যে পরীক্ষার অফিশিয়াল স্কোর ০-৯৯৯, সেই পরীক্ষায় ১২৫৫ নম্বর পেয়েছেন আপনি। কীভাবে সম্ভব হলো?
এমআরসিপি পরীক্ষার স্কোর বা মানবণ্টনের নিয়মটা ঠিক প্রচলিত অন্যান্য পরীক্ষার মতো নয়। এখানে কোন প্রশ্নের জন্য একজন পরীক্ষার্থী কত নম্বর পাবেন, তা আগে থেকে নির্ধারিত থাকে না। পরীক্ষা হয়ে যাওয়ার পর সব পরীক্ষার্থীর পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে প্রশ্নের মানবণ্টন করা হয়। ধরুন, একটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পেরেছেন অধিকাংশ শিক্ষার্থী। সে ক্ষেত্রে সে প্রশ্নের নম্বর কমে যাবে। আবার যে প্রশ্ন তুলনামূলক কঠিন, অর্থাৎ বেশির ভাগ শিক্ষার্থী যেটির উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছেন, সে প্রশ্নের নম্বর অনেকটা বেড়ে যাবে। এভাবে হিসাব–নিকাশ করে প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর ঠিক করা হয় এবং সেই অনুযায়ী প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে নম্বর দেওয়া হয়। রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানসে নম্বর দেওয়ার এ জটিল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হয়। সেখানকার কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, এ পরীক্ষায় একজন শিক্ষার্থীর স্কোর হতে পারে ০-৯৯৯–এর মধ্যে। তবে এ সহজ প্রশ্ন আর কঠিন প্রশ্নের জটিল হিসাব মেলানোর পর কেবল হাতে গোনা দু-একজন শিক্ষার্থীর স্কোরই হাজার ছাড়ায়।
আর কোনো পরীক্ষার্থী কি আপনার মতো স্কোর তুলতে পেরেছেন?
স্কোর জানার পর নিজেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না! রয়্যাল কলেজ অব ফিজিশিয়ানস সব পরীক্ষার্থীর স্কোর একটা গ্রাফের সাহায্যে প্রকাশ করে। এবারের পরীক্ষার ফলাফলের গ্রাফে এক হাজার পেরোনো স্কোর আছে দুটি। একটি আমার, ১২৫৫; অন্যটি ১০২৫। তার আগে নিজেও জানতাম না যে এখানে হাজারের ওপর স্কোর সম্ভব।
তার মানে তো আপনিই সেরা! নিকট অতীতে ফলাফলের গ্রাফে কি কোনো শিক্ষার্থীকে আপনার মতো স্কোর করতে দেখা গিয়েছে?
আগের ফলাফলের গ্রাফগুলো খুঁজে দেখেছি। কোনোটাতে ১০২৫–এর ওপর স্কোর হতে দেখিনি, আর গ্রাফটা সে জন্য ১১০০–তেই তাঁরা লিমিট করে দিতেন। এবার আমার স্কোরটা গ্রাফে আনার জন্য স্কোরের ঘর ১৩০০ পর্যন্ত বিস্তৃত করতে হয়েছে। যুক্তরাজ্যের বন্ধুদের সঙ্গে আলাপ করেও জেনেছি, তাঁরা কেউ এর আগে ফলাফলের এত দূর বিস্তৃত গ্রাফ দেখেননি।
এই দুর্দান্ত সাফল্যের রহস্য কী?
কেবল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েই এই স্কোর হয়েছে, আসলে তা নয়; আমার বিশ্বাস, ঢাকা মেডিকেল কলেজে পড়ার সময় থেকে এ পর্যন্ত যা কিছু শিখেছি, এটা তারই ফল। প্রথম বর্ষ থেকে শিক্ষকদের ক্লাস আর বইপত্র থেকে জ্ঞানার্জনের সূচনা; এরপর তৃতীয় বর্ষ থেকে ওয়ার্ডে রোগী দেখে হাতেকলমে শেখা। এরপর সরকারি চাকরির সূত্রে বিভিন্ন রোগী দেখা, জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটে হৃদ্রোগ বিষয়ে এমডি কোর্সে ভর্তি হওয়া—যেখানে যত অভিজ্ঞতা হয়েছে, পরীক্ষায় সবকিছুই কাজে লেগেছে। এ পরীক্ষায় দুটি আলাদা ‘পেপার’ থাকে। প্রথম ‘পেপার’ পরীক্ষা ভালো হলেও দ্বিতীয় ‘পেপার’ পরীক্ষা দেওয়ার পর মনে হচ্ছিল, আরেকটু ভালোভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত ছিল। আসলে এই ‘পেপার’-এর পরীক্ষার পর বাংলাদেশের কেন্দ্রের প্রায় সব পরীক্ষার্থীই কমবেশি হতাশায় ভুগছিলেন। কারণ, ‘পেপার’টা বেশ কঠিন ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত উপলব্ধি করেছি, মেডিকেল জীবনের শুরু থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে পড়ালেখা করলে বিশেষজ্ঞ হওয়ার পরীক্ষাগুলোতেও ভালো করা সম্ভব। পড়ার বিষয়বস্তু সম্পর্কে শুরু থেকেই স্বচ্ছ ধারণা তৈরি করা জরুরি।
স্নাতকোত্তর পর্যায়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই হয়তো নিজ উদ্যোগে পড়ালেখায় মনোযোগী হন। তবে চিকিৎসক জীবনের এই পর্যায়ে এমআরসিপিসহ অধিকাংশ পরীক্ষাতেই সাফল্য পাওয়া খুব কঠিন। এ ক্ষেত্রে পড়ালেখার বাইরে কি আরও কোনো বিষয় গুরুত্বপূর্ণ?
আত্মবিশ্বাসটা খুব জরুরি। আর উৎসাহ দেওয়ার মতো একজন ভালো ‘মেন্টর’ও প্রয়োজন। আমার ‘মেন্টর’ জাতীয় হৃদ্রোগ ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবদুল মোমেন এবং অধ্যাপক ডা. সালাহউদ্দীন উলুব্বী, যাঁদের কারণে আমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠতে পেরেছি। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পড়ালেখা আবার শুধু নিজেকে নিয়েও নয়। পরিবার-পরিজনের আত্মত্যাগও জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। আমার স্ত্রী এবং পরিবারের অন্যদের আত্মত্যাগও পাথেয় হয়েছে আমার এই পথচলায়।