ছোট চোখেও রোদচশমা
শিশুর ছোট চোখজোড়ার ঝিলিক যেন মা-বাবার স্বপ্নের প্রতিফলনই। চোখজোড়ার সামনে আদুরে নকশার রোদচশমায় খুশিতে আটখানা হলো মমতামাখা মুখটা। পৃথিবীকে তো শৈশবেই রঙিন মনে হয়। ‘রঙিন চশমা’ আক্ষরিক অর্থেই হয়তো এ সময়টার জন্য। বাজারের নানা চশমার দোকানে পাওয়া গেল শিশুর মনোহারি চশমার খোঁজ। বিক্রেতারাই জানালেন, চাহিদা বুঝে চশমার ধরন যেমন আলাদা হয়, দামেরও হয় তারতম্য। রোদ থেকে বাঁচতেই হোক আর সোনামণির খুশির জন্যই হোক, রোদচশমা কেনাই হয়।
ধরন-ধারণ
বাজার ঘুরে জানা গেল, পোলারাইজড গ্লাস সবচেয়ে ভালো। এতে চোখে রোদের তেজ কম অনুভূত হয়। ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও চোখজোড়া রক্ষা পায় বলে জানালেন বিক্রেতারা। দৃষ্টি হয় পরিষ্কার, চোখের সামনে কোনো কুয়াশার ভাব থাকে না। এই রোদচশমা ব্যবহারে সাধারণত চোখে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতেও দেখা যায় না। এই গ্লাসে সহজে দাগও পড়ে না। রোদচশমা হিসেবে এটিই মানসম্মত।
মার্কারি গ্লাস নামে আলাদা ধাঁচের একধরনের চকচকে গ্লাস পাওয়া যায়। ঝলমলে দেখতে, তাই অনেক শিশু এগুলোই পছন্দ করে। মার্কারি গ্লাস পোলারাইজড হতে পারে, আবার সাধারণ গ্লাসও হতে পারে। প্লাস্টিকের তৈরি গ্লাসগুলো খুব একটা মানসম্মত নয়। কম দামে পাওয়া গেলেও এগুলো চোখকে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে পুরোপুরি বাঁচাতে পারে না।
প্লাস্টিকের ফ্রেম তেমন টেকসই নয়, বরং খুবই ঠুনকো। সহজেই শিশুর অসাবধানতায় তা ভেঙে যায়। রাবার বা সেলুলাইট-জাতীয় পদার্থের তৈরি ফ্রেম অনেকটা কোমল, আবার তা চাপ দিলেও সহজে ভাঙে না। ধাতব ফ্রেমের রোদচশমাও রয়েছে। একই ফ্রেমে প্লাস্টিক ও ধাতব পদার্থের ব্যবহারও দেখা যায়। তবে ধাতব ফ্রেমও শিশুরা মাধ্যমে ভেঙে ফেলার আশঙ্কা থাকে।
শিশুদের ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের রোদচশমা খুব একটা প্রচলিত নয়। তবে ভালো ব্র্যান্ড হিসেবে রেব্যান ব্র্যান্ডটির খানিকটা প্রচলন রয়েছে।
রংবেরং রোদচশমা
গোলাপি, হলুদ, নীল, আকাশি, লাল, কমলা, সাদা, কালো, সবুজ, বেগুনি আর রুপালি রঙের বাহার দেখা গেল বাজারের রোদচশমায়। কোনো কোনো রোদচশমার ফ্রেমে আছে দুই রঙের ব্যবহার। সবুজের কোনো শেড বা হলুদের সঙ্গে গোলাপি। সবুজ, টিয়া, সাদা বা কালোর সঙ্গে লাল।
নকশায়-আকৃতিতে রোদচশমা
ফ্রেমের দুই পাশে লাগানো বড় ফুলের নকশা। আপেল বা অন্য ফলের আকারের ফ্রেমও রয়েছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে ফুলেল নকশা। কোনোটার আধাআধি ফ্রেম। কোনোটার একটু চওড়া গোল ফ্রেম। কোনোটি দেখতে খানিকটা চতুর্ভুজের মতো কিংবা আদতে একটি বহুভুজ। ডিম্বাকৃতি ফ্রেমও পাবেন। কোনোটি বিড়ালের চোখের মতো, ফ্রেমের বাইরের দিকটাতে আবার কার্টুন বিড়ালের গোঁফের মতো নকশা কাটা। বড় কিংবা ছোট ফ্রেম, চ্যাপ্টা ধাঁচের ফ্রেম—সবই পাবেন বাজারে। কোনো ফ্রেমের পাশটা একটু আঁকাবাঁকা। কোনো কোনোটির দুই পাশের নকশা একটু বিসদৃশ। হয়তো এক পাশ থেকে কার্টুনের দুটি কানের মতো অংশ বের হয়ে আছে কিংবা আছে কোনো একটি কার্টুন। ফ্রেমের ওপরের কোনায় থাকতে পারে ফড়িং কিংবা বো। বোয়ের রং ফ্রেমের মূল রঙের চেয়ে আলাদা। লাল ফ্রেমে হলুদ বো কিংবা নীল ফ্রেমে গোলাপি বো। ছাপা নকশা, ডোরাকাটা ফ্রেম, ফোঁটার মতো নকশা সবই আছে। আরও আছে ছোট ছোট পাথর বসানো কাজ করা রোদচশমা।
কোনোটির শুধু এক কোনায় খানিকটা অংশজুড়ে নকশা। কোনো রোদচশমার ডাঁটিতেও নকশা করা। অনেক রোদচশমা ফ্রেমের সামনের অংশ এক রঙের, ডাঁটি অন্য রঙের। ডাঁটিতে সাদা ও পেস্ট রঙের মিশেলে নকশা করা। কার্টুন, ডলফিন, তারা মাছ এমন নানা মজাদার নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ফ্রেমে।
ভাঁজ করলে পোকার মতো ছোট একটি খেলনা মনে হয়, এ রকম চশমার ডিজাইনটা এমন, যা পরলে নিজের সঙ্গে একটি কার্টুন পোকার কল্পিত চেহারার মিল খুঁজে পাবে শিশু। কিছু আছে পরলে কল্পিত প্রাণীর আকৃতিতে দেখাবে শিশুর মুখখানা। ফুটিয়ে তোলা প্রাণীর ‘কান’টি ভিন্ন রঙের— গোলাপি ফ্রেমে লালচে কান, কিংবা নীল ফ্রেমে হালকা বেগুনি কান।
ফ্রেমের সামনে বাড়তি একটা ছায়াময় শেডের মতো নকশা, যা কপালের সামনের অংশে থাকে। কোনোটার সামনে থেকে কিছুটা আড়াআড়িভাবে উঠে গেছে আলাদা রঙের বাড়তি একটি অংশ। কোনো কোনোটির আবার ক্রিকেটাররা যেমনটা পরেন, তেমন দেখতে।
কোথায় পাবেন
রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের ভিশন এক্সপ্রেস, আই সাইট, নিউ ম্যাজিক ভিশন, হাসান অপটিকস, কার্টিয়ার অপটিকসসহ অন্যান্য চশমার দোকানে পেতে পারেন পছন্দসই রোদচশমা। নিউমার্কেটের বাংলাদেশ অপটিক, বিউটি অপটিক্যালস, অমি অপটিকস, রনি অপটিকসসহ অন্যান্য চশমার দোকানেও খোঁজ করতে পারেন। শিশুর উপযোগী মাপের রোদচশমাটি দেখেশুনে কিনুন। গুণগত মান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
দরদাম
গ্লাস এবং ফ্রেমের মানভেদে রোদচশমা পাবেন ৮০ থেকে ১ হাজার টাকায়। তবে শিশু সহজেই ভেঙে ফেলবে বলে উন্নত মানের রোদচশমা কিনে দেওয়া ভালো। মানসম্মত বলে টিকে যাবে বেশি দিন। শিশুর চোখের জন্য স্বস্তিদায়ক হবে।