২০২৪ সালে দেখা যাবে যে ধরনের সাজপোশাক

২০২৪ সালে দেখা যাবে নানা ধারা। পোশাকের কাটছাঁটে যোগ–বিয়োগ হবে নানা নকশার। সাজেও থাকবে নতুন অনেক কিছু।

টেলর কাটের পোশাক, মাথায় মোটা ব্যান্ড, পোশাকে আরামদায়ক উপকরণ—এসবই থাকবে ২০২৪ সালের ধারায়।মডেল: ঐশী, পোশাক: রিফাত রহমান, সাজ: পারসোনা, ছবি: কবির হোসেন

নতুন বছরে স্বাগত। ২০২৪ সালের ধারা নিয়ে গত ডিসেম্বর মাস থেকেই আন্তর্জাতিক লাইফস্টাইল-ভিত্তিক ম্যাগাজিনগুলোয় লেখালেখি শুরু হয়ে গেছে। একেক দেশের সংস্কৃতি অনুযায়ী ধারাতেও দেখা যাচ্ছে কিছুটা ভিন্নতা। তবে সাধারণত প্যারিস, মিলান, নিউইয়র্ক আর লন্ডনের র‍্যাম্পের সাজপোশাকে যা তুলে ধরা হয়, সেটাই বছরজুড়ে নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়।

মেটালিক ধাঁচের পোশাক, চুলের হালকা বাঁধন জনপ্রিয়তা পাবে ২০২৪ সালে
পোশাক: ক্লাবহাউস

সাজপোশাকে কোনো নির্দিষ্ট একটি ধারা অনুসরণ করা হয় না; বরং বয়স অনুযায়ী পাশাপাশি চলতে থাকে অনেক স্টাইল, নকশা ও রং। সেখান থেকেই স্টাইলিশ মানুষেরা বেছে নেন পছন্দের কিছু অনুষঙ্গ অথবা এসবের বাইরে তৈরি করেন একদম নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট।

পশ্চিমে কী হাওয়া

কয়েক বছর ধরে আবহাওয়ায় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে বেশি। পুরো বিশ্বেই ডিজাইনাররা তাই এমন উপকরণ বেছে নিতে চাইছেন, যেন পোশাকের ভেতর দিয়ে সহজে বাতাস চলাচল করতে পারে। কোমরের ওপরে প্যান্ট পরার চল থাকবে। তবে জেন জি-রা একটু নামিয়েই পরবে। মেয়েদের মধ্যে বাড়তে পারে পোলো শার্টের চল। অনেকে লম্বা কাটের পোলো শার্টের বেল্ট পরে তৈরি করে নেবেন নিজস্ব স্টাইল স্টেটমেন্ট। প্যারিসে অনুষ্ঠেয় অলিম্পিক গেমসে সোনা ও রুপার মেডেলের ঝলক পোশাকের নকশায়ও দেখা যাবে। পোশাকে নানাভাবেই দেখা যাবে সোনালি ও রুপালি মেটালিকের ধারা। ব্যবহার করা হবে পালক।

টেলর কাটের পোশাকের প্রতি আগ্রহ দেখা যাবে এই বছর
ছবি: কবির হোসেন

ফ্যাশনের একটি বড় নির্ধারক জেন জি। টেকসই ফ্যাশনের পাশাপাশি স্ট্রিট ফ্যাশনেও তাদের আগ্রহ সমান। ভিনটেজ, রেট্রো, অতিরিক্ত বড় আকারের পোশাক এবং টেকসই কাপড়ের মধ্য দিয়ে বৈচিত্র্যকে উদ্‌যাপন করবে তারা। ২০০০ সালের স্টাইলগুলো আধুনিকভাবে তুলে ধরবে জেন জি প্রজন্ম। কটেজকোর ফ্যাশনও দেখা যাওয়ার একটা সম্ভাবনা আছে এ বছর। টেইলর কাটের পোশাকের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। পাশ্চাত্যে অনেকে সেকেন্ড হ্যান্ড পোশাক কেনার প্রতিও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। পাশাপাশি পোশাকে স্তর, বড় পকেট, ফোলানো হাতা ইত্যাদি থাকবে। সব বয়সী মানুষের পোশাকে পলকা ডট, বো ও ফিতার ব্যবহার রাখবেন ডিজাইনাররা।

ফিরে আসবে বড় ব্যাগ
ছবি: কবির হোসেন

বড় আকারের ব্যাগ আবার ফেরত আসছে এ বছর। টোট ব্যাগের প্রচলন দেখা যাবে। পোশাকে লাল, সবুজ ও নীল রঙের জনপ্রিয়তা বাড়বে। বেল্ট, স্টেটমেন্ট অলংকার, স্নিকারস থাকবে এ বছর; পাশাপাশি পায়ে দেখা যাবে কিটেন হিলের ব্যবহার।

পোশাকে দেশে কী ধারা

আমাদের এখানে পোশাকের নিজস্ব একটা ভাবনা আছে, যেটা অনুসরণ করে ধর্মীয় উৎসব এবং বিশেষ বিশেষ দিন। অঞ্জন’স–এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন আহমেদ জানান, বসন্ত উৎসব, পয়লা বৈশাখ, পবিত্র ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা, দুর্গাপূজা ও বড়দিনের সময় এক ধরনের কাজ হয়। একুশে ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে সাদা-কালো রঙের পোশাক, স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসের সময় লাল-সবুজ রং পরা হয়। প্রতিটি উৎসব ও বিশেষ দিনের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে রং নিয়ে কাজ করা হয়। বসন্তের সময় হলুদ, বাসন্তী ও সবুজ রঙের ব্যবহার হয় বেশি। ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার সময় উপকরণ বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে ঋতুর একটা প্রভাব থাকে। দুর্গাপূজার সময় লাল, সাদা ও বাসন্তী রং থাকেই। এ ধরনের চিরাচরিত রংগুলোর বাইরে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত রংগুলোর ঝলকও দেখা যাবে। এ ছাড়া ছেলেমেয়েদের পোশাকে প্যাটার্নের ওপর ভিত্তি করেও অনেক নকশা নির্ধারণ করা হবে। এ বছর প্রিন্টের পাশাপাশি এমব্রয়ডারির কাজও বাড়বে।

পোশাকে দেখা যাবে পলকা ডটের প্রভাব।
পোশাক: ক্লাবহাউস

এ বছর বেশির ভাগ উৎসব পড়েছে গরমের সময়। এ কারণে পোশাকে প্যাস্টেল রং বা হালকা রং দেখা যাবে; পাশাপাশি উজ্জ্বল রং তো থাকবেই। সায়ান, কমলা, রুপালি, সেজ গ্রিন ও বেগুনি রং পোশাকে প্রাধান্য পেতে পারে বলে মনে করেন ক্লাবহাউসের ডিজাইনার ইফতেখারুল ইসলাম। গত কয়েক বছর ঢিলেঢালা পোশাকের ধারা জনপ্রিয় ছিল। এ বছর ঢিলেঢালা কাটের পাশাপাশি আঁটসাঁট পোশাকও থাকবে। লম্বা ও মাঝারি কাটের পোশাক—দুটি ধরনই থাকবে। অর্থাৎ এদিক দিয়ে হিসাব করলে নিজের পছন্দের ওপর ভিত্তি করেও অনেকে নির্বাচন করবেন স্টাইল স্টেটমেন্ট। সব বয়সী মানুষের পোশাকেই বাড়বে টেকসই ফ্যাশন উপকরণের জনপ্রিয়তা।

সাজে কী ধারা

রেট্রো ফ্যাশনের ধারা ও চোখে গ্রাফিক নকশা
ছবি: কবির হোসেন

সাজের ক্ষেত্রেও দেখা যাবে বেশ কিছু পরিবর্তন, জানালেন পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান। মেকআপে উজ্জ্বল রঙের উপস্থিতি দেখা যাবে। চোখের সাজে প্রাধান্য পাবে নীল রং। আইলাইনারে ফুটে উঠবে গ্রাফিক নকশা। পাশাপাশি চোখের ওপর রুপালি শিমারের ব্যবহার বাড়বে। চোখের নিচে কাজল দিয়ে হালকাভাবে ঘষে দেওয়ার চলও দেখা যাবে। প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের পরিচর্যার মাধ্যমে উজ্জ্বলতা ফুটিয়ে ওঠানোর চেষ্টা করা হবে। নব্বইয়ের দশকের দিকের মেকআপের একটা ধারাও দেখা যাবে। চুলে স্টাইলের চেয়েও এর স্বাস্থ্যের ওপর যে প্রাধান্য গত বছর থেকে দেওয়া হচ্ছে, ২০২৪ সালে সেটা আরও বাড়বে। চুলের সাজে হালকা ও জমকালো—দুই ধরনের কাজই দেখা যাবে। মোটা ব্যান্ড ব্যবহার করবেন অনেকেই। এক পাশে সিঁথি করা বাড়বে। দাওয়াতে ওয়েট হেয়ারস্টাইলসব (চুল ভিজিয়ে রেখে স্টাইল) নানা ধরনের সাজ থাকবে তালিকায়। এ ছাড়া বেণি করে খোঁপা ও চুলে হানি ব্লন্ড রংটি জনপ্রিয় হবে।