জন্মের আগের পোশাকে চমক দেখালেন জেনডায়া
গত চার বছর মেট গালায় অনুপস্থিত ছিলেন জেনডায়া। ফিরেই কেরে নিয়েছেন সবুজ গালিচার সকল আলো। মেট গালার সন্ধ্যায় দুইটি আলাদা আলাদা লুকে মুগ্ধ করেছেন বিশ্ববাসীকে
বিষয়টি অনুমিতই ছিল। হলিউডে সময় দিতে গিয়ে গত চার বছর মেট গালায় হাজির হতে পারছিলেন না জেনডায়া। পুরো বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি কাঁপিয়ে বেড়ানো এই অভিনেত্রী মেট গালাতে থাকবেন না, এটা যে ভক্তরা মানতেই পারছিলেন না। তাই এ বছরের মেট গালার কো-চেয়ারের আসনে বসিয়ে দেওয়া হলো জেনডায়াকে। সবাই ধরেই নিয়েছিল, এবার সবুজ গালিচার পুরো আলো কেড়ে নেবেন জেনডায়া একাই। তবে পাঁচ বছর পর ফিরে এমন চমক দেখাবেন জেনডায়া, তা হয়তো কেউ আশাও করেননি। মেট গালার সবুজ গালিচায় জেনডায়া হাজির হয়েছেন দুবার!
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সোনালি সন্ধ্যায় মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অব আর্টে পর্দা উঠেছে মেট গালার। আর পর্দা উঠতে না উঠতেই পুরো আসরের সব আলো নিজের দিকে টেনে নিয়েছেন জেনডায়া। এবারের আসরের শুভসূচনাই হয়েছে তাঁকে দিয়ে। এবারের থিম ছিল ‘স্লিপিং বিউটি: রিঅ্যাওয়েকেনিং ফ্যাশন’। থিমের সঙ্গে অক্ষরে অক্ষরে মিল রেখে পোশাক তৈরি করেছেন জেনডায়ার ব্যক্তিগত ডিজাইনার লো রোচ। জন গালিয়ানোর ১৯৯৯ স্প্রিং কালেকশনের পোশাক থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছেন তিনি।
ঊনবিংশ শতাব্দীর রোমান্স আর আধুনিকতার মিশ্রণ ছিল জন গালিয়ানোর ডিজাইনে। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমারাল্ড গ্রিন আর ইলেকট্রিক ব্লুর মিশ্রণে নতুন করে পোশাকটি তৈরি করেছেন রোচ। পোশাকের প্রতিটি অংশ হাতে আঁকা, নয়তো এমব্রয়ডারি করা। গলার একপাশে ছিল হামিংবার্ড নকশার গয়না। হাতজুড়ে ছিল ছোট ছোট আঙ্গুর ও লতার সমাহার। মেট গালার মঞ্চে জেনডায়া যেন মিশে গিয়েছিলেন প্রকৃতির মাঝে।
সিল্ক, অ্যালুমিনিয়ামের মিশ্রণে তৈরি পোশাকের সঙ্গে ছিল নেট মেশ ও ময়ূরের পালকের মতো হেড গিয়ার। সেই সঙ্গে ময়ূরের চোখের মতো টানা মেকআপ। প্রথমবার দেখে তাঁকে রূপকথার পাতা থেকে উঠে আসা কোনো চরিত্র ভেবে ভুল করলেও করতে পারেন। কিন্তু চমক তখনো বাকি।
গালিচায় হাঁটাহাঁটির পালা তখন শেষের দিকে, ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে তারকাদের ভিড়। এমন সময় আবারও গালিচার মাথায় দেখা মিলল জেনডায়ার। সম্পূর্ণ ভিন্ন লুকে, ভিন্ন আরেক স্টাইলে। এবার আর কোনো অনুপ্রেরণা নয়, বরং সত্যি সত্যিই ফ্যাশনের পুনর্জাগরণ ঘটিয়েছেন তিনি। জেনডায়ার পরনের কালো গাউনটি তৈরি হয়েছে তাঁর জন্মেরও আগে। পোশাকটির নকশাও ব্রিটিশ ডিজাইনার জন গালিয়ানো।
১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে গিভয়শের স্প্রিং কালেকশনের অংশ হিসেবে অফ শোল্ডার গাউনটি তৈরি করেছিলেন তিনি। সে বছরের সেপ্টেম্বরে জেনডায়ার জন্ম। আর ওটাই ছিল গালিয়ানোর প্রথম একক শো। ২৭ বছর ধরে সেই গাউন সযত্নে সাজিয়ে রাখা হয়েছিল বেভারলি হিলসের বিখ্যাত বুটিক শপ ‘লিলি অ্যাট সিসে’। অবশেষে জেনডায়ার হাত ধরে আবারও সবুজ গালিচায় দেখা মিলল সেই গাউন।
‘লিলি অ্যাট সিসে’র মালিক রিটা ওয়াটনিক জানান, গত মার্চে হুট করেই তাঁর দোকানে হাজির হন লো রোচ। টুকটাক শুভেচ্ছা বিনিময় আর দোকান ঘুরে দেখে বিদায় নেন তিনি। আবার এপ্রিলের মাঝামাঝি আবারও হাজির হন রোচ, এবার সঙ্গে ছিলেন স্বয়ং জেনডায়া। দোকানে গিয়েই একটা পোশাক হাতে নিলেন, পরলেন। এতটাই পছন্দ হলো যে এক সপ্তাহ পর পোশাকটি চড়া দামে কিনে পর্যন্ত নিয়ে গেলেন। সাধারণত বড় বড় শোয়ের জন্য তারকারা পোশাক ধার নেন, কিংবা পরার পর তা মিউজিয়ামে দিয়ে দেন, কিন্তু সেসবের ধার না ধেরে জেনডায়া সরাসরি কিনেই নিয়েছেন পোশাকটি।
কালো গাউনের সঙ্গে জেনডায়ার মাথার ফুলের মুকুটটির বয়স প্রায় ১৭ বছর! ২০০৭ সালে আলেকজান্ডার ম্যাকুইনের স্প্রিং কালেকশনে দেখা গেছে এই মুকুট। কয়েক দফা ঘুরে গত রাতে শোভা পেয়েছে জেনডায়ার মাথায়। এ বছরের ড্রেসকোড ‘দ্য গার্ডেন অব টাইম’-এর প্রতিটি পয়েন্টে যেন টিকচিহ্ন দিয়েছে এই পোশাক। এ ছাড়া দুই লুকেই তাঁর পরনে ছিল বুলগারির জুয়েলারি।
অথচ গত সপ্তাহে ‘নিউইয়র্ক টাইমস’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভক্তদের চমকে দিয়েছিলেন লো রোচ। জেনডায়ার ব্যক্তিগত ডিজাইনার ২ মে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মেট গালার পোশাক নিয়ে আমরা (রোচ ও জেনডায়া) এখনো বসিনি। প্রেস ট্যুর, ভোগের শুট নিয়েই আমরা ব্যস্ত। ব্যস্ততা কমলে ভেবে দেখা যাবে।’ সেখান থেকে তিন দিনের মাথায় মেট গালার মঞ্চে সম্পূর্ণ ভিন্ন দুটি লুক। নামটা হয়তো জেনডায়া বলেই সম্ভব।
তথ্যসূত্র: দ্য হলিউড রিপোর্টার ও ভোগ