ল্যাকমের আসরে বিশ্ব–ফ্যাশন
বসন্ত যাই যাই করছে। আসতে চলেছে গরমের দাপট। ‘এল নিনো’র প্রভাবে এ বছর প্রচণ্ড গরম পড়বে। প্রতিবারের মতো এবারও ল্যাকমের র্যাম্পে মেলে ধরা হলো গ্রীষ্মের দিন ও রাতের নতুন ধারার পোশাক। তবে ফ্যাশন এখন শুধু গ্ল্যামার–জগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। সাধারণ মানুষ এখন যথেষ্ট ফ্যাশন–সচেতন। তাই এবার সবার জন্য ছিল বাহারি আয়োজন। কিছু কিছু ডিজাইনার এই আসরে তুলে ধরেছিলেন বিশ্বফ্যাশন। তাই সব মিলিয়ে জমজমাট ছিল ‘এফডিসিআই ল্যাকমে ফ্যাশন উইক ২০২৪’। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের জিও ওয়ার্ল্ড কনভেনশন সেন্টারে বসেছিল এই ফ্যাশন উৎসবের আসর।
নবীনের উল্লাস
ল্যাকমের আসর মানেই নবাগত ডিজাইনারদের জন্য উন্মুক্ত এক প্রাঙ্গণ। প্রতিবারের মতো এবারও ল্যাকমের মঞ্চে অভিষেক হয়েছিল একঝাঁক নবাগত ডিজাইনারের। খ্যাতনামা ফ্যাশন ইনস্টিটিউট ‘আইএনআইএফডি’ আয়োজিত জেননেক্সট শীর্ষক এ আয়োজনে রোহিতাস নোটানি ফ্যাশনের ক্ষেত্রে তথাকথিত পুরুষত্বকে ভেঙে এক নতুন ফ্যাশনের জন্ম দিয়েছিলেন। কৃতি গ্রেটা সিংঘির প্রদর্শনে উঠে এসেছিল জৈবিক, পরিবেশবান্ধব, হাতে বোনা, প্রাকৃতিক সিল্ক, আর বাংলার ফুলিয়ার সুতির সিল্কের স্কার্ট-ব্লাউজ, মিডি ড্রেস, ওয়াইড প্যান্ট, ক্রপড জ্যাকেটসহ আরও বাহারি পোশাক। এদিনের প্রথম শো–তে চারমি আম্বাভাটের প্রদর্শনে ছিল পার্কি প্লেস্যুট, কার্গো প্যান্ট, স্লিক স্যুটসসহ আরও ট্রেন্ডি ও আরামদায়ক পোশাক। যশ গাড়া তাঁর ‘ধাগেদার ডেনিম’ শীর্ষক আয়োজনের মাধ্যমে ডেনিমের বৈচিত্র্য মেলে ধরেছিলেন।
বিশ্বফ্যাশন
এবার ল্যাকমে ফ্যাশন উইকে বেশ কিছু ডিজাইনার তাঁদের প্রদর্শনীর মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে এক নতুন ফ্যাশন–ধারা পৌঁছে দিয়েছেন। কেউ এ ক্ষেত্রে স্পোর্টসের পোশাক, আবার কেউ রাতের পার্টি পোশাক বেছে নিয়েছেন। ডিজাইনার রাজেশ প্রতাপ সিং এবং লা মার্টিনা যৌথভাবে এক অভিনব ফ্যাশন শো-এর আয়োজন করেছিলেন। মুম্বাইয়ের ঐতিহ্যবাহী মহালক্ষ্মী পোলো গ্রাউন্ডে এই আয়োজন করা হয়েছিল।
রাজেশ প্রতাপ সিং তাঁর এই প্রদর্শনের মাধ্যমে ‘গোলাপি শহর’ জয়পুরের সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন। পোলো ও রাজস্থানি শিল্পকলা একসূত্রে গেঁথে পোলো ফ্যাশনের এক নতুন শিল্পকথার জন্ম দিয়েছিলেন এই খ্যাতনামা ডিজাইনার। এদিকে ডিজাইনার কনিকা গোয়েলের আয়োজনে ছিল স্ট্রিটওয়্যার ও অ্যাথলেটিকসের পোশাকের বৈচিত্র্য। তিনি এ দেশে প্রথম নিয়ে এলেন স্ট্রিটওয়্যার ক্যাপসুল কালেকশন। তাঁর ‘রেট্রোভার্স’ শীর্ষক এই কালেকশন নব্বইয়ের দশক দ্বারা অনুপ্রাণিত। কনিকা জানান যে তাঁর এই কালেকশন স্ট্রিট পোশাকের ক্ষেত্রে বিশ্বফ্যাশনপ্রেমীদের কাছে নতুন বার্তা পৌঁছে দেবে।
এদিকে সাক্ষা-কিন্নির রঙিন ও ফুরফুরে আয়োজনে ছিল বিচওয়্যারের বৈচিত্র্য। গোয়া থেকে হনুলুলু—যেকোনো সমুদ্রসৈকতে পরার জন্য বেছে নিতে পারেন তাঁদের কালেকশন থেকে যেকোনো পোশাক। এই দুই ডিজাইনার তাঁদের এই কালেকশনের মাধ্যমে উদ্যাপন করেছেন জীবনের বহিরঙ্গনকে। তাঁদের সুইমওয়্যার কালেকশনে উঠে এসেছিল প্রকৃতির নানান রং-রূপ।
খ্যাতনামা ডিজাইনার শান্তনু-নিখিলের প্রদর্শনে ধরা পড়েছিল বিশ্ব-ফ্যাশন। ব্যাটালিয়ন জ্যাকেটের সঙ্গে মানানসই নানান প্যাটার্নের প্যান্ট ও স্কার্টের সম্ভার ছিল তাঁদের ‘ইউ’ কালেকশনে। রাহুল মিশ্র এই ফ্যাশন উৎসবে নিয়ে এসেছিলেন রাতের পার্টির বাহারি পোশাক। প্রকৃতির নানান উপাদানকে মোটিফ হিসেবে ব্যবহার করে তিনি তাঁর ক্যানভাসকে বর্ণময় করে তুলেছিলেন।
হোলি থেকে ঈদ
ল্যাকমের ফ্যাশন উইকের আসর এবারও উৎসবমুখর হয়ে উঠেছিল। খ্যাতনামা ডিজাইনার গৌরাঙ্গ তাঁর ‘গুলাল’ শীর্ষক এক রঙিন আয়োজনে ফিরিয়ে এনেছিলেন সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া মোচি, পার্সি গাড়া, পেটাইট পয়েন্ট, কাসুটি, ফুলকারি, কাচ্ছ, কাশ্মীরি এমব্রয়ডারিকে। হাতচরখা খাদি, নরম সুতি, সিল্ক মটকা, সিল্কের শাড়ি ও লেহেঙ্গার ওপর এসব এমব্রয়ডারি ধরা পড়েছিল।
বরুণ চাক্কিলাম তাঁর ‘লিনোরা’ শীর্ষক প্রদশর্নের মাধ্যমে আলোকমালাকে উদ্যাপন করেছেন। তাঁর আয়োজনে ছিল লেহেঙ্গা-চোলির নানান বাহার। অরবিন্দ আম্পুলা এক দৃষ্টিনন্দন পরিবেশনার মাধ্যমে ল্যাকমের এবারের আয়োজনকে আরও উৎসবমুখর করে তুলেছিলেন। ভারতীয় ‘ব্লসম’ থেকে নানান পার্সিয়ান মোটিফ ব্যবহার করেছেন তাঁর কালেকশনে। সাক্ষী ভাটি এ আসরে এক জাদুকরী আবহের সৃষ্টি করেছিলেন। তিনি লেহেঙ্গা-চোলি, শাড়ি, গাউন, সারারা, ম্যাক্সি ড্রেসসহ আরও নানান পোশাকের ওপর ফুল, পাতা মোটিফ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।