কিশোর ও তরুণেরা রাত জাগে কেন
শুধু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নয়, ভিডিও গেমস থেকে শুরু করে পড়াশোনা—তরুণদের রাত জেগে স্ক্রিনের সামনে বসে থাকার অনেক কারণ। যার প্রভাবে তাঁদের মধ্যে বাড়ছে ইনসমনিয়া।
স্ক্রিনের সামনে অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকলে তার প্রভাব মস্তিষ্কেও পড়ে। মস্তিষ্কের কার্যকারিতা আস্তে আস্তে কমে আসে। এ ছাড়া অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম শরীরে মেলাটোনিন নিঃসরণের হারও কমিয়ে দেয়, যা ‘স্লিপ হরমোন’ নামে পরিচিত।
শরীরে মেলাটোনিনের পরিমাণ নির্ভর করে সূর্যের আলোর ওপর। সূর্য অস্ত যাওয়ার পর থেকে আস্তে আস্তে মেলাটোনিনের লেভেল বাড়তে থাকে, শরীরও ঘুমের প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু স্ক্রিন থেকে নিঃসৃত ‘ব্লু লাইট’-এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সূর্যের আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের কাছাকাছি। যে কারণে শরীর স্ক্রিনের ‘ব্লু লাইট’কে সূর্যের আলো ভেবে ভুল করে আর মেলাটোনিন নিঃসরণ বন্ধ করে দেয়। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইমের কারণে রাতে ঘুমের পরিমাণ আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
নিয়মিত ঘুমের অভাব হতে থাকলে দৈনন্দিন কাজে তার প্রভাব পড়তে থাকে। স্লিপ ডিজঅর্ডারের বেশ কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ রয়েছে। নিয়মিত ঘুম না হলে আস্তে আস্তে তার প্রভাব শরীরেও দেখা দিতে শুরু করে।
সারা দিন শরীরে ক্লান্তি লেগে থাকা।
দৈনন্দিন কাজে অনাগ্রহ। যে কাজটি আগে আগ্রহ নিয়ে করতেন, সেটা করতেও অবহেলা।
খুব দ্রুতই অস্থির হয়ে পড়া।
সারাক্ষণ খিটখিটে মেজাজে থাকা। যেকোনো কথায় হুট করে রেগে যাওয়া।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শর্ট ফরম্যাটে কনটেন্ট দেখতে দেখতে মনোযোগ কমে আসা। দীর্ঘ সময়ের জন্য কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা।
ঘুমের এ সমস্যার সমাধান একটিই, প্রতিদিন ঘুমের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় বরাদ্দ রাখা। দৈনন্দিন জীবনে যত চাপ থাকুক, যত কাজই থাকুক না কেন, নির্দিষ্ট সময়ে বিছানায় যাওয়া ও বিছানা ছেড়ে ওঠা—এই দুই ব্যাপারে কোনো ছাড় দেওয়া চলবে না। প্রাপ্তবয়স্ক যে কারও জন্য দিনে অন্তত ছয় ঘণ্টার ঘুম প্রয়োজন। সেই ঘুমকে নিজের আয়ত্তে আনতে কিছু টিপস খাটাতে পারেন।
ঘুমাতে যাওয়ার সময় কখনো ফোন নিয়ে যাবেন না। বিছানা থেকে ফোন অন্তত ছয় হাত দূরে রাখুন।
ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফোনে রিলস দেখা কিংবা ল্যাপটপে কোনো টিভি সিরিজ দেখতে থাকার অভ্যাস দূর করুন।
সন্তানদের ক্ষেত্রে মা-বাবা সময় বেঁধে দিতে পারেন। নির্দিষ্ট সময়ের পর আর ফোন চালানো চলবে না।
রাতে ভিডিও গেমস খেলতে বসা থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে। কারণ, একবার গেমসে মন বসে গেলে সেখান থেকে উঠে আসা অসম্ভবই বটে।
ক্যাফেইন–জাতীয় পানীয় থেকে যতটা দূরে থাকা যায়, ততই মঙ্গল।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া