বিয়ের পর কেন ওজন বাড়ে
যতটা খাচ্ছেন, অর্থাৎ যতটা ক্যালরি গ্রহণ করছেন, ততটা ক্যালরি পোড়াতে না পারলে ওজন বাড়বে। সহজ হিসাব। খাবার আর কায়িক পরিশ্রমই ওজনের নির্ণায়ক হিসেবে বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত। এর বাইরেও অবশ্য কিছু রোগের সঙ্গে ওজন বাড়ার সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু এসবের সঙ্গে বিয়ের তো সরাসরি কোনো যোগসূত্র নেই। তাহলে বিয়ের পর কেন কারও কারও ওজন বাড়ে? জানাচ্ছেন স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেডের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. তাসনোভা মাহিন।
আমাদের দেশে এখন অনেক বিয়ের আয়োজনই হয় লম্বা সময় ধরে। এনগেজমেন্ট, প্রিওয়েডিং ফটোশুট, গায়েহলুদ, মেহেদি সন্ধ্যাসহ নানা আয়োজনে রাখা হয় উচ্চ ক্যালরির খাবার-দাবারের ব্যবস্থা। বিয়ে বা বউভাতের জম্পেশ খানাপিনা তো আছেই। তবে এটাও ঠিক, নিজের বিয়ের খাবার হয়তো কবজি ডুবিয়ে খাওয়ার সুযোগ হয় না! তবে বিয়ের কেনাকাটা থেকে শুরু করে আয়োজনের নানা ঝক্কিতে স্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস ধরে রাখাটা মুশকিল হয়ে পড়ে, সেটি কিন্তু অস্বীকার করার উপায় নেই। বাজার করতে গিয়ে বেলা গড়িয়ে গেল, তো খেয়ে নিলেন একখানা বার্গার। সহজলভ্য বিরিয়ানি, তেহারি বা মোরগ পোলাওয়ের মতো পদ খাওয়া হয়ে গেল বেশ কয়েকটা দিন, বেশ কয়েক বেলা।
বিয়েতেই শেষ না
বিয়ের পর শুরু হয় আত্মীয়স্বজনের বাসায় নেমন্তন্নের পালা। সেখানেও ভূরিভোজের আয়োজন। নবদম্পতি একটু আলাদাভাবে সময় কাটাতে চান? তো সেই কোনো না কোনো রেস্তোরাঁয় যাওয়া, সঙ্গে অবধারিতভাবে কিছু বাড়তি খাওয়াদাওয়া। মধুচন্দ্রিমায় নতুন দেশে গিয়ে নিত্যনতুন পদ চেখে দেখার লোভটাও সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ে। মোদ্দাকথা, বিয়ের আয়োজনের শুরু থেকে বিয়ে–পরবর্তী বেশ কয়েকটা দিন একটানা উচ্চ মাত্রায় ক্যালরি গ্রহণ হয়েই যায়। আবার এই বাড়তি ক্যালরি পোড়ানোর সুযোগটাও এ সময়ে একটু কম থাকে। এতসবের মধ্যে শরীরচর্চার সময় কোথায়, বলুন! সব মিলিয়ে ওজনটা তাই বাড়তেই থাকে।
মনের ব্যাপারস্যাপার
বিয়ে তো কেবল আনন্দের উপলক্ষই নয়, এ হলো জীবনের এক নতুন অধ্যায়। একজন মানুষের সঙ্গে নিজের জীবনটাকে ভাগ করে নেওয়া। বিয়েতে দায়িত্বও বাড়ে। নতুন জীবনে মানিয়ে নেওয়াটাও চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে। জীবনসঙ্গীর কিছু ব্যক্তিগত বিষয় অপছন্দ হতে পারে। শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে কিছুটা মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে। সামাজিক কারণেই বরের চেয়ে বউয়ের জন্য এই বিষয়গুলো সামলে নেওয়াটা একটু বেশি কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এই সব মিলিয়ে মনের ওপর খানিকটা প্রভাব পড়তে পারে বর–কনে দুজনেরই। আর এই কারণে তাঁদের একটু বেশি খাওয়ার প্রবণতা দেখা দিতে পারে কিংবা উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, মুখরোচক খাবারের প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হতে পারে।
মানিয়ে নেওয়ার আরও ব্যাপার
নতুন পরিবারের খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যায় পড়তে পারেন কেউ কেউ। সে ক্ষেত্রে সহজ সমাধান হয়ে দাঁড়ায় সহজলভ্য বাইরের খাবার কিংবা শুকনা খাবার। বিস্কুট, কুকিজ, কেক, বাটারবান বা এ–জাতীয় অন্যান্য খাবার বেশি খাওয়া হতে পারে। সামাজিক নিয়মের কারণেই নারীরা এমন সমস্যায় বেশি পড়ে থাকেন। কারও কারও ঘুমের ব্যাঘাতও ঘটতে পারে। সে ক্ষেত্রেও উচ্চ ক্যালরিযুক্ত (হালকা স্ন্যাকস) গ্রহণের প্রবণতা বাড়তে পারে।
যে সমস্যায় কেবল নারীরাই পড়েন
জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতির সঙ্গেও ওজনের সম্পর্ক রয়েছে। হরমোনযুক্ত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন কিংবা হরমোনভিত্তিক জন্মনিয়ন্ত্রণ ইনজেকশন গ্রহণ করা হলে ওজন বাড়ার ঝুঁকি বাড়ে। তাই জন্মনিয়ন্ত্রণপদ্ধতি গ্রহণের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ভালো। কোন পদ্ধতিটি আপনার জন্য সেরা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা তাহলে সহজ হবে।