বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি হওয়া উচিত ছাত্র প্রতিনিধিকেন্দ্রিক

ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্ররাজনীতি প্রসঙ্গে চলছে নানা আলাপ। শিক্ষার্থীরা কী বলছেন?

ছাত্ররাজনীতি থাকলে, সেই রাজনীতি হওয়া উচিত ছাত্র প্রতিনিধিকেন্দ্রিক

ইশতিয়াক ফেরদৌস, গণিত বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

ইশতিয়াক ফেরদৌস, গণিত বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি থাকলে, সেই ছাত্ররাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য হয়ে ওঠে মাতৃসংগঠনের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করা। এই স্বার্থ কতটুকু ব্যক্তিকেন্দ্রিক আর কতটুকু রাজনৈতিক—সে সম্পর্কে সবারই ধারণা আছে। সুতরাং বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি থাকলে সেই রাজনীতি হওয়া উচিত ছাত্র প্রতিনিধিকেন্দ্রিক, ছাত্র সংসদকেন্দ্রিক। আমরা বিভিন্ন ছাত্র সংসদে দেখেছি, লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনগুলো নিজেদের প্যানেল তৈরি করে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পরবর্তী সময়ে তাঁরাই সাধারণ শিক্ষার্থীদের গলার কাঁটা হয়ে যায়। তাই কোনো লেজুড়বৃত্তিক রাজনৈতিক পরিচয়ে নয়, বরং নিজের দক্ষতা ও নেতৃত্বের পরিচয়েই এই ছাত্র সংসদগুলোকে পরিচালনা করতে হবে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পেছনের মানুষগুলোকেও স্বচ্ছ হতে হবে। কোনো নোংরা রাজনৈতিক ‘ফুটপ্রিন্ট’ ছেড়ে আসা শিক্ষক নয়, নিরপেক্ষ শিক্ষকদের নিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের কাজ করতে হবে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ছাত্ররাজনীতি দরকার

আদিয়া সুলতানা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

আদিয়া সুলতানা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশ সৃষ্টির পেছনে দেশলাইয়ের কাঠির মতো কাজ করেছিল। আবার, ওই বায়ান্নই ছিল দেশে ছাত্ররাজনীতির সূচনালগ্ন। ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, যখনই শোষণ-নিপীড়ন বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে, তখনই ছাত্ররা বুক চিতিয়ে লড়াই করেছে। তরুণদের রুখে দেওয়া অসম্ভব। আমাদের মতো গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে সড়ক নিরাপত্তার মতো আন্দোলনেও ছাত্রদের দরকার হয়; সেখানে ছাত্ররাজনীতিকে অস্বীকার করার উপায় নেই। তাই আমার কাছে মনে হয় বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জন্য ছাত্ররাজনীতি দরকার। রাজনীতি না থাকলে এখানে শাসনের নামে শোষণ চলতেই থাকবে। কিন্তু সেই ছাত্ররাজনীতি হতে হবে রাজার নীতির মতো। আমাদের দেশে এখন যে ছাত্ররাজনীতি বলবৎ আছে, তা নিজেদের স্বার্থ আর ক্ষমতা লাভের রাজনীতি। এ সময় একজন ছাত্ররাজনীতি করতে চায় চাকরি, সুবিধা ও সম্মানের জন্য; যা ছাত্ররাজনীতির ভিত্তি হতে পারে না। ‘আগে আমি নয়, আগে দেশ’ এই মনোভাব আমাদের লালন করতে হবে।

আরও পড়ুন

সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত

শ্রাবনী সরকার, চারুকলা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

শ্রাবনী সরকার, চারুকলা বিভাগ, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়

ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে একটা বিতর্ক দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। একদিকে একে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নেতৃত্বের চর্চার ক্ষেত্র হিসেবে দেখা হয়, অন্যদিকে সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার কারণ মনে করা হয়। আমি মনে করি, ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত। তবে তা সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খলভাবে হতে হবে। কারণ, এটি নেতৃত্বের গুণাবলি গড়ে তোলে। অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে শেখায়। আবার, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে যদি সমস্যা দেখা দেয়, তখন ছাত্ররাজনীতি অধিকার রক্ষা ও দাবি আদায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ছাত্ররাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দলীয়ভাবে কাজ করতে শেখে। এতে তাদের মধ্যে একতা ও সংগঠন গড়ে ওঠে, যা ভবিষ্যতের যেকোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হয়। সব শেষে বলব, ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজনীয়তা আছে, তবে তা হতে হবে সহিংসতা, দলীয় প্রভাব ও বিশৃঙ্খলামুক্ত।

চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গঠন করা যেতে পারে

তাসলিমা জান্নাত, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
ছবি: সংগৃহীত

তাসলিমা জান্নাত, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বের বিকাশ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলোর ক্ষেত্রে ছাত্ররাজনীতি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্য, বিগত বছরগুলোতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাজনীতি দলীয় লেজুড়বৃত্তিতে পরিণত হয়েছিল। ফলে শিক্ষার্থীরা এখানে দলীয় স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এমন রাজনীতি শিক্ষার্থীদের অধিকারকে সামনে আনতে ব্যর্থ হয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ নষ্ট করে। এমন দলীয় ছাত্ররাজনীতি আমাদের ক্যাম্পাসে কাম্য নয়। তবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি থাকা উচিত, এবং সেটা যেন গণতান্ত্রিক, স্বচ্ছ ও শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিবেদিত হয়। এ ক্ষেত্রে ‘ছাত্র সংসদ’ একটি কার্যকর পদ্ধতি হতে পারে। চাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে ছাত্র সংসদ গঠন করা যেতে পারে, যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব অধিকার, মতামত ও সমস্যা নিয়ে সরাসরি আলোচনার সুযোগ পাবে। এটি একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে কাজ করবে এবং নেতৃত্ব বিকাশের ক্ষেত্র তৈরি করবে।