কোল্ডপ্লের যে গান শুনে চোখের পানি ধরে রাখতে পারি না
আজ বাবা দিবস। এ উপলক্ষে পাঠকের কাছ থেকে লেখা আহ্বান করেছিলাম আমরা। বাবাকে নিয়ে লিখেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী শিকদার মো. মেহেদী হাসান
আমার বাবা ছিলেন পরিবারের বড় ছেলে। নটর ডেম কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন; কিন্তু একে তো বড় পরিবার, তার ওপর প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক দাদার স্বল্প আয়, তাই শেষ পর্যন্ত নটর ডেমে পড়া বাবার হয়ে ওঠেনি। ভর্তি হন কবি নজরুল কলেজে। কলেজজীবন থেকেই টিউশনি করে নিজের খরচ চালিয়েছেন। একসময় ভর্তি হন ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট কোর্সে। পড়া শেষে চাকরিও পেয়ে যান সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে বিভাগে, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট হিসেবে। এই পোস্টেই কেটেছে তাঁর পেশাজীবন।
এই পরিশ্রমী মানুষ ছিলেন বলেই তাঁর তুলনায় আমার জীবনটা অনেক আলাদা। জীবনে যা চেয়েছি, বেশির ভাগই পেয়েছি। হোক সেটা আগে বা পরে।
ক্যাডেট কলেজের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে স্কুলের স্বাভাবিক কার্যক্রমের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারছিলাম না। তখন অফিসে যাওয়ার সময় আমাকে সঙ্গে নিয়ে যেতেন বাবা। হাসপাতালের এক্স–রে মেশিন তখন নষ্ট ছিল, তাই রোগীর চাপও ছিল না। সেই সময়টা বাবার কাছে গণিত ও বিজ্ঞান পড়েই কেটেছে। শেষ পর্যন্ত ক্যাডেটে পড়া আমার হয়নি; কিন্তু বাবার মানসিক সমর্থন ছিল সব সময়।
যেদিন নটর ডেম কলেজে ভর্তির সুযোগ পাই, সেদিনই বোধ হয় বাবাকে সবচেয়ে খুশি দেখেছি। তাঁর অপূর্ণ স্বপ্নটা ছেলে পূরণ করছে, এটাই ছিল তাঁর কাছে বড় আনন্দ। খুব উৎসাহ নিয়ে আমাকে ভর্তি করিয়েছেন, ঢাকায় হোস্টেলে তুলে দিয়েছেন; কিন্তু সুখ বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। আমার ক্লাস শুরু হওয়ার ৯ দিন অতিবাহিত হওয়ার আগেই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা। আমাদের জীবনে নেমে আসে শোকের ছায়া।
এত দিন যা চেয়েছি, যখন চেয়েছি, পেয়েছি। এখনো অনেক কিছুই পাই। যা পাই না, তা হলো বাবার সঙ্গে গল্প করা, পৃথিবীর বিভিন্ন বিষয়ে তর্ক-বিতর্ক করার আনন্দ। কেমন শূন্য লাগে। কোনো আনন্দের মুহূর্তে ছুটে যেতে চাই বাবাকে খবরটা দিতে; কিন্তু আর সে উপায় নেই।
এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগে পড়ছি। পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গেও যুক্ত আছি। এখানে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়ার পরিকল্পনা আছে। এসব কিছুই সম্ভব হয়েছে ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে শেখা ভাষা, যুক্তি আর গণিতের ওপর ভিত্তি করে।
বাবা কখনো ঠিক করে দিতেন না যে তোমাকে এটাই করতে হবে বা এটাই হতে হবে। আমাকে তিনি শুধু বিকল্পগুলো দেখিয়ে দিতেন। সব কটির ভালো ও খারাপ দিক বলতেন, যেন আমি নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারি। তাঁর দেওয়া এই শক্তি যে জীবনে কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা এখন বুঝি।
কোল্ডপ্লের একটা গান আছে, নাম ড্যাডি। পুরো গানটাই বাবার কথা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু একটা লাইনে চোখের পানি আটকে রাখা যায় না।
‘লুক ড্যাড, উই গট দ্য সেইম হেয়ার; অ্যান্ড ডেডি, ইটস মাই বার্থডে।’