মস্কোতে শুরু হলো ফ্যাশনের জমজমাট আয়োজন
মস্কোতে এই মৌসুমের প্রথম বরফ পড়ল ২৬ নভেম্বর। কনকনে ঠান্ডার মধ্যে ২৮ নভেম্বর শুরু হলো প্রথম ব্রিকস+ফ্যাশন সামিট। ব্রিকসের ৫ সদস্যদেশ ছাড়াও ৫৫টি দেশ থেকে এখানে অংশগ্রহণ করছেন ডিজাইনার, বক্তা, পেশাজীবীরা। আগামী ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন।
ফ্যাশন নিয়েও তাহলে এমন গুরুগম্ভীর আলোচনা হতে পারে, ঘণ্টার পর ঘণ্টা বক্তাদের মুখে ফ্যাশনের নানা সম্ভাবনা ও সমস্যার কথা শুনতে শুনতে এ কথাই মনে হচ্ছিল। ফ্যাশন শব্দটি এখন আর শুধু পোশাকের মধ্যেই আটকে নেই। ফ্যাশনের গুরুত্ব ও গভীরতা খুঁজতেই যেন আয়োজনটিতে এক হয়েছেন পেশাদার, বিশেষজ্ঞ, ব্লগার, প্রশিক্ষক ও উদীয়মান ফ্যাশন ডিজাইনাররা। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ব্রিকস অঞ্চলের ফ্যাশনের একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে চান আয়োজকেরা। প্যারিস, মিলান, লন্ডন, নিউইয়র্ক ফ্যাশন শোর মতো রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ফ্যাশন শো–ও যেন বিশ্বে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এ বিষয়ও আয়োজকদের ভাবনাতে কাজ করছে।
এ আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন ৬০টি দেশ থেকে ২৫০ প্রতিনিধি। মস্কোর জারইয়াডাই পার্কে আয়োজিত এ ফ্যাশন সামিটে একসঙ্গে চলছে নানা কিছু। দুই শতাধিক বক্তা পাঁচ দিন ধরে ফ্যাশন–সম্পর্কিত নানা আলোচনায় অংশ নেবেন। থাকছে ফ্যাশন শো। প্রথম দিনের আয়োজনে আর্জেন্টিনার ব্র্যান্ড সাডেলস তুলে ধরে পোশাকের সংগ্রহ। রানওয়ের বাইরের আবহাওয়া ঠিক সেই সময় মাইনাস ৪ ডিগ্রি হলেও ব্র্যান্ডটির ডিজাইনার হুয়ান হারনানডে ডেয়েলস মঞ্চের চারপাশ উষ্ণ করে রাখেন ২০২৪ সালের জন্য তৈরি গ্রীষ্মকালীন পোশাক উপস্থাপন করে। ৫ দিনে ১২টি দেশের ফ্যাশন ডিজাইনাররা ফ্যাশন মঞ্চে তাঁদের সৃজনশীলতা তুলে ধরবেন।
মজার বিষয় হলো, এত বড় অনুষ্ঠানের একটি বড় অংশ গাড়ি পার্ক করার জায়গায় আয়োজন করা হয়েছে। রানওয়ের পাশের রুমেই চলছিল বি টু বি রুমের কার্যক্রম। ১৩০–এর বেশি ব্র্যান্ড ও ডিজাইনার যেন ক্রেতাদের সঙ্গে পাকাপোক্তভাবে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, এখানে সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রথম দিনেই বিভিন্ন দেশের ডিজাইনার ও ব্র্যান্ডগুলো তাদের পোশাক ও আনুষঙ্গিক সংগ্রহগুলো দর্শকের কাছে উপস্থাপন করেছে। এতে করে ডিজাইনার ও ব্র্যান্ডগুলো তাদের সৃজনশীল কাজ তুলে ধরার পাশাপাশি তৈরি করতে পারছে নতুন নেটওয়ার্ক। আয়োজকদের আশা, এতে করে ভবিষ্যতে বিভিন্ন দেশে এসব ব্র্যান্ড এবং ডিজাইনারের পোশাক কেনাবেচার একটি সম্ভাবনাও তৈরি হবে। চীন, ভারত, রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শতাধিক ক্রেতা এ আয়োজনে অংশ নিতে আবেদন করেছিলেন। শোরুমে প্রদর্শিত হচ্ছে আর্জেন্টিনা, রাশিয়া, ভারত, নাইজেরিয়া, মিসর, তুরস্ক, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ নানা দেশের ব্র্যান্ডের পণ্য।
আন্তর্জাতিক ফ্যাশন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পুরস্কার পেয়েছে, এমন কয়েকটি শর্টফিল্ম দেখানোর পরিকল্পনাও আয়োজকদের রয়েছে। এক দিন দক্ষিণ আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শর্টফিল্ম দেখানো হবে। এ আয়োজনে ফ্যাশনবিষয়ক বিভিন্ন কোর্সের ওপরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আগ্রহী ব্যক্তিদের সঙ্গে নিজেদের দক্ষতা ভাগাভাগি করে নেবেন ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির বিভিন্ন অধ্যাপক ও গুরু। অংশগ্রহণকারীরা আশা করছেন, এমন আয়োজন প্রতিবছরই করা হবে। এতে করে বিভিন্ন দেশের ফ্যাশনের মধ্যেও তৈরি হবে সামাজিক সেতুবন্ধ। এ সম্মেলন বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি তুলে ধরার মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী ফ্যাশনের ভবিষ্যৎকে নতুন আকারও দেবে বলে আশা করছেন উপস্থিত বক্তা ও ডিজাইনাররা।