১০ মিনিট পর দেখি ১০০০ লাইক!
মারগ্রেট চোলার বয়স কত হবে কে জানে! জন্মসনদ হারিয়ে গেছে জাম্বিয়া স্বাধীন হওয়ারও আগে। কেউ বলে ‘৮০ পার হয়ে গেছে কবে।’ মারগ্রেট সম্মতি জানিয়ে বলেন, ৯০–এর আশপাশে আছেন তিনি। অশীতিপর থুড়থুড়ে এই দাদিই দেখিয়ে দিলেন, স্টাইলিশভাবে নিজেকে তুলে ধরার জন্য বয়স কেবলই একটা সংখ্যা! ইন্টারনেটের কল্যাণে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের দেশ জাম্বিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বৃদ্ধা মারগ্রেট চোলা হয়ে উঠেছেন ফ্যাশন আইকন, ইন্টারনেট সেনসেশন, ‘গ্র্যান্ডমা অব দ্য ইয়ার’ আর লেজেন্ডারি ‘গ্ল্যামমা’!
ইনস্টাগ্রামে ২ লাখ ২৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে মারগ্রেট চোলার ভক্তসংখ্যা। মারগ্রেটের রঙিন রঙিন ছবির নিচে জড়ো হয় হাজারো ভালোবাসা চিহ্ন। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা অনলাইনে মারগ্রেটের নতুন ছবির জন্য মুখিয়ে থাকে।
আধুনিক সব স্টাইলিশ পোশাকে আর স্টাইলে জাম্বিয়ার সংস্কৃতিকে তুলে ধরেন মারগ্রেট। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নতুন নতুন পোশাকে নতুন লুকে নিজেকে দেখলে মনে হয়, আমি বেঁচে আছি। আর মনে হয়, আমি বিশ্ব জয় করতে পারব। এটা এমন এক অনুভূতি, যার সঙ্গে কোনো কিছুর তুলনা হয় না।’
মারগ্রেটকে এভাবে নতুন নতুন লুকে তুলে ধরার উদ্যোগ নেন তাঁর নাতনি ডায়ানা কুম্বা। ২০২৩ সাল থেকে ডায়ানাই ইনস্টাগ্রামে শুরু করেন ‘দ্য ফোর্টনাইটলি গ্র্যানি সিরিজ’। ডায়ানা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্টাইলিস্ট হিসেবে কাজ করেন। বাবার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকীতে সেবার জাম্বিয়া গিয়েছিলেন তিনি। সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন বেশ কিছু নতুন পোশাক। ডায়ানা হঠাৎ খেয়ালের বশে দাদিকে বলছিলেন, ‘তোমাকে জামাগুলো পরিয়ে সাজিয়ে দেখি কেমন লাগে?’ দাদিও সম্মতি দেন। ছবি তোলা হয়। মূলত, এভাবেই শুরু। মারগ্রেটের হাতে তখন কোনো কাজ ছিল না। তাই বলেছিলেন, ‘সাজাও। আমি তো মরেই যাব। এই ছবিগুলো দেখেই তুমি আমাকে মনে করবে।’
প্রথমবার মোবাইলের ক্যামেরায় ছবিগুলো তোলা হয়েছিল জাম্বিয়ার রাজধানী লুসাকা থেকে ১০ মাইল দূরের একটি গ্রামে, খামারে।
ডায়ানা বলেন, ‘ছবিগুলো দেখে আমি অবাক হয়ে যাই। দাদিকে খুবই স্টাইলিশ দেখাচ্ছিল। উনি আসলে খুবই ফটোজেনিক। আর হাইফ্যাশনে সুন্দরভাবে নিজেকে ক্যারি করছিলেন।’
ডায়ানা আরও বলেন, ‘প্রথমবার ছবিগুলো পোস্ট করার ব্যাপারে আমি খুবই নার্ভাস ছিলাম। ১০ মিনিট ফোন উল্টে রেখে দিয়েছিলাম। ১০ মিনিট পর দেখি ১০০০ লাইক! সবাই আরও ছবি চাইছিল।’
মারগ্রেট বলেন, ‘সারা বিশ্বের মানুষ নাকি আমাকে ভালোবাসে। আমার একটা ছবির জন্য মুখিয়ে থাকে। আমি নাকি দেখতে দারুণ সুন্দরী। জীবনের প্রথম শুনলাম যে আমি দেখতে ভালো। এর আগে কেউ কখনো বলেনি। হয়তো এ জন্যই এত দিন বেঁচে আছি!’
মারগ্রেটের ছেলেবেলা ভীষণ অর্থনৈতিক দুর্দশার ভেতর কেটেছে। ১২ থেকে ১৩ বছর বয়সেই স্কুল থেকে ঝরে পড়েন। বিবাহিত জীবনও সুখে কাটেনি। তিন সন্তানের মা হওয়ার পর শ্বশুরবাড়ি থেকে পালিয়ে যান। জীবনের প্রায় পুরোটা সময়ই ছিল সংগ্রামমুখর।
প্রথমবার জিনস আর উইগ পরার অনুভূতি জানিয়ে বলেন, ‘থুড়থুড়ে বুড়ি হলে কী হবে, ভেতরে-ভেতরে আমি নাচছিলাম। আমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছিল।’
মারগ্রেটের ছবিতে থাকে উজ্জ্বল রং, বোল্ড সানগ্লাস, অতিরিক্ত বড় আকারের হ্যাট, ব্লন্ড উইগ, ভারী নেকলেস, ব্রেসলেট, পেনডেন্ট, গ্লাভস, মুকুট, একটা লেদারের সোফা বা কাঠের চেয়ার ইত্যাদি। মারগ্রেট বলেন, ‘আমি আগে থেকেই সুন্দর পোশাক পরতে বা সুন্দরভাবে সেজেগুজে থাকতে ভালোবাসতাম। মুক্তার গয়না আমি খুব পছন্দ করি। তবে এভাবে যে মানুষের ভালোবাসা পাব, লোকে আমাকে দেখে ছবি তুলতে আসবে, কোনো দিন ভাবিনি।’
২০২৪ সালের এপ্রিলে গ্র্যানি সিরিজের লাল অ্যাডিডাসের পোশাক, চাঙ্কি গোল্ডেন নেকলেসে দাদির ছবি রীতিমতো ঝড় তোলে অন্তর্জালের দুনিয়ায়। মূলত এর পর থেকেই তারকা বনে যান এই দাদি।
সূত্র: বিবিসি