২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

আপনাদের পোশাকের চেয়ে আমাদের জীবনের দাম কম

বাংলাদেশের তরুণ উদীয়মান সমসাময়িক ফ্যাশন ডিজাইনারদের ভেতর একেবারে শুরুর দিকেই থাকবে সামি আলমের নাম। ফ্যাশনের রাজধানী প্যারিসে ক্যারিয়ার গড়ার হাতছানি উপেক্ষা করে তিনি কাঁধে তুলে নিয়েছেন আড়ংয়ের হারস্টোরির সিনিয়র ডিজাইনারের ভার। কেননা সামির মতে, প্যারিসের চেয়ে ঢাকার তাঁর প্রয়োজন বেশি। ফ্যাশনের রাজধানী প্যারিসকে তাঁর খুব বেশি কিছু দেওয়ার নেই! ফ্রান্সের ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাশন একাডেমি, প্যারিস থেকে স্নাতকোত্তর শেষ পর্বের অংশ হিসেবে তিনি ‘ব্লাড, সোয়েট অ্যান্ড টিয়ারস’ শিরোনামে একটা কালেকশন করেন। ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোসহ নানান দাবিতে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে যখন টালমাটাল অস্থির অবস্থা বিরাজ করছে, হঠাৎ করেই ছুটি বা বন্ধ ঘোষণা করা হচ্ছে একের পর এক পোশাক কারখানা, পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি সংঘাত–ধাওয়া, কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাতে বা পদদলিত হয়ে পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে, পোশাক খাতে দেখা দিচ্ছে সংকটের শঙ্কা—তখন ফ্যাশনের সেই সংগ্রহটি যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। কী ছিল ২০২১ সালের আলোচিত সেই সংগ্রহে?
‘ব্লাড, সোয়েট অ্যান্ড টিয়ারস’ নামের এই সংগ্রহের একটি স্লোগান হলো, ‘আপনাদের পোশাকের চেয়ে আমাদের (পোশাককর্মীদের) জীবনের দাম কম।’
ছবি: ফারাবি তমাল
হ্যাঁ, অবশ্যই প্রতিটি ঘটনায় দুটি পক্ষ বা একাধিক পক্ষ থাকে। সব পক্ষের একধরনের ‘বাস্তবতা’ থাকে। তবে বেশ কিছু কারখানায় পোশাকশ্রমিকদের অমানবিক কর্মপরিবেশ, মজুরি বৈষম্য, শ্রম আইনের পরিপন্থী চিত্র অস্বীকার করা যাবে না। এই কালেকশনে উঠে এসেছে ‘স্টপ ফোর্সিং প্রেগন্যান্ট উম্যান টু রিজাইন’, ‘ডোন্ট সে ইউ হেল্প আওয়ার ইকোনমি, ইউ জাস্ট নিড চিপ লেবার’–এর মতো শক্তিশালী বার্তা।
ছবি: ফারাবি তমাল
চলমান শ্রমিক আন্দোলনের জেরে বিক্ষোভ ও ভাঙচুরের ঘটনায় মামলা-হামলা চলছেই। এর মধ্যে যেন আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে ধরা দেয় তরুণ বাংলাদেশি ফ্যাশন ডিজাইনার সামি আলমের ‘ব্লাড, সোয়েট অ্যান্ড টিয়ার্স’ নামের সংগ্রহটি
ছবি: ফারাবি তমাল
ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা এড়াতে সামি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে বলেন, ‘আমি মোটেই গার্মরন্টস ইন্ডাস্ট্রির বিপক্ষে নই। বরং উল্টো। গার্মেন্টস শিল্প তার সমস্ত অসঙ্গতিগুলো কাটিয়ে, দুর্নাম ঝেড়ে ফেলে, সমস্যাগুলো মিটিয়ে আগামীতে এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত সমস্তপক্ষ যাতে একপক্ষ হয়ে পথ চলতে পারে, সেই পথচলা যেন আরও শক্তিশালী আর মসৃণ হয়, সেটিই আমার একমাত্র চাওয়া।’
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে ক্যারিয়ার গড়তে চাওয়া এক তরুণ ফ্যাশন ডিজাইনারের ক্যারিয়ারের একেবারে শুরুর দিকে এ রকম প্রতিবাদী, বিদ্রোহী একটা সংগ্রহকে সাহসী কাজ বলতেই হবে!
ছবি: ফারাবি তমাল
এই সংগ্রহে ফ্যাশনকে একজন পোশাককর্মীর দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হয়েছে। অন্যদের জন্য যেটা হাই লাইফ, লাক্সারি ফ্যাশন, বাংলাদেশের অনেক পোশাককর্মীর জন্য সেটা প্রলোভন
ছবি: ফারাবি তমাল
সেই প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে অনেকে রক্ত, ঘাম পানি করে খুব স্বল্প মজুরিতে পোশাক বানান। অনেকে মারা পর্যন্ত যান। পোশাকশ্রমিকদের অমানুষিক শ্রম আর বঞ্চনার দিকগুলো যেমন উঠে এসেছে, তেমনি উঠে এসেছে সম্ভাব্য সমাধানের কথাও
ছবি: ফারাবি তমাল
এই সংগ্রহকে ভাগ করা হয়েছে তিনটি ভাগে। প্রথমটি হলো কনফ্রন্টেশন বা মোকাবিলা। পরেরটি ট্র্যাজেডি। এর একটা অংশে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার বিষয়টি উঠে এসেছে। তৃতীয়টি হলো ‘আফটার ম্যাথ’। এখানে সম্ভাব্য সমাধানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে
ছবি: ফাবৃস মালার্ড
বাংলাদেশে এই সংগ্রহের ফটোশুটে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন বর্ণ, নিদ্রা ও তুবা
ছবি: ফারাবি তমাল
আলোকচিত্রী ফারাবি তমালের ক্যামেরায় লাক্সারি হাই ফ্যাশনের পেছনে অন্ধকারে আড়াল হয়ে যাওয়া পোশাকশ্রমিকদের নিদারুণ কষ্ট, ব্র্যান্ডের পোশাকে হারিয়ে যাওয়া সেই শ্রমিকদের রক্ত, ঘাম আর অশ্রুর প্রতিচ্ছবি নিয়ে দাঁড়িয়েছেন এই মডেলরা। তাঁদের পোশাক থেকে যেন ছিটকে বেরিয়ে আসছিল টকটকে লাল রক্ত
ছবি: ফারাবি তমাল
দেশি–বিদেশি ফ্যাশন সমালোচক ও শিক্ষকেরা এই সংগ্রটিকে গুরুত্বপূর্ণ আর শক্তিশালী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। বাংলাদেশে শুট করা হয়েছে সিনথিয়া ভুঁইয়ার কারখানায়। পোশাকগুলো তৈরি হয়েছে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশনে
ছবি: সংগৃহীত
এই সংগ্রহ আর পোর্টফোলিও নিয়ে ফ্রান্সের প্যারিসে উড়াল দেন সামি। সেখানে ২০২২ সালের জুলাইয়ে সালন দে মিররস হলে হয় এই শো। বরাবরের মতো একাডেমিক এই শো দেখতে এসেছিলেন সেখানকার বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের পেশাদাররা। কেননা গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে অনেকে এভাবেই শো দেখতে আসা পেশাদারদের মাধ্যমে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসে ক্যারিয়ার শুরু করেন
ছবি: ফাবৃস মালার্ড
তাই এই শো কেবল একাডেমিক শো নয়, বরং পড়াশোনা শেষে নিজের সংগ্রহ মেলে ধরার মাধ্যমে পেশাদারদের সামনে নিজের সম্ভাবনাকেও মেলে ধরা। যাতে পেশাগত জীবনে স্বপ্ন ছুঁয়ে ফেলার রাস্তা সহজ হয়
ছবি: ফাবৃস মালার্ড
শো শেষে সামির দুই হাতে জড়ো হয়েছিল বেশ কিছু ভিজিটিং কার্ড। প্যারিসের বেশ কিছু ফ্যাশন হাউস সামিকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল
ছবি: সংগৃহীত
শোয়ের সব সংগ্রহ রিসাইকেল আর আপসাইকেল করা উপাদানে তৈরি। টেকসই ফ্যাশনের মূল্যবোধে দাঁড়ানো এই সংগ্রহ তাই নানা দিক থেকেই তাৎপর্যপূর্ণ
ছবি: সংগৃহীত
নিজেকে একজন ফ্যাশন ডিজাইনার নয়, বরং ‘স্টোরিটেলার’ হিসেবে পরিচয় দিতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সামি। দেশের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আর উপাদানে নিজের ভেতরে প্রতিনিয়ত জমা হওয়া গল্পগুলো ফ্যাশনের বুননে তুলে ধরতে চান তরুণ সম্ভাবনাময় এই ফ্যাশন–শিল্পী
ছবি: সংগৃহীত
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন