ফ্যাশনের জমকালো আয়োজন
পরিবেশবান্ধব, ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেল আর পোশাকের মোটিফে লোকজ উপকরণ—এ কথাগুলোই বারবার উচ্চারিত হলো ট্রেসেমে বাংলাদেশ ফ্যাশন উইক ২০২০–এর মঞ্চে। ২৩ থেকে ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর বসুন্ধরা ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে বসেছিল ফ্যাশনের এই জমকালো আয়োজন। ট্রেসেমের সহযোগিতায় ফ্যাশন ডিজাইন কাউন্সিল অব বাংলাদেশ (এফডিসিবি) দ্বিতীয়বারের মতো আয়োজন করে এই শোর। এবারের ট্রেসেমে বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকে অংশ নেন ৩০ জন ডিজাইনার। এর মধ্যে বাংলাদেশের ডিজাইনার ছিলেন ২১ জন, ভারতের ৬ জন, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার ১ জন করে ডিজাইনার অংশ নেন।
ট্রেসেমে ফ্যাশন উইকের এবারের আয়োজনে বারবার ঘুরেফিরে এসেছে ‘পরিবেশ বাঁচাও’ কথাটি। প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রিসাইক্লিংয়ের (পুনর্ব্যবহারযোগ্য) বিষয়টিও। উৎসবের প্রথম দিন রাজদর্শনের রেড কার্পেটে তাই দেখা গেল একবার ব্যবহৃত প্লাস্টিক গ্লাস-প্লেট আর পেঁয়াজের খোসায় তৈরি গাউনে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন মডেলরা। ফ্যাশন শোর দ্বিতীয় দিন ছিল পলিথিন ব্যাগ আর খবরের কাগজের পোশাক।
এ আয়োজনে চলতি বছরের ফ্যাশন ধারার একটি আভাস পাওয়া গেল। পোশাকের কাটে ভিন্নতা তো ছিলই, সেই সঙ্গে ছিল পোশাকের রং নির্বাচনের স্বকীয়তা। পোশাকে রং নির্বাচনও যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, তা–ও বুঝিয়ে দিলেন ডিজাইনাররা। এক রং থেকে যে কত রকম রঙের শেড হতে পারে, তা–ও দেখা গেল এবারের ফ্যাশন উইকে।
উৎসবের প্রথম দিন প্রথমেই মঞ্চে আসেন নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ১০ জন নারী। এর মধ্যে ছিলেন অভিনেত্রী, উপস্থাপিকা, সংবাদপাঠক, চিকিৎসক, পাইলট, বাংলাদেশ মহিলা ফুটবল দলের অধিনায়কসহ আরও অনেকে। এরপরই মঞ্চে আসেন ডিজাইনার নওশিন খায়ের। জামদানি এবং এর মোটিফের নকশা স্থান পায় তাঁর পোশাকে। এদিন বাংলাদেশের সাতজন, ভারতের দুজন এবং নেপালের একজন ডিজাইনার তাঁদের পোশাক প্রদর্শন করেন। প্রথম দিন তেনজিং চাকমার ইউনিফর্মের আদলে নকশা করা পোশাক দর্শকদের নজর কেড়েছে।
উৎসবের দ্বিতীয় দিনটি যেন একটু বেশি ঝলমলে ছিল। বসন্ত রংগুলো যেন ভেসে বেড়াল কিউজুড়ে। শৈবাল সাহা, মুমু মারিয়া আর শাহরুখ আমিনের নকশা করা কমলা, হলুদ, খাকি ও লাল রঙের পোশাকে ছিল বসন্তের ছোঁয়া। এদিন পোশাকে লেয়ারিং দেখা গেল উল্লেখযোগ্যভাবে। শুধু শাড়িই নয়, বিভিন্ন পোশাকের সঙ্গে বিভিন্ন প্যাটার্নে জ্যাকেট পরে হাঁটলেন মডেলরা। ফ্যাশন শোর মঞ্চে ডিজাইনার মাহিন খান জানালেন, আন্তর্জাতিক পোশাকের বাজারে বাংলাদেশের পোশাককে পৌঁছে দিতেই এ ধরনের আয়োজন করছেন তাঁরা। ভারতীয় ডিজাইনার সৌমিত্র মণ্ডলের নকশার পোশাক প্রদর্শনের মাধ্যমে শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের আয়োজন।
উৎসবের শেষ দিন প্রথম তিন কিউতে বাংলাদেশের তিন ডিজাইনার লিপি খন্দকার, কুহু প্লামন্দন ও চন্দনা দেওয়ান তাঁদের পোশাক দেখান। লিপি খন্দকারের পোশাকে কাট ও মোটিফে ছিল কাগজের ঝালরের ব্যবহার। ‘সেভ দ্য সুন্দরবন’— এই থিমে পোশাকের নকশা করেছেন কুহু। চন্দনা দেওয়ানের পোশাকে ছিল নকশিকাঁথা কাজের প্রাধান্য। এদিন বাংলাদেশের ডিজাইনারদের মধ্যে সারা করিম, রিফাত রেজা, ফারাহ দিবা আর ফাইজা আহমেদের সঙ্গে আরও ছিলেন ভারতীয় ডিজাইনার অলকা শর্মা ও ভুটানের চন্দ্রিকা তামাং। সবশেষে ভারতের আরেক ডিজাইনার আসিফ শেখের নকশা করা পোশাক প্রদর্শনের মাধ্যমে পর্দা নামে এই আসরের।
বাংলাদেশ ফ্যাশন উইকের ফ্যাশন শোতে অংশ নেওয়া মডেলদের সাজানোর দায়িত্বে ছিল রেড বিউটি স্যালন, ফারজানা শাকিল’স মেকওভার ও পারসোনা। পুরো শোয়ের কোরিওগ্রাফি করেন আজরা মাহমুদ। আয়োজনের হসপিটালিটি পার্টনার ছিল লা মেরিডিয়ান।
ছবি: খালেদ সরকার ও সুমন ইউসুফ