জন্মের পরপরই পরিবারের মধ্যমণি হয়ে ওঠে একটি শিশু। তার খাওয়া, ঘুম, পোশাক, জুতা—সবকিছু নিয়েই চলে বাড়তি চিন্তা। গোসলের ব্যাপারটাও তেমনি। শিশুর গোসল, গোসলের আগে তেল মালিশ—এগুলো নিয়েও কিছু ধারণা চালু আছে। তবে কোনটা সঠিক, সেটা জেনে রাখাটা তাই জরুরি। জেনে নেওয়া যাক সঠিক নিয়মে শিশুকে গোসল করানোর নিয়মকানুন।
জন্মের প্রথম ৪৮ ঘণ্টা শিশুকে গোসল করানো যাবে না। এর পর থেকে নিয়মমাফিক গোসল করাতে হবে। নইলে শরীরের ময়লা ও জীবাণু থেকে ছত্রাক সংক্রমণ, খোসপাঁচড়ার মতো সমস্যা হতে পারে, মাথায় খুশকি ও ফুসকুড়িও দেখা দিতে পারে। গোসলের জন্য সবচেয়ে ভালো সময় সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে। শিশুর ঠান্ডা লাগার প্রবণতা থাকলে অনেকে গোসল এড়িয়ে যেতে চান, যা একেবারেই ঠিক নয়। শিশুদের ব্যবহারোপযোগী সাবান-শ্যাম্পু ব্যবহার করুন এক দিন অন্তর। ১২ বছর বয়সের আগে কন্ডিশনার প্রয়োগ করা উচিত নয়। এমন নানা তথ্য দিলেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সারাবন তহুরা।
নবজাতক ও ছোট্ট শিশুর গোসল
নবজাতকের গোসলে চাই বাড়তি সতর্কতা। কেবল নবজাতকই নয়, ঘাড় শক্ত না হওয়া পর্যন্ত সব শিশুর জন্যই কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে—
আবহাওয়া যেমনই হোক, কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করান। কলের পানি একটু গরম করে নিলেই সেটি কিন্তু নিরাপদ পানি হয়ে ওঠে না। বরং চুলায় পানি ফুটে ওঠার পর উচ্চ তাপে আরও ২০ মিনিট রাখলে তবেই পানি নিরাপদ। এই পানি ঠান্ডা হয়ে কুসুম গরম তাপমাত্রায় নেমে এলে শিশুকে গোসল করাতে হবে। এই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। বিকল্প হিসেবে ফোটানো বা ফিল্টারে পরিশোধিত নিরাপদ খাওয়ার পানি ব্যবহার করা যাবে। অল্প পরিমাণ খাওয়ার পানি গরম করে সঙ্গে স্বাভাবিক তাপমাত্রার খাওয়ার পানি মিশিয়ে নিতে পারেন। নিজের কনুই ডুবিয়ে পানির তাপমাত্রা পরীক্ষা করুন। গোসলের পানিতে জীবাণুনাশক দ্রবণ মেশানো যাবে না।
ঠান্ডা হাওয়ায়, উন্মুক্ত স্থানে গোসল করানো যাবে না। পরিষ্কার, উষ্ণ স্থান বেছে নিন। ঘরের ভেতরেই রৌদ্রোজ্জ্বল জানালার পাশে (বাতাস এড়াতে জানালা আটকে) গোসল করাতে পারেন। শীতকালে প্রয়োজনে ঘরে ওয়ার্মার চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে। গোসলের পরও কিছুক্ষণ শিশুকে উষ্ণ স্থানে রাখুন।
যিনি গোসল করাবেন, তাঁর হাতের নখ বড় রাখা যাবে না। গোসল করানোর আগে হাতের অলংকারাদি খুলে রাখতে হবে। হাতের তালু থেকে কনুই পর্যন্ত ও নখের নিচের অংশ ভালোভাবে সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
গোসলের আগে প্রয়োজনীয় সব গুছিয়ে নিন। পানির পাত্র আর তোয়ালে চাই দুটি করে। চাইলে গোসলের আগে বেবি অয়েল মালিশ করতে পারেন মিনিট দুয়েক। শর্ষের তেল এড়িয়ে চলুন। কোনো অবস্থাতেই কাপড় খুলে রোদে শুইয়ে রাখা যাবে না।
সরাসরি সাবান-শ্যাম্পু প্রয়োগ করা যাবে না। নিজের হাতে ফেনা তুলে নিন, সেই ফেনা প্রয়োগ করুন শিশুকে পরিষ্কার করতে।
একবারে সব কাপড় খুলে দেওয়া যাবে না। প্রথমে মুখ ও মাথা বাদে বাকি শরীরের পালা। কাপড়ে সাবানের ফেনা নিয়ে শরীরের সব ভাঁজে ভাঁজে আলতো করে ঘষে দিন, এরপর হাত-পা ও অন্যান্য অংশ। এবার পানি ঢেলে তোয়ালে দিয়ে মুড়িয়ে মুখ ও মাথায় দিন আপনার হাতে করা ফেনা। এই অংশ ধুয়ে নিয়ে শিশুর মাথা ও শরীর আলতোভাবে চেপে চেপে মুছে ফেলুন। পুরো কাজ সারতে হবে ৫-১০ মিনিটেই।
শিশু একটু বড় হলে
শিশুর ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়ার পরও ঈষদুষ্ণ পানি দিয়ে গোসল করানো ভালো, যেকোনো আবহাওয়াতেই, প্রতিদিন। তবে তিন বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের শীতের সময় এক দিন অন্তর গোসল করানো যায়, এর চেয়ে বেশি বয়সী শিশুদের শীতের সময় রোজ গোসল করানো যাবে। তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত শিশুরা গোসলের পানি খেয়ে ফেলতে পারে, তাই তাদের মাথা ও মুখের জন্য ব্যবহারের পানিটা হতে হবে নবজাতকের গোসলের পানির মতোই। শাওয়ার ব্যবহার না করাই ভালো। তবে তাদের শরীরে কলের পানি একটু গরম করে দিলেই চলবে। চুল খুব ঘন হলে হেয়ার ড্রায়ারের মৃদু হাওয়া দিয়ে চুল শুকিয়ে নিন।