উচ্চশিক্ষার জন্য জার্মানি যেতে চান?

উচ্চশিক্ষার জন্য যাঁরা ইউরোপে যেতে চান, তাঁদের অনেকেরই পছন্দের গন্তব্য জার্মানি। প্রতিবছর সে দেশে পড়তে যাচ্ছেন বাংলাদেশের বহু শিক্ষার্থী। জার্মানিতে পড়ালেখা বা বৃত্তির সুযোগগুলো কী কী, জানতে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম আমরা।

জার্মান ভাষা শিখে নিলে অনেক ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়
ছবি: পেক্সেলস ডট কম

স্নাতক করতে চাইলে

কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো জার্মান সরকার স্বীকৃত, জেনে নেওয়া যাবে এই ওয়েবসাইটে। স্নাতকে ভর্তি হতে হলে উচ্চমাধ্যমিকের সনদ, জার্মান ভাষা দক্ষতার সনদ, মোটিভেশন লেটার ও প্রয়োজনীয় কাগজ জমা দিতে হয়। স্নাতকে অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্মান ভাষায় পড়ানো হয় বলে জার্মান ভাষা দক্ষতা সনদের প্রয়োজন পড়বে। অন্তত বি২ লেভেল পর্যন্ত জার্মান ভাষা জানা থাকা দরকার।

বৃত্তির সুযোগ

জার্মানির ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন অশ্চুতা নন্দ। লেখাপড়ার পাশাপাশি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স প্রকৌশলী হিসেবে খণ্ডকালীন চাকরি করেন মেরেন্টিস নামের জার্মান কোম্পানিতে। লেখাপড়ার বিষয়—কমিউনিকেশন অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে আমি আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্নাতক করি। জার্মান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো টিউশন ফি দিতে হয় না। তবে থাকা–খাওয়ার খরচ নিজেকেই বহন করতে হয়। এক বছর থাকা–খাওয়ার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, তা আগে পাঠিয়ে দিতে হয়। জার্মানিতে আসার পর প্রতি মাসে সেখান থেকে আপনাকে টাকা দেওয়া হবে। এখন এ অর্থের পরিমাণ ১১ হাজার ২০৮ ইউরো।’

জনপ্রিয় বৃত্তি

ডিএএডি জার্মানির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৃত্তি। জার্মান একাডেমিক এক্সচেঞ্জ সার্ভিসের অর্থায়নে এ বৃত্তি দেওয়া হয়। উন্নয়নশীল দেশের স্নাতকোত্তর বা পিএইচডি শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারেন। যদিও সব বিষয়ে এ বৃত্তি পাওয়া যায় না। যেসব বিষয়ে বৃত্তি পাওয়া যায়: ইকোনমিক সায়েন্স, ব্যবসায় প্রশাসন, পলিটিক্যাল ইকোনমিকস, ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিলেটেড সায়েন্স, গণিত, রিজিওনাল প্ল্যানিং, কৃষি ও বনবিজ্ঞান, পরিবেশবিদ্যা, গণস্বাস্থ্য, ভেটেরিনারি মেডিসিন, সামাজিক বিজ্ঞান, শিক্ষা ও আইন, গণমাধ্যম ইত্যাদি। আবেদনের যোগ্যতা হিসেবে অবশ্যই স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি ও নিজ কর্মক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আইইএলটিএস ফলাফল ন্যূনতম ৬.৫ থাকা জরুরি। জার্মান ভাষায় পড়তে চাইলে সে ভাষায় ন্যূনতম বি১ পর্যায়ের দক্ষতা প্রয়োজন হবে। এ বৃত্তির বিস্তারিত জানার ঠিকানা: www.daad.de/en

এ ছাড়া ইরাসমাস স্কলারশিপে শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের অন্যান্য দেশেও পড়া যায়। এ বৃত্তির জন্য আবেদনকারীর আইইএলটিএস স্কোর ন্যূনতম ৬.৫ থাকতে হবে। তবে কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হবে না। নিজের রিসার্চ প্রপোজাল (গবেষণা প্রস্তাব) বা স্টাডি প্ল্যান (পাঠপরিকল্পনা) ও রিকমেন্ডেশন লেটার (সুপারিশপত্র) জমা দিতে হবে। বিস্তারিত জানা যাবে এই ওয়েবসাইটে

টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব শেমনিৎজে ওয়েব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করছেন জাহান আলী। তিনি জানান, এ বৃত্তির মাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী জার্মানিতে পড়ার সুযোগ পান। জার্মানিতে আসার পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনও কিছু বৃত্তি দেয়। জার্মানিতে এসে পাঁচ বছর থাকার পর স্টুডিয়েসটিফটাং বৃত্তি পাওয়া যায়। অ্যাভিসিনা স্টুডিয়েনভার্ক মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য বেশ ভালো বৃত্তি। জার্মান রেসিডেন্স পারমিট ও ভাষা দক্ষতা সি-১ হলে আবেদন করা যায়। স্টিফটাং দ্যর ডয়েশেনভারশ্যাপ বৃত্তির জন্য জার্মান ভাষা দক্ষতা সি-১ ও জার্মান রেসিডেন্স পারমিট থাকতে হবে।

আইইএলটিএস স্কোর

ভিসার জন্য ন্যূনতম ৬ পয়েন্টের প্রয়োজন হবে। জাহান আলী জানান, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছি। আমার মতো শিক্ষার্থীদের জন্য ইংরেজি সনদ হিসেবে আইইএলটিএস প্রয়োজন হয়। ন্যূনতম ৬ প্রয়োজনীয় হলেও বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে ৬.৫-ও চাওয়া হয়।’

জার্মান ভাষা

চাকরির ক্ষেত্রে কিংবা দৈনন্দিন কাজের জন্যও জার্মান শেখা জরুরি। শিক্ষার্থী হিসেবে যদি কাজের সুযোগ থাকে, তাহলে জার্মান ভাষা জানা থাকলে অবশ্যই আপনি এগিয়ে থাকবেন। বাংলাদেশে এখন জার্মান ভাষা শেখার নানা সুযোগ আছে। যেমন ঢাকার গ্যেটে ইনস্টিটিউটে শিখতে পারেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশিক্ষাকেন্দ্রেও জার্মান শেখা যায়। জাহান আলী বলেন, ‘আমি কিন্তু জার্মানিতে এসে ভাষা শিখেছি। তবে নতুন শিক্ষার্থীদের বলব, অন্তত বি২ পর্যায় পর্যন্ত ভাষা শিখে আসতে পারলে সুবিধা হবে।’

কাজের সুযোগ

ইউনিভার্সিটি অব স্টুডগার্টে গাণিতিক ভাষাতত্ত্ব বিষয়ে মাস্টার্স করেছেন আদনান আহমেদ। তিনি জানান, শিক্ষার্থী হিসেবে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজের অনুমতি পাওয়া যায়। এ ছাড়া বছরে দুবার সেমিস্টার ব্রেকে পূর্ণকালীন কাজ করা যায়। জার্মান ভাষা জানা থাকলে ছোট-বড় যেকোনো শহরেই কাজ পাওয়া সহজ। যাঁরা তথ্যপ্রযুক্তি খাতে পড়াশোনা করেছেন, তাঁরা কোম্পানিগুলোতে ওয়ার্ক স্টুডেন্ট হিসেবে চাকরি করতে পারেন। এ ছাড়া অনেক স্টার্টআপেও কাজের সুযোগ আছে।