এবারের বৈশাখ একেবারে ভিন্ন রূপে আসছে আমাদের সামনে। দিকে দিকে যখন নতুন বছরের আনন্দধ্বনি তখন আমরা আছি এক অদৃশ্য শত্রুর মুখোমুখি। কোনো কিছুতেই এ শত্রুকে বাগে আনা যাচ্ছে না। এ শত্রুর নাম কোভিড-১৯। দ্বিতীয় দফায় এর সংক্রমণ শুরু হয়েছে আমাদের দেশে এবং এ দফায় এটির সংক্রমণের হার অত্যন্ত বেশি। ফলে বৈশাখের অনুষ্ঠানে যে এবার আগের মতো আনন্দ-উল্লাস করা সম্ভব হবে না, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। এবারের বৈশাখের অনুষ্ঠানে থাকবে স্বাস্থ্যবিধির কড়াকড়ি এবং সেটা নিজেদের সুরক্ষার জন্যই।
তাই বলে আনন্দ থেকে আমরা বঞ্চিত থাকব? মোটেও না। আনন্দ হবে এবার ইনডোর, অর্থাৎ বাড়ির ভেতরে, ভিড়ভাট্টা এড়িয়ে। আয়োজনে তাই থাকবে ঘরোয়া ভাব। কোভিড-১৯-এর চিন্তা যাদের আনন্দে ভাটা ফেলতে পারবে না, বাড়ির সেই শিশুদের জন্যও এবার করতে হবে বিশেষ ব্যবস্থা। কারণ, কোনো বয়সের মানুষেরই আর সামাজিক মেলামেশা করার সুযোগ নেই।
বাড়ির বাইরে যেতে না পারার কারণে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষদের মতোই মন খারাপ থাকবে শিশুদের। তাদের মন রাঙিয়ে দিতে রাখতে হবে বাড়তি কিছু। নতুন পোশাক সেই ‘বাড়তি কিছুর’ অন্যতম মাধ্যম হতে পারে।
শিশুদের পোশাক মানেই রঙিন বিষয়। উজ্জ্বল রঙের পোশাক শিশুদের মনের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে বেশি। তাই তাদের জন্য কিনুন তাদের পছন্দের উজ্জ্বল রঙের পোশাক। জোরজবরদস্তি না করে পোশাক কেনার সময় তাদের জিজ্ঞেস করুন পছন্দের রং কোনটি। তারপর তাকেই পছন্দ করতে দিন তার পোশাক। কিনতে শপিং মলে যেতে চাইছেন? এ ভুল করবেন না। এখন সব বড় ব্র্যান্ডেরই অনলাইন শপ আছে। নিদেনপক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের একটি পেজ রয়েছে। সেখানে ঢুকে পোশাক বাছুন এবং শিশুকে বাছতে সহায়তা করুন। তারপর অর্ডার দিন।
কেমন হতে পারে শিশুর পোশাক? আগেই বলেছি, উজ্জ্বল রঙের প্রতি শিশুদের একধরনের আকর্ষণ থাকে। তাই রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রংকেই প্রাধান্য দিন। সেই সঙ্গে রাখুন বড় নকশা। প্রতিটি ফ্যাশন হাউস শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক দিকটিকে বিবেচনায় রেখে পোশাকের নকশা করে। একাধিক হাউসের ওয়েবসাইট বা ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম পেজ দেখুন। দেখলেই একটি ধারণা তৈরি হয়ে যাবে আপনাদের।
তবে কিছু বিষয় মনে রাখলে শিশুদের জন্য পোশাক নির্বাচন করা সহজ হয়ে যাবে আপনার।
শূন্য থেকে দুই
নবজাতকদের জন্য বৈশাখী পোশাকের বাহার দেখা যাবে বয়সভেদে। তবে একেবারে ছোট যারা, অর্থাৎ দুই বছরের নিচে যাদের বয়স, তাদের পোশাক কিনতে গেলে একটু বিপদেই পরতে হয়। কারণ, বেশির ভাগ ফ্যাশন হাউস এ বয়সী শিশুদের জন্য পোশাক তৈরি করে না। অল্প কিছু প্রতিষ্ঠান তৈরি করে। তাই একটু খুঁজতে হবে আপনাকে।
শূন্য থেকে ছয় মাস বয়সী শিশুদের পোশাকের জন্য সাধারণত প্রাধান্য দেওয়া হয় শিশুর আরামের দিকটিকে। সুতি কাপড় এ ক্ষেত্রে ভালো জিনিস হতে পারে। এ ছাড়া থাকতে পারে বেক্সিফেব্রিকসের কাপড়ে তৈরি পোশাক। হালকা নকশার আরামদায়ক এ পোশাকগুলো হওয়া উচিত হালকা রঙের। সাদা, হালকা সাদা, মিষ্টি গোলাপি, টিয়া সবুজের মতো রং বেছে নিতে পারেন আপনার সবচেয়ে ছোট সদস্যটির পোশাকের জন্য।
পোশাক কিনে বাড়িতেই তৈরি করে নিতে পারেন রংবেরঙের লেস। তাতে একধরনের নতুনত্ব আসবে পোশাকে। তবে নতুনত্ব আনতে গিয়ে শিশুর আরামের দিকটিকে উপেক্ষা করবেন না।
তিন থেকে আট বছর বয়সীদের জন্য
এ বয়সী শিশুদের জন্য পোশাকের সম্ভার সবচেয়ে বেশি। কারণ, সব ফ্যাশন হাউসই এ বয়সী শিশুদের জন্য পোশাক তৈরি করে থাকে। এ জন্যই সম্ভবত এ বয়সী শিশুদের পোশাক নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়ে থাকে।
প্রায় সব ধরনের কাটছাঁটের পোশাক মানিয়ে যায় এই বয়সী শিশুদের। আর তাই উৎসবমুখর আমেজ ফুটিয়ে তুলতে পোশাকের ঘেরে আনা যেতে পারে নতুনত্বের ছোঁয়া। যেমন আনারকলি বা একটু ঘের দেওয়া কামিজ তো আছেই। লম্বা ঝুলের কামিজও ভালো দেখাবে এই বয়সী শিশুদের। এ ছাড়া সোজা কাটের কামিজের সঙ্গে ঘের দেওয়া পালাজ্জো আর কলিদার ও রুমাল ছাঁটে চুড়িদার পায়জামা, ঘের দেওয়া কুর্তার সঙ্গে কুঁচির সালোয়ারও থাকতে পারে আপনার মেয়েশিশুটির পোশাক হিসেবে। তা ছাড়া স্লিভলেস হাতার ফতুয়া বেছে নেওয়া যেতে পারে মেয়েশিশুদের জন্য। রংবেরঙের নেটের ঝুল দেওয়া টপেও ভালো দেখাবে তাদের। পাশাপাশি ছেলেদের জন্য শর্ট শার্ট আর ফতুয়া মানানসই হবে। এ ছাড়া থাকতে পারে আরামদায়ক ও উজ্জ্বল রঙের টি-শার্ট, বাহারি পাঞ্জাবি। এ পোশাকগুলো মা-বাবার সঙ্গে মানিয়েও কেনার সুযোগ আছে।
শাড়িতে বৈশাখ
ছোটদের জন্য পেটিকোটসহ সেলাই করা শাড়ির সংগ্রহ থাকে বৈশাখের জন্য। সারা বছর না পরলেও বৈশাখে মেয়েশিশুদের প্রিয় পোশাক হয়ে ওঠে রংবেরঙের শাড়ি। তাই প্রায় সব বুটিক হাউসই মেয়েশিশুদের জন্য শাড়ির আয়োজন রাখে বৈশাখকে উপলক্ষ করে। দুই থেকে আট বছর বয়সী মেয়েশিশুদের জন্য ব্লকপ্রিন্ট, বাটিক, স্ক্রিনপ্রিন্টের নকশা করা কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয় এসব শাড়ি। পাশাপাশি গামছা আর ভেজিটেবল ডাইয়ের শাড়িও পাওয়া যায়। শাড়ির রঙের সঙ্গে মানিয়ে বা একেবারে বিপরীত রঙের ব্লাউজ কেনা যেতে পারে।
এবার থাকবে মাস্ক
অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু শিশুদের কথা ভেবেই তৈরি করছে তাদের উপযোগী বিচিত্র সব মাস্ক। আপনার শিশুর জন্য আরামদায়ক এবং তার পছন্দের রঙের মাস্ক কিনুন এবার। তাকে মাস্ক ব্যবহার করায় অভ্যস্ত করুন।
মাস্ক এখন বাধ্যতামূলক সবার জন্যই। এত দিন যাঁরা ‘শিশুদের করোনা হয় না’ ভেবে তাদের জন্য মাস্ক কেনেননি, তাঁরা মাস্কের দিকে মনোযোগ দিন। অনেক প্রতিষ্ঠান শুধু শিশুদের কথা ভেবেই তৈরি করছে তাদের উপযোগী বিচিত্র সব মাস্ক। আপনার শিশুর জন্য আরামদায়ক এবং তার পছন্দের রঙের মাস্ক কিনুন এবার। তাকে মাস্ক ব্যবহার করায় অভ্যস্ত করুন। শুধু করোনার জন্যই নয়, শহরের ধুলাবালু থেকে তৈরি হওয়া অনেক রোগ এই মাস্কের জন্যই দূরে থাকবে। এই বৈশাখে তাই তাদের জন্য বিশেষ উপহার হিসেবে থাকুক মাস্ক।
সব মিলিয়ে এবার শিশুদের আনন্দ হোক ঘরেই। আর সে আনন্দের ব্যবস্থা করে দিতে অভিভাবক হিসেবে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে আপনাকেই।