রাজগোখরার ডিম উদ্ধার করে যেভাবে বাচ্চা ফোটালেন এক তরুণ
লোকালয়ে সাপ আসার খবর পেলেই ছুটে যান তাঁরা। হোক নির্বিষ কিংবা বিষধর, উদ্ধার করে নিরাপদ কোনো আশ্রয়ে ছেড়ে দিয়ে আসে ‘স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশ’। এই তো বান্দরবানের থানচি থেকে গত ২৯ জুন এক শিকারির কাছ থেকে বিষধর রাজগোখরা (কিং কোবরা) সাপের ২৫টি ডিম উদ্ধার করে তারা। কিছুদিন আগে ডিমগুলো থেকে বাচ্চা ফোটাতে সক্ষম হয়েছেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সিদ্দিকুর রহমান। তাঁর কাছে সেই গল্পই শুনলেন তানভীর রহমান
২৯ জুন থানচি থেকে একজন ফোন করে জানালেন, স্থানীয় কিছু মানুষ একটি সাপ ধরেছে। শুধু তা–ই নয়, তাঁদের কাছে সেই সাপের বেশ কিছু ডিমও আছে। সাপের ছবি দেখে নিশ্চিত হলাম, এটা বিষধর রাজগোখরা। আমাদের দেশে খুবই বিরল। তাই ডিমগুলো উদ্ধারের চেষ্টায় নামি; কিন্তু ডিম দিতে তারা রাজি না। প্রতিটি সাপের ডিমের জন্য তখন তাদের দুটি করে মুরগির ডিম দিতে চাই। তা–ও তারা রাজি হয় না। তাদের ভাষ্য, এই ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি। শেষে একটি ডিমের বিপরীতে চারটি মুরগির ডিমে রফা হয়। যদিও প্রথম দেখায় ডিমগুলো নিয়ে আমার মনে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। মনে হচ্ছিল গুইসাপের ডিম। ডিমগুলো হাতে পাওয়ার পর আমি বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটকে জানাই।
আগেই বলেছি, রাজগোখরা আমাদের দেশে বিরল প্রজাতির সাপ। সুতরাং সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে ডিমগুলোকে ফোটানো গেলে অবশ্যই প্রকৃতির জন্য ভালো হবে। তাই ডিমগুলো আমাদের কাছে রেখে ফোটানোর সিদ্ধান্ত নিই। ডিমগুলো খুব একটা ভালো অবস্থায় ছিল না, গায়ে ফাঙ্গাস ছিল। প্রথমে ডিমগুলোকে ফাঙ্গিসাইড দিয়ে পরিষ্কার করে নিই। বলে রাখি, কিং কোবরা বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে। ডিমগুলো সংগ্রহের সময় একটি বাঁশপাতা আমার নজরে এসেছিল। যার কারণে শুকনা বাঁশপাতা সংগ্রহ করে একটি কৃত্রিম বাসা তৈরি করি। সেখানে ডিমগুলোকে পরিষ্কার করে, শুকনা পরিবেশে রেখে দিই। এর প্রায় ২০ দিন পর সব কটি ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসে।
বাংলাদেশে নিঃসন্দেহে এটি একটি নতুন প্রচেষ্টা। চমৎকার কাজটির জন্য স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশকে অভিনন্দন। এই স্বেচ্ছাসেবক দলকে সরকারের পুরস্কৃত করা উচিত, সেই সঙ্গে এই কাজে তাদের যা খরচ হয়েছে, সেটাও দিয়ে দেওয়া উচিত। এখন চ্যালেঞ্জের কাজটি হলো বাচ্চাগুলোকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেওয়ার মতো বড় করে তোলা। কিং কোবরা শুধু অন্য সাপ খেয়ে বেঁচে থাকে, এমনকি বাচ্চা কিং কোবরাও অন্য সাপ খাবে। ডিমগুলো যেখান থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে ৫০ থেকে ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রামের মিশ্র চিরহরিৎ বনে এগুলো ছেড়ে দিক বন বিভাগ। আর কাজটা অবশ্যই গোপনীয়ভাবে করতে হবে।
আমাদের দেশে এভাবে আগে আর কিং কোবরার ডিম ফোটানো হয়েছে কি না, জানি না। ডিমগুলো কেনা থেকে শুরু করে পরিচর্যা ও বাচ্চা ফোটা পর্যন্ত আমাদের প্রায় ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। পরিশ্রমের কথা নাই–বা বললাম। ডিম ফুটে বাচ্চা বেরিয়ে আসার দৃশ্যটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে আমাদের কাছে। কারণ, প্রথম থেকেই কাজটা চ্যালেঞ্জিং ছিল। এই কাজে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের কাছ থেকে আমরা পরামর্শ পেয়েছি। বাচ্চাগুলোকে উপযুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেওয়াই এখন আমাদের লক্ষ্য। চট্টগ্রামে বেশ কিছু সংরক্ষিত বনভূমি (রিজার্ভ ফরেস্ট) রয়েছে, যেগুলো বিপন্ন প্রজাতির এসব প্রাণীর বসবাসের উপযোগী। বন বিভাগের পরামর্শ নিয়ে বাচ্চাগুলোকে আমরা লোকালয় থেকে দূরে সে রকম কোনো বনে ছেড়ে দেব।