২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

সোবিয়া বললেন, সামনে আরও বড় খবর আছে

বাংলাদেশের মডেলিংকে যাঁরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে গেছেন, ছোট্ট সেই তালিকার নতুন সংযোজন সোবিয়া আমিন। বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনের ইতালীয় আর ভারতীয় সংস্করণে আগেই তাঁকে নিয়ে ফিচার হয়েছে। এরপর দেশি-বিদেশি অনেক ব্র্যান্ড আর ক্যাম্পেইনে কাজ করেছেন। সম্প্রতি নামকরা বলিউড তারকাদের পেছনে ফেলে হারপার’স বাজারের প্রচ্ছদে দেখা দিয়েছেন ঢাকার এই স্থপতি, মডেল। তরুণ এই ফ্যাশন ইনফ্লুয়েন্সারের সঙ্গে কথা বললেন জিনাত শারমিন

আপনি তো এমন একজন স্থপতি, যে কিনা কেক বানায়, অনলাইনে বিক্রিও করে। সেখান থেকে মডেলিংয়ে আসা কীভাবে?

অ্যাক্সিডেন্টালি। কোনো পরিকল্পনা ছিল না। ছয় বছর অস্ট্রেলিয়া ছিলাম। ২০১৬–তে দেশে ফিরে আসি। বাইরে থাকাকালীন আমি মাত্র দুই দিন শাড়ি পরেছি। দেশে ফিরে যখন অফিস করা শুরু করলাম, প্রতিদিন শাড়ি পরতাম। আর সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে আপলোড করতাম। সেসব ছবি দেখে দেশী অনেক ব্র্যান্ড শাড়ি পাঠানো শুরু করল। আমি সেগুলো পরে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করতে থাকি। আর আমার ফলোয়ারও বাড়তে থাকে।

হারপার’স বাজারের প্রচ্ছদে সোবিয়া আমিন
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

এখন আর কেক বানান না?

সময় পাই না। আর এখন অবশ্য কেক বানানোর সিজনও না। বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে কেক ফুলতে চায় না!

আপনার কেক কীভাবে জনপ্রিয় হলো?

বাংলাদেশে আমার তেমন পরিচিত, বন্ধুবান্ধব ছিল না। অফিস থেকে ফিরে এসে কেক বানাতাম। যেখানে যেতাম, কেক নিয়ে হাজির হতাম। তখন সবাই খেয়ে বলত, মজা, তুমি সেল করো না কেন? ভাবলাম, তাই তো। তখন যারা অর্ডার করত, পেত। প্রথম দিকে ডিজাইন তেমন ভালো হতো না। আস্তে আস্তে ডিজাইন সুন্দর হলো। আর ওদিকে মডেলিংয়ে ব্যস্ততা বাড়তে শুরু করল।

মাসাবা গুপ্তের পোশাকে সোবিয়া আমিন
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

মাসাবা গুপ্তার সঙ্গে কীভাবে পরিচয়?

ছোটবেলায় জন্মদিনে একবার হাউস অব মাসাবার একটা শাড়ি উপহার পেয়েছিলাম। এরপর গুগল করে মাসাবার সম্পর্কে জানি। এর পর থেকে তাঁকে সব সময় ফলো করতাম, পছন্দ করতাম। তিনি সেলফ মেড একজন ব্যক্তিত্ব, নিজে হাতে একটা ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেছেন। তখনো আমার মতো কাউকে মডেল হিসেবে দেখিনি। তাঁর ব্র্যান্ডেই প্রথম দেখলাম, ‘শুকনা, ফর্সা, লম্বা’ ছাড়াও সব রকম মডেল। লকডাউনে আমার বড় বোনের বিয়ে হলো। বিয়েতে আমি মাসাবা পরেছিলাম। সেই ছবি ইনস্টাগ্রামে দেওয়ার পর হাউস অব মাসাবার পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। বলা হলো, ওরা কাপড় পাঠালে আমি পরে ছবি তুলে পাঠাতে পারব কি না। আমার রাজি না হওয়ার কোনো কারণ নেই। মাসাবার ফটোশুটটা রীতিমতো ভাইরাল! এরপর আমি একে একে বহু ভারতীয় ফ্যাশন আর বিউটি ব্র্যান্ড ও ক্যাম্পেইনিংয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাই।

কো-অর্ডস পছন্দের পোশাক
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

মাসাবার সঙ্গে দেখা হলে কি ‘ফ্যান গার্ল মোমেন্ট’ তৈরি হলো?

ও রকম নয়। এমনিতেই স্বাভাবিক কথোপকথন। আমি জানালাম যে আমি তাঁর কাজ কত পছন্দ করি। তিনি কেবল আমার নন, বহু নারীর আইডল। তাঁর মা নীনা গুপ্তা বলিউডের সফল অভিনেত্রী হওয়ার পাশাপাশি ফ্যাশন আইকনও। নীনা গুপ্তার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলেন বাংলাদেশি। তিনি নীনা গুপ্তাকে কিছু গিফট পাঠিয়েছিলেন। আমার আম্মু তখন এয়ারলাইনসে চাকরি করত। আম্মু নীনা গুপ্তাকে সেই উপহার পৌঁছে দিয়েছিল। সেই সময় আম্মু আর নীনা গুপ্তা অনেক গল্প করেছিলেন। আমি তখন অনেক ছোট। মাসাবাকে আমি সেই গল্প বলেছিলাম, ‘দেখ, জীবন একটা সার্কেল।’ এখন আমি আর তুমি গল্প করছি।

ভারতে কোন কোন ব্র্যান্ডের সঙ্গে কাজ করা হলো?

লিটল থিংস স্টুডিও, টার্ন ব্ল্যাক, মুক্তা, পাপা ডোন্ট প্রিচ, লাইভ লিনেন থেকে শুরু করে ক্যাটরিনা কাইফের বিউটি কোম্পানি কে বাই ক্যাটরিনা, নাইকা, টিয়ারা বিউটি। অনেক কাজ হয়েছে।

আন্তজার্তিক অঙ্গনে এখন পরিচিত নাম সোবিয়া আমিন
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

এভাবেই কি ভোগ ইন্ডিয়ার সঙ্গে যুক্ত হওয়া?

হ্যাঁ। ওরা তো সব ফলো করে। মোটামুটি ভালো কাজ করছে, এ রকম প্রতিটা মডেলের প্রোফাইল থাকে ওদের কাছে। ভোগ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেই কিন্তু আমাকে মেইল করা হয়। আমি তখন ভারতেই ছিলাম। ওই শুটটার সব কিছু আমি-ই ব্যবস্থা করি। রাহুল মিশ্র, র ম্যাংগো, ওলিও স্টুডিও থেকে শুরু করে যেসব ব্র্যান্ডের কাছে যে শাড়ি-গয়না চেয়েছি, সবই পেয়েছি।

হারপার’স বাজার ইন্ডিয়াও কি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে?

আমি আসলে যাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই, তাদের আমার বলতে কোনো অসুবিধা নেই যে আমি তাদের ব্র্যান্ড পছন্দ করি আর তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই। এভাবেই আমি হারপার’স বাজার ইন্ডিয়ার সাবেক এডিটরকে টেক্সট করি। আমি একটা ফিচার চেয়েছিলাম। তিনি আমার মেসেজ সিনও করেননি। সম্প্রতি রাসনা ভাসিন সেখানকার এডিটর হিসেবে জয়েন করেন। আমার ভিসা আছে কি না, জানতে চেয়ে তিনি আমাকে টেক্সট করেছিলেন। আমি বলেছিলাম, হ্যাঁ, আছে। তিনি আমাকে খুব অল্প সময়ের নোটিশে মুম্বাই যেতে বলেন। আমি তাঁর কথায় ভরসা করে চলে যাই। যাওয়ার পর তিনি বললেন, আমি ‘কাভার গার্ল’। আমি প্রথমে ভেবেছি, মজা করছে! পরে জেনেছি, আমার সঙ্গে একাধিক বলিউড তারকারা শর্টিলিস্টেড ছিল এবারের কাভারের জন্য। শেষমেশ, তিনি ও তাঁর টিম আমাকেই চূড়ান্ত করেন। আমি এখন হারপার’স বাজার ইন্ডিয়ার প্রচ্ছদে, অথচ আমি কেবল একটা ফিচার চেয়েছিলাম।

মন খারাপ হলে পেশাদারের সাহায্য নেন সোবিয়া আমিন
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া
হারপার’স বাজার ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে প্রকাশিত ছবি
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

এবারই প্রথম বলিউডের নামকরা মডেল ফটোগ্রাফার রোহান শ্রেষ্ঠার ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানো, তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা কেমন?

রোহানের সঙ্গে কাজ করা খুবই স্বাচ্ছন্দ্যের। ও খুবই পেশাদার। মডেলকে সর্বোচ্চ কমফোর্ট দিতে চেষ্টা করে। ও নিশ্চিত করে যে ফটোশুটের রুমে সবচেয়ে কমসংখ্যক মানুষ আছে। যাদের না হলেই না, কেবল তাদের অ্যালাউ করে। এ ছাড়া স্টাইলিস্ট জাহ্নবী বানসালের সঙ্গেও আমি এই প্রথম কাজ করলাম। ও আমাকে আমার কমফোর্ট জোনের বাইরে নিয়ে, আমাকে সচরাচর যেভাবে দেখা যায় না, সেভাবে উপস্থাপন করেছে। এই এক্সপেরিমেন্টটা আমাকে আরও সাহসী আর স্বচ্ছন্দ্য করেছে। এই শুটটা নিয়ে আমাকে মোটেও ভাবতে হয়নি। আমাকে শুটের মাত্র সপ্তাহ আগে জানানো হয়েছিল। কাপড়, জুয়েলারি সবকিছুতেই অনেক বৈচিত্র্য ছিল।

নিজের কমফোর্ট জোনের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন সোবিয়া আমিন
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

আপনার পোস্টের নিচে ভারতের অনেক সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের অভিনন্দনবার্তা চোখে পড়ল। তাঁদের ভেতর আপনার প্রিয় বন্ধু কে?

তাঁদের সঙ্গে আমার অনেক শুটে বা পার্টিতে দেখা, পরিচয়, বন্ধুত্ব। কোমল পান্ডে, ডলি সিং, সিদ্ধার্থ বাত্রা, সৃষ্টি, সীমা আনন্দ—তাঁদের সবার সঙ্গে জানাশোনা আছে। আমার সঙ্গে যখন সীমা আনন্দের দেখা হয়, তখন আমি তাঁকে বলেছিলাম যে আমি যখন অস্ট্রেলিয়াতে ছিলাম, তখন চাঁদের ঘূর্ণনের সঙ্গে নারীর শরীরের পরিবর্তন নিয়ে তাঁর টেড টক শুনে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সৃষ্টিও আমার ভালো বন্ধু। আর সিদ্ধার্থ বাত্রা অত্যন্ত জেন্টালম্যান আর মিশুক। ওর সঙ্গে আমার লম্বা কথোপকথন হয়েছে। সবার সঙ্গেই কম-বেশি শুটের অভিজ্ঞতা আছে।

আপনি পেশাদার স্থপতি আর মডেল। এই দুটো ব্যালান্স করেন কীভাবে?

এইটা খুবই সহজ। আমি তো মডেলিংয়ের আগে থেকেই পেশাগত কাজে ভারতের দিল্লি, মুম্বাই যেতাম। তখন আমার বেশি সময় কাটত স্থপতিদের সঙ্গে। আসলে স্থপতিরা ঘুরে বেড়ান। আমি তাঁদের ওখানে গিয়ে দেখি, তাঁরা অন্য কোথাও ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এখন যখন ভারতে যাই, দুই কাজই করে ফেলি। শুটিংয়ে গেলে স্থাপত্যবিষয়ক মিটিং সেরে আসি। আবার পেশাগত কোনো কাজে গেলে শুটও করে আসি, এ রকম। তবে আমার মনে হয়, মুম্বাইয়ের স্থপতিদের চেয়ে ঢাকার স্থপতিরা বেশি ভালো কাজ করেন। মুম্বাইয়ের বাড়ি বা অফিসগুলো কিন্তু অত সুন্দর না, এমনকি বলিউড তারকাদের বাড়িগুলোও খুব শৈল্পিক, দৃষ্টিনন্দন নয়। বরং দক্ষিণ ভারতে গেলে সুন্দর সুন্দর ঘরবাড়ি, স্থাপনা দেখা যায়।

ওনার সংগ্রহে আছে শ তিনেক শাড়ি
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

আপনার ওয়ার্ডরোবে সবচেয়ে বেশি দাপট কোন পোশাকের?

অবশ্যই শাড়ির।

আনুমানিক কতগুলো শাড়ি আছে?

এইটা বলাটা বাড়াবাড়ি হবে। এই ধরুন, শ তিনেক। এর ভেতর অনেকগুলো আম্মুর কাছ থেকে নেওয়া আর উপহার পাওয়া। অবশ্য এখন একটা নতুন শাড়ি কিনলে বা উপহার পেলে অন্য একটা শাড়ি কাউকে না কাউকে দিয়ে দিই। তাই সংখ্যাটা আর বাড়ছে না।

আপনার পছন্দের ‘গো টু ওয়্যার’ কী?

কো-অর্ডস।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয়তার আরেকটা দিক হলো, অনেক নেতিবাচক মন্তব্যও এসে জড়ো হয় দেয়ালে। সেগুলো কি আপনি পড়েন? আপনাকে আহত করে?

আমি সব পড়ি। আমার কিছু মনে হয় না। কেন আমি এসব কথা মনে নিয়ে কষ্ট পাব? যাঁরা আমাকে চেনেন না, জানেন না, কোনো দিন দেখা হয়নি, কথা হয়নি, অযথাই আজেবাজে কথা বলে নিজের ফ্রাস্টেশন মেটাচ্ছেন। আমাকে রাবা খানের ভাই ফাহাদ আগেই সতর্ক করে বলেছিল, পাবলিক ফিগারদের চামড়া মোটা হতে হয়। নাহলে টিকে থাকা মুশকিল। এসব উটকো মন্তব্য গায়ে লাগানোর কোনো কারণই দেখি না।

সামনে আরও বড় কাজ করছেন সোবিয়া আমিন
ছবি: সোবিয়া আমিনের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট থেকে নেওয়া

আপনার যখন মন খারাপ হয়, বিষণ্ন লাগে, কী করেন?

আমি পেশাদার সাহায্য নিই। আমার বাড়িতে পুল নেই, তবে আমি তো এখন অনেকটা সময় দেশের বাইরে কাটাই। হোটেলই আমার ঘরবাড়ি হয়ে গেছে। ভোরবেলা উঠে সুইমিংপুলে সাঁতার কাটি। তারপর দিনটা শুরু করি। এটা খুবই কাজে দেয়।

সাঁতার নাকি সবচেয়ে ভালো ব্যায়াম। শরীরের সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য ভালো...

সবচেয়ে বড় কথা হলো, মাথার জন্য ভালো। মাথাটা ঠান্ডা রাখে। সারা দিনের চাপ সুন্দরভাবে সামাল দেওয়ার জন্য প্রস্তুত করে দেয়।

এরপর কী

এরপর হয়তো আরও বড় খবর আছে। মোর ইন্টারন্যাশনাল...লিখিত চুক্তি অনুসারে বিষয়টা নিয়ে এই মুহূর্তে এর বেশি কথা বলতে পারছি না।