শহরের জীবন মানেই ব্যস্ততার ঠাসবুনট। দিন শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা নানা পরিচয়ে মানুষ ছোটেন যাঁর যাঁর কর্মস্থলে। আর কর্মস্থল মানেই বিভিন্ন জেনারেশনের নানা বয়সীদের উপস্থিতি। লক্ষণীয় বিষয়, জেন জেডদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে এখন অফিসপাড়ায়। এরই ধারাবাহিকতায় কর্মক্ষেত্রের পোশাকে এসেছে পরিবর্তন। পাশাপাশি করোনার প্রভাব তো আছেই।
একসময় কর্মক্ষেত্রে প্রতিদিনের পোশাক বলতেই বোঝানো হতো ফরমাল আউটফিট। সেখান থেকে সেমিফরমাল, এরপর স্মার্ট ক্যাজুয়াল এবং ক্যাজুয়াল, এখন কমফোর্ট ক্যাজুয়ালের সময়। যদিও জেনারেশন ভেদে স্টাইল এবং লুকে রয়েছে নানা পরিবর্তন। তবে ক্ষেত্রবিশেষে এখনো ফরমাল বেছে নিতে হয় কোনো কোনো অফিসে। তবে কয়েক বছর ধরের ক্যাজুয়ালের চাহিদাই বেশি এবং ক্যাজুয়াল পোশাকই থাকে সবার পছন্দের শীর্ষে।
আর কমফোর্টের জন্যই ক্যাজুয়াল পোশাক প্রাধান্য পেয়েছে। এর আরও একটি কারণ হচ্ছে, ফরমাল লুক একঘেয়ে ও বৈচিত্র্যহীন। ক্যাজুয়াল পোশাক যতটা আরামদায়ক, ফরমাল পোশাক ততটা নয়। কর্মস্থলে বা অফিস টাইমের বাইরের কোনো অনুষ্ঠান বা আড্ডায় নিজেকে ভিন্ন লুকে উপস্থাপন করতে চাইলে ক্যাজুয়াল পোশাকই যেন একমাত্র ভরসা। স্টাইলিস্টদের মতেও ক্যাজুয়াল মানেই ভ্যারিয়েশন এবং যেকোনো ঋতুতে সারা দিন কাজের মধ্যে স্বস্তিতে থাকাটা জরুরি।
এতে মন থাকে প্রফুল্ল। যার প্রতিফলন দেখা যায় কাজের মধ্যেও। প্রতিদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে নিজেকে প্রাণবন্ত রাখাতে বেছে নেওয়া যেতে পারে কমফোর্ট ক্যাজুয়াল অফিস আউটফিট। কর্মব্যস্ততার মধ্যেও এ ধরনের পোশাক আপনাকে রাখবে সুন্দর ও পরিপাটি। আর ফ্যাশন সচেতন তকমাটিও থাকবে আপনার দখলে। অন্যদিকে চিন্তা করলে, এই গরমে নিজের স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরির আগে চিন্তা করতে হবে কোন পোশাকটি বেশি আরামদায়ক।
পাশাপাশি অফিসের কাজের ধরন এবং অফিস শেষে নিজের ব্যস্ততার বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। অর্থাৎ, স্বস্তি ও আরামের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে সবার আগে। তারপর স্টাইলিং। অনেক অফিসেই পোশাকের কিছু ধরাবাঁধা নিয়ম রয়েছে। যেমন শার্ট, টাই এবং ট্রাউজারের ফরমাল লুকেই থাকতে হবে। তবে বর্তমানে অধিকাংশ অফিসে ছেলেদের জিনস, কলার ছাড়া শার্ট, ঢিলেঢালা কটন ট্রাউজার, পলো টি-শার্ট, ব্লেজার এবং সঙ্গে টি-শার্ট পরা যায়। আবার মেয়েদের ক্যাজুয়াল পোশাকে দেখা যায় শার্ট, লং শার্ট, কুর্তি, লং টপস, টিউনিক, ভিন্ন প্যাটার্নের ব্লেজার, ফুল টপস ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়।
অফিস পার্টি বা আফটার অফিস পার্টিতেও ক্যাজুয়াল পোশাকে নিজেকে উপস্থাপন করা যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন লুকে। যেমন হালকা নকশার লিনেন বা সিল্কের ডিজাইন কুর্তির সঙ্গে মিলিয়ে পরা যেতে পারে প্যান্ট। পার্টির আগে সঙ্গে জুড়ে দিতে পারেন অল্প কিছু অ্যাক্সেসরিজ। যেমন ট্রেন্ড অনুযায়ী স্টেটমেন্ট জুয়েলারি মানাবে বেশ। অথবা লুক অনুযায়ী ভিন্ন ডিজাইনের গয়নাও বেছে নিতে পারেন। এতে লুক মুহূর্তেই পাল্টে যাবে। এ ধরনের লুক অফিস পার্টি বা আফটার অফিস পার্টিতে মোটেও বেমানান নয়।
কুর্তি, টপস ও সালোয়ার-কামিজও হতে পারে কমফোর্ট ক্যাজুয়াল অফিস আউটফিটের অংশ। হাতার প্যাটার্নে কুঁচি, ফ্লেয়ারড ভিন্নতার সঙ্গে এনে দেয় কমফোর্ট। কামিজ অথবা টপস কুর্তিতে কুঁচি, ফ্লেয়ারড, ফ্লাওয়ার ডিজাইন, অ্যাসিমেট্রিক ডিজাইন, কাপ্তান ডিজাইনও থাকতে পারে। এমন ডিজাইন ভ্যারিয়েশন স্টাইলেও এনে দেবে স্বস্তি ও স্নিগ্ধতা। গরমের প্রশান্তির জন্য বেছে নিতে পারেন যেকোনো হালকা রং। প্যান্টের ডিজাইনেও বৈচিত্র্য থাকতে পারে। যেমন প্যান্টের হেমে ব্যবহার করা যেতে পারে পম পম, টাসেল বা নানান ডিজাইনের লেস। কুঁচি দিয়েও তৈরি করা যেতে পারে প্যান্ট।
পোশাকগুলো পরতে যেমন আরামদায়ক, তেমনি ফ্যাশনেবলও বটে। অফিসের জন্য একদমই হালকা ধরনের গয়না বেছে নেওয়া উচিত। অনেক অফিসে আজকাল সপ্তাহের যেকোনো এক বা দুই দিন ক্যাজুয়াল ডে ঘোষণা করা থাকে। এমন হলে সে সময় বেছে নিতে পারেন স্ট্রিট স্টাইলের ক্যাজুয়াল পোশাক। ছেলেরা টি-শার্ট, জিনস, জার্সি, স্নিকারস, কনর্ভাস, কেডস পরতে পারেন। আর মেয়েরা ডিজাইনারস টপস, ওভারসাইজ শার্ট, ওভেন স্কার্ট, ওয়াইড লেগ প্যান্ট এবং এমনকি শাড়িও রাখতে পারেন পছন্দের তালিকায়। আর মনে রাখতে হবে, স্ট্রিট স্টাইলের ক্যাজুয়াল পোশাকে রঙের মধ্যেও কোনো সীমাবদ্ধতা নেই। কারণ, ক্যাজুয়াল মানেই কমফোর্ট।