‘তখন থেকে বুঝতে পারি, একজন চিকিৎসক রোগীর জন্য কতটা ভরসার জায়গা’
ছোটবেলা থেকেই চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন। সাদা অ্যাপ্রন, স্টেথোস্কোপ তাঁকে বিশেষভাবে টানত। নিজেকে সেভাবেই তৈরি করছিলেন মুহতাসিম সাদিক। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী, নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্তি আরও অনুপ্রেরণা দিয়েছে। গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডেও ছিলেন নিয়মিত মুখ। এ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। সমস্যার শুরু ঢাকার নটর ডেম কলেজে ভর্তি হওয়ার পর। একের পর এক অসুস্থতায় পড়তে থাকেন সাদিক। প্রথমে ল্যারিনজাইটিস, জ্বর ও টাইফয়েড। এরপর ক্রনিক (দীর্ঘস্থায়ী) ডিওডেনাল আলসারেও আক্রান্ত হন। সাদিক বলছিলেন, ‘আমার অবস্থা তখন এতটাই নাজুক ছিল যে এন্ডোসকপি করতে হয়। এটা খুবই কষ্টের একটা পরীক্ষা। কম বয়সী রোগীদের সাধারণত এন্ডোসকপি করানো হয় না।’
সে সময় কিছু খেলেই বমি করতেন সাদিক। পেট ব্যথায় কাবু হয়ে এক-দুই সপ্তাহ পরপর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে যেতে হতো। এভাবে দীর্ঘ চার মাস তিনি হাসপাতালে যাওয়া-আসা করেছেন। কঠিন সেই সময়ের কথা মনে করে সাদিক বলেন, ‘তখন থেকে বুঝতে পারি, একজন চিকিৎসক রোগীর জন্য কতটা ভরসার জায়গা। আমার সে সময়ের চিকিৎসক ছিলেন ডা. ফরহাদ-উল-হাসান ও ডা. দেবাশীষ রায়। তাঁদের কথাতেই যেন অনেকটা অসুখ সেরে গিয়েছিল। তাঁদের কাছ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে মেডিকেলে পড়ার সিদ্ধান্ত নিই।’
সাদিকের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় ১৫তম হয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় তাঁর অবস্থান ৭০তম। তবে সবচেয়ে ভালো করেছেন ডেন্টালে। হয়েছেন প্রথম। এমন সাফল্যের পর এই মেধাবী বলেন, ‘অনেক পরিশ্রমের পর এই স্বপ্নপূরণ। খুশিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। কষ্ট সার্থক হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।’
কখনো সময় মেপে পড়াশোনা করেননি সাদিক। ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে, বিরতি নিয়ে নিয়ে পড়েছেন। বলছিলেন ‘এভাবে পড়লে ফোকাস ধরে রাখা যায়। মনে প্রশান্তি কাজ করে, বিরক্তি আসে না। পড়াটা মনে গেঁথে যায়।’
মানবিক নিউরোসার্জন হতে চান সাদিক। বলছিলেন, ‘জটিল বিষয় হলেও মানব মস্তিষ্কের রহস্য জানতে আমার ভালো লাগবে।’ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. কামরুল ইসলামের ‘বিনা মূল্যে কিডনি প্রতিস্থাপন কার্যক্রম’ সাদিককে উৎসাহিত করে। তাঁর মতোই মেধা, দক্ষতা ও শ্রম দিয়ে গরিব-দুঃখীদের সাহায্য করতে চান।