দর্জিবাড়ি যাওয়ার আগে জেনে রাখুন
এই এক মাস দরজিবাড়িগুলোতে রাত–দিন এক হয়ে যাবে। থামবে না কাঁচির ক্যাচঁক্যাঁচ আর সেলাই মেশিনের খটখট শব্দ। তৈরি হবে হাজার হাজার নতুন পোশাক। শেষ মুহূর্তে আড়াই গজ কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে লেইস-ফিতা নিয়ে দরজি মামার কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতে না চাইলে এখনই ঈদের পোশাকের ফরমাশ দিয়ে দিতে পারেন। ঈদ চলতি ফ্যাশনের একটি বড় অংশের কারিগর এই দরজিমশাইরা। সমসাময়িক ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ঈদের পোশাকের ফরমাশে এরই মধ্যে জমজমাট ঢাকার দরজির দোকানগুলো। পোশাকে নতুন সংযোজন, কাট, ঝুল, চলতি ফ্যাশনধারার সবকিছুই দরজিদের নখদর্পণে। ঈদের পোশাক তৈরি করতে দরজিবাড়িতে যাওয়ার আগে এখানে জেনে নিন, ঢাকার কোথায় কেমন ব্যস্ততা চলছে দরজিদের।
কেমন হালচাল
বেশ কিছুদিন ধরেই ঢিলেঢালা কামিজের ফরমাশ বেশি পাচ্ছেন দরজিরা; ঈদের পোশাকেও তা–ই। ঢাকার প্রিয়াঙ্গন শপিং সেন্টারের মারিয়া ফ্যাশন টেইলার্সের মাস্টার মোহাম্মদ ইমন বলেন, ‘এবার ঈদে বেশ গরম থাকবে। সে কথা মাথায় রেখেই সবাই আরামদায়ক পোশাক বানাতে চাইবেন। এর মধ্যে ঈদের কাজের যেসব ফরমাশ পড়েছে, সেগুলো বেশ ঢিলেঢালা। কিন্তু তাতে চাহিদানুযায়ী নকশার অনুরোধ করছেন কাস্টমার।’
ইন্টারনেটে নানান দেশি-বিদেশি নকশা দেখে এসে নতুন সব নকশার ফরমাশ করছেন নারীরা, জানান নিউমার্কেটের তৃতীয় তলার আবরু লেডিস ফ্যাশনের মাস্টার মোহাম্মদ মহসিন। তিনি বলেন, ‘কিছুদিন আগেও ঈদে আনারকলি, চুড়িদার, মাসাককালি, শারারা, ঘারারা–জাতীয় পোশাকের খুব চাহিদা ছিল। এখনো যে নেই তা নয়, কিন্তু কমেছে। এখন বেশি চলছে কামিজ-প্যান্ট, বিশেষ করে কো-অর্ড সেট।’
একই কথা শোনা গেল রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত গুলশানের দরজিদের মুখেও। গুলশানের পিংক সিটি শপিং মলের প্রথম তলার পিংক লেডি দরজিবাড়ির স্বত্বাধিকারী হাসিদুল ইসলাম বলেন, ‘কো-অর্ড সেট আর কামিজের পাশাপাশি নায়রা ও আলিয়া কাটের জামাও বেশ চলছে এবার। ভিন্নভাবে কুঁচি দেওয়া এই ধরনের পোশাক ঈদে ফ্যাশনে ভালো চলবে।’
নিচের দিকে কী
কামিজের সঙ্গে পায়জামার পরিবর্তে প্যান্টের চাহিদা বেশি। ঢাকার বিভিন্ন জায়গার দরজিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, একেক জায়গায় প্যান্টের স্টাইল একেক রকম, বিশেষ করে ঘেরের দিক দিয়ে। গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরের দিকে ফিটিং প্যান্ট বেশি চললেও তেজগাঁও, ফার্মগেট ও উত্তরার দিকে ঢিলেঢালা প্যান্টের ফরমাশ বেশি পান দরজিরা। দেখা যাচ্ছে নানান নকশাও। ধানমন্ডির মিরপুর রোডের গুলরাজ দরজিবাড়ির মোহাম্মদ রাসেল বলেন, প্যান্টের নিচের দিকে পাঁচ থেকে ছয়টি কুঁচি দিয়ে নকশা করতে বলেন অনেকে। এ ছাড়া কামিজের সঙ্গে ম্যাচিং লেইস প্যান্টের নিচে লাগানো হয়। মুক্তা বা বোতাম লাগানোর ফরমাশও থাকে। প্যান্ট ছাড়াও পালাজ্জো, ধুতি, শারারা ও ফ্লেয়ার প্যান্ট তৈরি করছেন দরজিরা। দরজি মোহাম্মদ রাসেল বলেন, প্যান্ট হতে হবে কামিজ বা টপের সঙ্গে মানানসই। খাটো কামিজের সঙ্গে ফ্লেয়ার প্যান্ট, শারারা, পালাজ্জো ও ধুতি পায়জামা সুন্দর লাগে। আর লম্বা কামিজের সঙ্গে মানায় স্ট্রেইট কাটের প্যান্ট।
শুধু জামা ও প্যান্ট তৈরি করেই ফুরসত নেই দরজিদের। তৈরি করতে হচ্ছে ওড়নাও। নেট, জরজেট, মসলিন ইত্যাদি কাপড় ও লেইস কিনে ওড়না তৈরি করতে দরজিদের দ্বারস্থ হচ্ছেন নারীরা। ফার্মগেটের অনন্যা টেইলার্সের দরজি মো. মাহফুজ বলছিলেন, ‘যেকোনো কাপড় দিয়ে ওড়না তৈরি করতে কাপড় কিনতে হবে আড়াই গজ আর চারপাশে লেইস লাগাতে চাইলে প্রয়োজন প্রায় সাত গজ লেইস। কেনার সময় একবারে এই মাপে কিনলে খরচও কম পড়বে।’
ঈদ–ফ্যাশনের হালচাল তো জানলেন। পছন্দের নকশা নিয়ে এবার বেরিয়ে পড়ুন। খুঁজে খুঁজে কাপড়, লেইস কিনে এনে জোড়া দিন দরজির কাছে। তাঁরা ঈদকে রাঙিয়ে দেবেন আপনার ইচ্ছেমতো।
কাপড়ের সঙ্গে যা যা
কামিজে লেইসের ব্যবহার অনেক বেড়েছে, জানালেন নিউমার্কেট, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, মিরপুর, ধানমন্ডি ও গুলশানের দরজিরা। মিরপুর–১০ নম্বরের হোপ স্কুলের বিপরীতে রিপন দরজিবাড়ির মাস্টার মোহাম্মদ সাইমন বলেন, ‘গলায়, হাতেও জামার নিচের দিকে লাগানোর জন্য কাপড়ের সঙ্গে ম্যাচিং লেইস কিনে দিচ্ছেন কাস্টমার। মোটা ও ভারী লেইসের বদলে হালকা ও চিকন লেইস বেশি পছন্দ করছেন নারীরা।’ ফার্মগেটের ফার্মভিউ সুপার মার্কেটের তৃতীয় তলার অনন্যা টেইলার্সের প্রধান দরজি মোহাম্মদ মাহফুজ বলেন, ‘থ্রি-কোয়ার্টারের পরিবর্তে বেশি ফরমাশ পাচ্ছি ফোর-কোয়ার্টার ও ফুলহাতার জামার। মাইক, মৌসুমি ও লেয়ার–হাতা ছাড়াও কুঁচি করা হাতা চান অনেকে। তবে হাতের নিচের দিকে লেইসটাই বেশি চলছে।’ কামিজে শার্ট কলার, কাফতান, ভি-কাট গলা ছাড়াও চলছে বোট–গলার নকশা। নতুনের মধ্যে থাকছে কাটওয়ার্কের ফুলকারি গলা।