২০২১ সালে মরিয়া হয়ে স্বাভাবিক গতিতে ফেরার চেষ্টা করেছে ফ্যাশন বিশ্ব। সেই চেষ্টায় ছিল দায়িত্বশীলতা। কেবল পোশাকের ব্র্যান্ডই নয়, ফ্যাশন দুনিয়ার বড় বড় তারকাও সচেতনতার সঙ্গে সেই দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজেদের কাঁধে। ফাস্ট ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য কমিয়ে টেকসই ফ্যাশনকে জনপ্রিয় করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাঁরা। পরিবেশের ওপর ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনতে তাঁরা টেকসই ফ্যাশনের পতাকা বহন করেছেন। কেউ লালগালিচায় পরে এসেছেন রিসাইকেল (পুনর্ব্যবহার) আর আপসাইকেল (পুরোনোকে নতুন করে ব্যবহার) করা উপাদানে তৈরি পোশাক। আবার কেউ গুরুত্বপূর্ণ আয়োজনে এমন ডিজাইনার বেছে নিয়েছেন, যিনি পরিবেশবান্ধব টেকসই ফ্যাশনে বিশ্বাসী। এ রকমই কয়েকজন শক্তিশালী, ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারকে (প্রভাবক) নিয়ে এই আয়োজন, যাঁরা অন্যদের প্রভাবিত করেছেন টেকসই ফ্যাশনের দিকে। আজ থাকল এই আয়োজনের প্রথম পর্ব।
এই তালিকার শুরুতেই অ্যাঞ্জেলিনা জোলির নাম না নিলে অন্যায় হবে। সাম্প্রতিক প্যারিস ভ্রমণে তিনি যত পোশাক পরেছেন, সবই পুরোনো আর আপসাইকেল করা। ১৮ অক্টোবর তাঁর ‘ইটারনালস’ সিনেমার প্রিমিয়ারে তিনি হাজির হয়েছিলেন পাঁচ সন্তান নিয়ে। সেদিন ১৬ বছর বয়সী জাহারা মায়ের ওয়ার্ডরোব থেকে ধার করেছিল পুরোনো একটি পোশাক।
জাহারার পরনে যে পোশাকটি ছিল, সেটি জোলি পরেছিলেন ২০১৪ সালের অস্কারের লালগালিচায়। পোশাকটির ডিজাইন করেছিলেন লেবাননের ফ্যাশন ডিজাইনার এলি সাব। এদিকে ১৫ বছর বয়সী মেয়ে শিলোহর পরনেও ছিল মায়ের একটি ট্যান পোশাক।
এই তালিকায় আরেক অপরিহার্য নাম বেলা হাদিদ। মার্কিন এই মডেল ২০২১ সালে এমন সব ব্র্যান্ডের পোশাক পরে জনসমক্ষে দেখা দিয়েছেন, যাঁরা পরিবেশের কোনো ক্ষতি না করে পোশাক তৈরিতে বদ্ধপরিকর। কেবল ব্র্যান্ডই নয়, খুঁজে খুঁজে এমন সব ডিজাইনারের পোশাক পরেছেন, যাঁরা কেবল টেকসই পোশাক তৈরি করেন। ৬৯ বছর বয়সী ফরাসি ফ্যাশন ডিজাইনার জ্যঁ পল গালতিয়ার থেকে শুরু করে ৫০ বছর বয়সী ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার স্টেলা ম্যাককর্টনির পোশাকে দেখা দিয়েছেন। মাইক্রো স্কার্ট আর রাতের পোশাক কিনেছেন অ্যাবারক্রোমবি অ্যান্ড ফিচ থেকে। ব্র্যান্ডটি পুরোনো কাপড়কে নতুন করে ব্যবহার করে নতুন পোশাক বানানোর জন্য পরিচিত।
আরেক সুপারমডেল কেন্ডাল জেনারও এ বছর দেখা দিয়েছেন একাধিক ভিনটেজ লুকে। পুরোনো জামাকাপড়ে এটা-সেটা করে যোগ করায় বিশ্বাসী তিনি। তিনিও এ বছর বেশ কিছু ফরাসি ব্র্যান্ডের দিকে ঝুঁকেছেন, যাঁরা ফ্যাশন বিশ্বকে পরিবেশের জন্য ঝুঁকিমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর। কেন্ডাল জানিয়েছেন, তিনি হার্ভে স্টুডিওর ভক্ত, যারা কেবলই টেকসই পোশাক বানায়।
বারবাডিয়ান গায়িকা রিয়ানাও নীরবে পোশাকের মাধ্যমে রীতিমতো বিপ্লব ঘটিয়েছেন। শ্যানেল হোক বা ডি’ওর, রিয়ানা বেছেন নিয়েছেন পুরোনো ভিনটেজ কালেকশনকেই। ফ্যাশন বিশ্বকে তিনি জানাতে চান, যা কিছু পুরোনো, সবই ফেলনা নয়। তিনি ব্রিটিশ ডিজাইনার কর্নার আইভিসের ভিনটেজ জার্সি আর সিল্কের স্কার্ফের প্রচারণা করেছেন। এগুলো এক যুগ পরও এ রকমই থাকবে। পুরোনো হবে না।
শুরু থেকেই পরিবেশবাদী হিসেবে পরিচিত এমা ওয়াটসন। আর্থশুট প্রাইজের লালগালিচায় এই হলিউড তারকা হাজির হয়েছিলেন ২৫ বছর বয়সী ব্রিটিশ-মার্কিন ডিজাইনার হ্যারিস রিডের ডিজাইন করা একটি ‘আপসাইকেলড’ পোশাকে। জাতিসংঘের ২৬তম জলবায়ু সম্মেলনেও অংশ নিয়েছেন এমা। সেখানে তিনি পরেছিলেন নিউজিল্যান্ডের ফ্যাশন ডিজাইনার এমিলিয়া উইকস্টিডের ডিজাইন করা পোশাকে। আর সেগুলো সবই পুরোনো সুতা রিসাইকেল করে বোনা।