তুই কেমন পোলা, আব্বা তোরে বাতাস করছে আর তুই হা কইরা ঘুমাইছস
প্রতিবছর জুন মাসের তৃতীয় রোববার পালিত হয় বাবা দিবস। সেই হিসাবে কাল বাবা দিবস। দিনটি উপলক্ষে বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে পাঠকের কাছে লেখা চেয়েছিল ‘ছুটির দিনে’। আমাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে লেখা পাঠিয়েছেন অনেক পাঠক। নির্বাচিত লেখাগুলোর একটি পড়ুন এখানে।
আমি বাপের বাধ্য ছেলে নই। তিনি আমাকে ডানে বললে আমি যথেষ্ট যুক্তি প্রমাণ দিয়ে বাঁ দিকে চলতাম। সে হিসেবে আমি ছিলাম ‘এই ছেলের কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না’ টাইপের ছেলে।
এক রাতে বাড়িতে মেহমান এসেছে। রাতে তাই আব্বাকে আমার ঘরে এসে ঘুমাতে হলো। রাত বারোটার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেল। তখন গ্রীষ্মকাল। গরমে সারা শরীর ঘেমে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা। আব্বাকেও দেখলাম খালি এই পাশ ওই পাশ করছেন। হঠাৎ মাথায় এল, আজকে একটু ভালো ছেলে হই। যতক্ষণ কারেন্ট আসবে না, আব্বাকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করব।
যেই ভাবা সেই কাজ। আব্বাকে বাতাস করতে শুরু করলাম। আব্বা স্নেহবশত একবার বললেন, ‘লাগব না।’
আমি বাতাস করতে থাকলাম। তারপর আব্বা চুপচাপ। বোঝা যাচ্ছে আরাম পেয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই আব্বার শ্বাস ভারী হয়ে এল। আব্বা নাক ডাকা শুরু করলেন। আব্বার আরামটা আমিও অনুভব করছিলাম। তাই হাতপাখা ঘুরাতে ভালোই লাগছিল।
এভাবে এক ঘণ্টা গেল। আব্বার নড়াচড়া নেই। এক ঘণ্টা পর আব্বা ডান কাত থেকে বাঁ কাত হলেন। ঘোরার সময় ঘুম ঘুম কণ্ঠে শুধু বললেন, ‘আর লাগবে না, ঘুমায়া যা।’ আমি বাতাস করতেই থাকলাম। আব্বাকে আরামে ঘুমাইতে দেখে আসলেই আমার ভালো লাগছিল। কারেন্ট এল রাত সাড়ে তিনটার দিকে। এর মধ্যে আব্বা আরও একবার বলছিলেন, ‘লাগবে না।’ সাড়ে তিনটায় আমি ঘুমাতে গেলাম। মনের মধ্যে একটা পরিতৃপ্তি। আজ অনেক পিতৃসেবা করা গেল।
সকাল সাতটায় আবার কারেন্ট গেল। আমি তখন গভীর ঘুমে। গরমে একবার সম্ভবত ঘুম ভেঙেছিল। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গেই আবার ঘুমিয়ে পড়েছি। যথারীতি নয়টার পর ঘুম থেকে উঠলাম। আব্বা তখন বাজারে। আমি বেসিনের সামনে দাঁত মাজছি। হঠাৎ ছোট বোন একটা ঝাড়ি দিয়ে বলল, ‘ভালোই তো ঘুম দিলি। সকাল থেকে কারেন্ট নাই, গরমে আমরা কেউ ঘুমাইতে পারি নাই। তুই কেমন পোলা, সকাল সাতটা থেকে আব্বা তোরে বাতাস করছে আর তুই হা কইরা ঘুমাইছস।’
রাতে আব্বারে বাতাস করে মনে মনে যে ভাবটা নিয়েছিলাম, আব্বা সেটা একবেলাও রাখতে দিলেন না। আহা, আব্বা।