোশাকটি পরেছিল কিম। সম্প্রতি কিমের জমা দেওয়া পোশাকটির কিছু ছবি তোলেন আলোকচিত্রী স্কট ফোর্টনার। সেই ছবিতে দেখা যায়, ছয় হাজারের বেশি হিরের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র টুকরোর মতো রাইনস্টোনের অনেকগুলো গাউনটির পেছন দিকের শরীর থেকে খসে পড়েছে। অনেকগুলো আবার গাউনের সুতায় ঝুলছে।
তবে মনরোর ঐতিহাসিক এই পোশাকটি নষ্টের দায় নেয়নি রিপলি’স বিলিভ ইট অর নট জাদুঘর কর্তৃপক্ষ। তারা এক পোস্টে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করে লেখে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পপ কালচার ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই পোশাক। পোশাকটি সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সংরক্ষণ করা হয়েছে। এমনকি কয়েক মিনিটের জন্য কিম কার্ডাশিয়ান পোশাকটি পরে রেড কার্পেটে হেঁটে কথামতো আসল পোশাকটি খুলে রেপ্লিকাটি পরেন।’
পোশাকটি শরীরে ফিট করার জন্য কম চেষ্টা করেননি কিম। মাত্র এক মাসে ১৬ পাউন্ড (৭.২ কেজি) কমিয়েছেন। চিকিৎসক আর পুষ্টিবিদেরা তাঁকে নিষেধ করেছিলেন এত ঝুঁকি নিতে। কিন্তু কিম পোশাকটি গায়ে চাপাতে মরিয়া ছিলেন। ‘গার্ডিয়ান’কে কিম সে সময় বলেছিলেন, ‘যখন প্রথমবার পোশাকটির মাপজোখ নেওয়া হলো, আমার কান্না পেল। কেননা, আমার স্টাইলিশ বলেছিল, আমি পোশাকটি কোনোভাবেই পরতে পারব না। যে সময় আছে, সেই সময়ের মধ্যে আমি ততটা শুকাতে পারব না। কিন্তু আমি কারও কথা শুনিনি। মরিয়া হয়ে ওজন কমিয়েছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রেডমিলে দৌড়েছি আর কোনো শর্করা খাইনি বললেই চলে। আমার মনে হয়েছিল, এই পোশাকটি একটি রোল। আর আমাকে সেখানে যেকোনো মূল্যে আঁটতেই হবে।’
অনেকেই কিমকে মনরোর বিশ্বখ্যাত পোশাকটি নষ্ট করার জন্য কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন। বলছেন, এই গাউনে মনরো ছাড়া আর কাউকে কল্পনা করা যায় না। আরও বলছেন, কোনো কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি বা জোর জবরদস্তি করতে নেই। জোর করে পোশাকটি গায়ে চাপাতে গিয়েই এই অঘটন ঘটিয়েছেন। মেট গালার ছবিতে এই ক্ষতি ধরা পড়েনি। কেননা, তখন পোশাকটির ক্ষতি হওয়া জায়গাটি স্টোলে ঢাকা ছিল। স্টোল ব্যবহারের আরেকটি কারণ ছিল সেটি।
মেট গালায় কিমের হাঁটা দেখেই বোঝা গিয়েছিল পোশাকটি গায়ে চাপিয়ে মোটেই স্বস্তিবোধ করছেন না তিনি। এমনকি ঠিকমতো হাঁটতেও পারছেন না। ৪১ বছর বয়সী প্রেমিকা কিমকে ধরতে একাধিকবার এগিয়ে এসেছেন ২৮ বছরের প্রেমিক পিট ডেভিডসন।