২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সম্পদ

প্রতি বাংলা নববর্ষের মতো ১৪৩১ সনেও দেশের ক্রীড়া, চলচ্চিত্র, ডিজিটাল মঞ্চ, ব্যবসা, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রের তরুণ প্রতিভাবানদের নিয়ে হাজির হয়েছে প্রথম আলোর শনিবারের ক্রোড়পত্র ‘ছুটির দিনে’। বিশেষ এই আয়োজনে ক্রিকেটার মারুফা আক্তারকে নিয়ে লিখেছেন বিসিবির নারী বিভাগের হেড অব অপারেশনস এবং জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার

মারুফা আক্তার
ছবি: শামসুল হক

অনেকেরই নিশ্চয় এত দিনে মারুফা আক্তারের হার না–মানা জীবনের গল্পটা জানা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এই পেসারের ক্রিকেটার হয়ে ওঠার রোমাঞ্চকর গল্পটা অন্য সবার মতো আমিও শুরুতে সংবাদমাধ্যমে পড়েছি। করোনাকালে নীলফামারীতে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করার অদম্য সেই ছবিটা দেখেছি। সেই মেয়ে এখন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। ভবিষ্যতের তারকা বললেও ভুল হবে না।

মেয়েদের ক্রিকেটের নতুন দায়িত্বে আসার পর মারুফা আক্তারকে এখন আরও কাছ থেকে দেখার সুযোগ পাচ্ছি। মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে তার একটা মিল খুঁজে পাই। আমাদের টেস্ট ক্রিকেটের শুরুর দিকে পেসার বলতে মাশরাফিই ছিল। একজন খেললে মাশরাফিই খেলবে, যেমনটা এখন মেয়েদের ক্রিকেটে মারুফার ক্ষেত্রে হচ্ছে। কিন্তু মাশরাফিকে যেভাবে চোটের সঙ্গে লড়তে হয়েছে, মারুফার ক্ষেত্রে সেটা যেন না হয়, তা দেখতে হবে। এ জন্যই আমরা সামনে যে ভারত সিরিজ আছে, তাতে মারুফার সঙ্গে আরও একজন পেসার রেখেছি। তার ওয়ার্কলোডটা আমাদের খুব ভালোভাবে দেখতে হবে।

আরও পড়ুন
বাংলাদেশ নারী দলের পেসার মারুফা আক্তার
ছবি: শামসুল হক

আমরা তাকে একটু বেশি খেলিয়ে ফেলেছি। ওরা ছোটবেলা থেকে এতটা শক্তিশালী হয়ে গড়ে ওঠেনি। তবু মারুফা যেহেতু আমাদের সেরা বোলারদের একজন, তাকে দিয়েই সবচেয়ে বেশি বোলিং করানো হয়। এ জন্যই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আমাদের সর্বশেষ সিরিজে মারুফাকে ক্লান্ত মনে হয়েছে। সে আমাদের ক্রিকেটের সম্পদ। তাকে ঠিকভাবে গড়ে তোলাটা আমাদের দায়িত্ব।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাফল্যের জন্য মারুফা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন খেলোয়াড়। আমার বিশ্বাস সে অনেক দূর যাবে। আমার এই ভবিষ্যদ্বাণীর পেছনে একটা যুক্তি আছে। ছেলেদের ক্রিকেটে অনেক দেখেছি, যখন খেলোয়াড়েরা সংগ্রাম করে শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসে, তখন কিছুটা হলেও কঠোর পরিশ্রম করা ছেড়ে দেয় তারা। এই মেয়েটা ব্যতিক্রম। সে সাফল্যের জন্য খুবই ক্ষুধার্ত। নিজের অতীতটা সে ভুলে যায়নি। নিজেকে বিশ্বমানের বোলারের কাতারে নিয়ে যেতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে নিয়মিত। আর খেলাটা খুব উপভোগ করে।

একটা ম্যাচ শেষে তাকে দেখে খুব হতাশ মনে হয়েছে। পরে বুঝলাম সে ম্যাচে কন্ডিশনের কারণে স্পিনারদের বেশি ব্যবহার করা হয়েছে, পেসারদের বোলিং করার তেমন সুযোগই হয়নি। সেদিন দলের জন্য অবদান রাখার সুযোগ না পেয়ে মারুফাকে খুব হতাশ মনে হলো। এই মানসিকতাটা খুব জরুরি। বোঝা যায় যে সে খেলতে চায়, ভালো করতে চায়, উপভোগ করতে চায়। যেকোনো খেলোয়াড়ের জন্য এটা খুব জরুরি। খেলাটার প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে। যেকোনো খেলোয়াড়ের স্বপ্নটা হতে হয় বড়। একটা সময় পর সেটা হারিয়ে ফেলায় অনেক খেলোয়াড়কে দেখেছি একটা পর্যায়ের পর আর বেশি দূর যেতে পারেনি। মারুফার মধ্যে তা আছে। সে ভালো করতে চায় এবং সেটা প্রতি ম্যাচেই।

আরও পড়ুন
মারুফাকে সতীর্থদের বাহবা
ছবি: শামসুল হক

মারুফা যদি আরেকটু শক্তিশালী হয়ে ওঠে, তাহলে সে দারুণ করবে। তার বোলিং সামর্থ্য কিন্তু খুবই সহজাত। খুব বেশি প্রশিক্ষণ পেয়ে এই পর্যায়ে আসেনি। তার যা দক্ষতা তা সহজাত, বিশেষ করে ইনসুইং ডেলিভারিটা অসাধারণ। সঙ্গে ফিটনেসটাও জরুরি। কিন্তু জাতীয় দলের বাইরে মেয়েদের সুযোগ-সুবিধা খুবই অপ্রতুল। অবসর সময়ে ট্রেনার রেখে কাজ করা, নিজেকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য পরিশ্রম করে যাওয়া—জাতীয় দলের বলয়ের বাইরে গেলে ওদের এই বিষয়গুলো দেখার কেউ থাকে না।

আমরা যদি ওদের সারা বছর দেখতে পারি, কাজের মধ্যে রাখতে পারি, তাহলে মারুফারা আরও পেশাদার হয়ে উঠবে, ভালো করবে। এসব নিয়ে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ওদের সুযোগ-সুবিধাও আস্তে আস্তে বাড়ছে। আমি বলব না যে ভালো পর্যায়ে গিয়েছে। এরপরও এখন সারা বছর খেলার মধ্যে থাকছে। সামনে আরও ভালো হবে। মেয়েদের ক্রিকেটে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও আছে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের সমর্থন না থাকলে মেয়েদের ক্রিকেটার হওয়া খুব কঠিন। মারুফা ওই পারিপার্শ্বিক চ্যালেঞ্জ থেকে বেরিয়ে এসেছে। আমাদের মেয়েরা এখন পরিচিতিও পাচ্ছে। খুব করে আশা করি, সবার সমর্থনে একদিন মারুফা হয়ে উঠবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঝলমলে তারকা।

অনুলিখন: মোহাম্মদ জুবাইর