ইন্টার্নশিপ থেকে চাকরি: কয়েকজনের অভিজ্ঞতা
চাকরি পেয়েছি ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতায়
মোজাম্মেল হক, টেরিটরি ম্যানেজার, ইউনিলিভার বাংলাদেশ
বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। এনএসইউ ফাইন্যান্স ক্লাবের সদস্য হিসেবে আয়োজন করেছি বিভিন্ন ইভেন্ট। অংশ নিয়েছি নানা আয়োজনে। কখনো আয়োজক, কখনো অর্থ ব্যবস্থাপক হিসেবে যুক্ত ছিলাম ক্লাবের বিভিন্ন কাজে। এ ছাড়া দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায়িক ও আর্থিক নানা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতাম। এ ধরনের অভিজ্ঞতা বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ পেতে দারুণ কাজে দেয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে ইউনিলিভার বাংলাদেশে ইন্টার্নশিপের জন্য আবেদন করি। শুরুতে গণিত, ইংরেজিসহ কিছু সাধারণ দক্ষতাবিষয়ক পরীক্ষা হয়। পরবর্তী ধাপে একটি ব্যবসায়িক কেস সমাধান করতে হয়। সব শেষে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নিই। ইন্টার্নশিপ করেছিলাম আইটি বিভাগে। তবে আইটি দিয়ে শুরু করলেও পরে বিক্রয় বিভাগে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করি। চার মাস কাজের সুযোগ পেয়েছিলাম। ইন্টার্নশিপ শেষ করার পর ইউনিলিভার বাংলাদেশের টেরিটরি ম্যানেজার পদে আবেদন করি। একই প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করার কারণে কীভাবে কাজ করতে হয়, কীভাবে পেশাদারত্ব বজায় রাখতে হয়, জানা ছিল। সেসব ধারণা ও অভিজ্ঞতা থাকার কারণেই নানা ধাপ পেরিয়ে টেরিটরি ম্যানেজার হতে পেরেছিলাম।
চ্যালেঞ্জ জয়ের জন্য ইন্টার্নশিপ
সাদিয়া নূসরাত সিদ্দিকা, ম্যানেজার, রেগুলেটরি অ্যান্ড করপোরেট অ্যাফেয়ার্স, বিকাশ
ইন্টার্নশিপ শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কাজের চ্যালেঞ্জগুলো জয়ে সহায়তা করে। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ থেকে পড়েছি। মেজর করেছি মার্কেটিংয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ বর্ষে থাকতেই স্টার সিনেপ্লেক্সের ডিজিটাল মার্কেটিং টিমে ইন্টার্নশিপ করি। আইবিএর শিক্ষার্থী হিসেবে আমিই প্রথম স্টার সিনেপ্লেক্সে ইন্টার্ন করি। এখন তো প্রতিবছরই কেউ না কেউ আইবিএ থেকে সেখানে ইন্টার্নশিপ করে। ইন্টার্নশিপের সুযোগ শিক্ষার্থীদের জড়তা ও দুর্বলতা কাটিয়ে তুলতে সহায়তা করে। জীবনে প্রথম যে প্রতিষ্ঠানে আমরা কাজের সুযোগ পাই, ভবিষ্যতে নির্বাহী হিসেবে আমরা কতটা দক্ষ হব, এর ওপর তা অনেকটা নির্ভর করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে না থাকলেও শিক্ষার্থীদের চতুর্থ বর্ষে বা শেষ কয়েক মাস হাতে–কলমে কাজ শেখা উচিত। কীভাবে সময় ব্যবস্থাপনা করতে হয়, কীভাবে দলের সঙ্গে কাজ করতে হয়, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের জন্য সমস্যা সমাধান করতে হয়—এসব শিখতে হলে ইন্টার্নশিপের বিকল্প নেই। নিজের বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভাগের সিনিয়ররা কোথায় চাকরি করছেন, কোথায় ইন্টার্নশিপ করার সুযোগ আছে, তা জেনে শিক্ষার্থীরা সুযোগ তৈরি করতে পারে।
নিজেকে উপস্থাপনের কৌশল শিখেছি
আবির চৌধুরী, টেরিটরি ম্যানেজার, রবি আজিয়াটা লিমিটেড
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শেষ বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রির অংশ হিসেবে ইন্টার্নশিপ করতে হয়। আমি নানা জায়গায় আবেদন করেছিলাম। একপর্যায়ে রবি আজিয়াটার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ইন্টার্ন আবেদন করি। ইন্টার্নশিপের জন্য ভাইভা দিতে হয়েছিল। এ জন্য নানা ওয়েবসাইটে ঢুঁ মেরে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের কাজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। পরে নানা ধাপ পেরিয়ে রবি আজিয়াটার মানবসম্পদ বিভাগে ইন্টার্ন হিসেবে যোগ দিই। সাধারণ কাজের পাশাপাশি চার মাসের ইন্টার্নশিপে বিভিন্ন দলের সদস্যদের সঙ্গে নানা কাজে যুক্ত ছিলাম। একটি টেলিকম সেবা প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে, তার খুঁটিনাটি সম্পর্কে হাতে–কলমে শেখার সুযোগ হয়েছিল এভাবেই। ইন্টার্নশিপ শেষে রবি আজিয়াটার মার্কেট অপারেশন বিভাগে যোগ দিই। সেলস বা বিক্রয় নিয়ে কাজ করার আগ্রহ ছিল সব সময়। নিজের আগ্রহের জন্যই বিক্রয় বিভাগে চাকরির জন্য আবেদন করি। যেহেতু রবি আজিয়াটার ইন্টার্নশিপ করেছি। তাই চাকরির নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা ছিল। নিয়োগের সময় নিয়োগকর্তারা তরুণ প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব ও কাজের প্রতি তাঁর আগ্রহকে গুরুত্ব দেন বেশি। ইন্টার্নশিপ করার কারণে নিজের দায়িত্ব ও দক্ষতা সম্পর্কে সচেতন ছিলাম। মৌখিক পরীক্ষায় নিজেকে কীভাবে উপস্থাপন করতে হয়, জানতাম। এ ধরনের অভিজ্ঞতা আমাকে চাকরি পেতে সহায়তা করেছে।
ইন্টার্নশিপে সময় নিয়ে শেখার সুযোগ থাকে
শারমিন আক্তার, সিনিয়র অফিসার, প্রবৃদ্ধি প্রকল্প, সুইসকন্ট্যাক্ট
ভিন্ন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে ইন্টার্নশিপ দারুণ সহায়তা করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে মাস্টার্স করার সময় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগী সুইসকন্ট্যাক্টের আর্থসামাজিক উন্নয়ন প্রকল্প ক্যাটালিস্টে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পেয়েছিলাম। ইন্টার্নশিপ যেহেতু পূর্ণকালীন চাকরি নয়, তাই একটু সময় নেওয়ার সুযোগ এখানে থাকে। কীভাবে একটা সংগঠন কাজ করে, যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা ও সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে সংযোগ তৈরি করতে হয়, দলের সঙ্গে কাজ করতে হয়, তা এই ইন্টার্নশিপ থেকে জেনেছি। পেশাদার কোনো পরিবেশে এটাই ছিল আমার প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা। ইন্টার্নশিপ করার মাধ্যমে নতুন একটা প্রতিষ্ঠানের সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি। কীভাবে বিভিন্ন প্রজেক্ট ডিজাইন করতে হয়, কীভাবে সমস্যা সমাধানের কৌশলগুলো প্রয়োগ করতে হয়, জানার সুযোগ মিলেছে। ইন্টার্নশিপ চলাকালেই চাকরির সুযোগ পাই। যে প্রতিষ্ঠানে ইন্টার্নশিপ করছি, সেখানেই চাকরির সুযোগ, ব্যাপারটা নিঃসন্দেহে দারুণ। ব্যবসায়িক পরামর্শক হিসেবে যোগ দিই। ইন্টার্নশিপের অভিজ্ঞতা চাকরিতে নিজেকে মানিয়ে তুলতে দারুণ সহায়তা করেছে। যাঁরা এখন তৃতীয় বা চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন, তাঁদের জন্য একটাই কথা, ইন্টার্নশিপকে অতিগুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করুন। নতুন বিষয় জানতে, পেশাসংক্রান্ত নানা কৌশল বুঝতে, ইন্টার্নশিপের বিকল্প নেই।