জগন্নাথের এই ছাত্র একাই বানিয়েছেন অ্যানিমেশন ছবি
জিসান ইসলাম যখন আদমজী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুলে নবম শ্রেণির ছাত্র, তখন থেকেই তাঁর ভাবনার জগতে থ্রিডি অ্যানিমেশন। ভাবতেন, ডিজনির ছবিগুলো আসলে তৈরি হয় কীভাবে? একদিন বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারলেন, ব্লেন্ডার নামে একটা সফটওয়্যার রয়েছে, যার মাধ্যমে অ্যানিমেটেড ছবি বানানো যায়। যেন এই খবরের অপেক্ষাতেই ছিলেন জিসান। দেরি না করে মেমোরি কার্ডে সফটওয়্যার ও কিছু সহায়ক ভিডিও নিয়ে নিলেন। তখন অবশ্য বেশি দূর এগোনো হয়নি। নিজের মুঠোফোন, বাসায় ওয়াই–ফাই সংযোগ, কিছুই ছিল না।
২০২২ সালে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলো। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে সুযোগ পেলেন জিসান। ক্লাস শুরুর আগে হাতে অফুরন্ত সময়। কী করা যায়? গুগল ও ইউটিউবে থ্রিডি অ্যানিমেশন ভিডিও, সংশ্লিষ্ট ব্লগ ও টিউটোরিয়াল দেখা শুরু করলেন। পাশাপাশি বাসায় পুরোনো কম্পিউটারে চলল অনুশীলন।
প্রথম যে ত্রিমাত্রিক ছবিটি তৈরি করেছিলেন, সেটা ছিল একটা ডোনাট। এরপর আরও চারবার ডোনাট বানিয়ে মোটামুটি দক্ষ ‘শেফ’ হয়ে ওঠেন জিসান। ধীরে ধীরে গ্লাস, মগ, প্লেট তৈরিতে মনোযোগ দেন। জিসান বলেন, ‘কম্পিউটারের হার্ডওয়্যারের সীমাবদ্ধতার জন্য গাড়ি বা মানবদেহের মতো জটিল বস্তু তৈরি করতে পারতাম না। এ কারণে ছোট ছোট কাজ করতাম। এর মধ্যেও পুরোনো কম্পিউটারটি বারবার হ্যাং করত, নষ্ট হতো।’
একদিন সুযোগ বুঝে বাবার কাছে একটা নতুন কম্পিউটারের আবদার করেন। ছেলের আগ্রহ দেখে বাবাও সায় দেন। ব্যাস। ছয় মাসের প্রচেষ্টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের এই শিক্ষার্থী তৈরি করে ফেলেন তাঁর স্বপ্নের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র—ফ্লাইট।
অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র নির্মাণের পেছনে অনেকগুলো ধাপ থাকে। গল্প, স্ক্রিপ্ট, ক্যারেক্টার ডিজাইন, ব্যাকগ্রাউন্ড, মডেলিং, সম্পাদনা ইত্যাদি। সাধারণত এসব তৈরির পেছনে হাজারো মানুষ কাজ করেন। তবে জিসান সব করেছেন একাই। প্রতিদিন প্রায় ১০-১২ ঘণ্টা সময় ব্যয় করতে হয়েছে তাঁকে। ব্লেন্ডার, ফটোশপ, দ্য ভিঞ্চি রিসলভ, আফটার ইফেক্টসের মতো সফটওয়্যার ব্যবহার করেছেন তিনি। জিসান বলেন, ‘বড় বাজেটের প্রকল্পে প্রতিটি ধাপের জন্য আলাদা আলাদা দল থাকে। একা করাটা আমার জন্য একটা ধৈর্যের পরীক্ষা ছিল।’
প্রায় সাড়ে ৫ মিনিট দৈর্ঘ্যের ফ্লাইট চলচ্চিত্রের গল্প খুব সহজ। কেন্দ্রীয় চরিত্র বাংটুর চোখ পড়ে খেলনার দোকানের একটা বিমানের ওপর। কিন্তু এত দাম, যে তার সাধ্যের বাইরে। তখন নিজেই বিমান বানানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংটু। কাগজ দিয়ে শুরু হয় প্রচেষ্টা। প্রথমে একটি, তারপর শত শত কাগজের বিমান। অবশেষে উড়ানোর মতো বিমান বানাতে সক্ষম হয় সে।
আইরিশ রক ব্যান্ড কোডালাইনের ‘অল আই ওয়ান্ট’ গানটি শুনতে শুনতে গল্পটা প্রথম মাথায় এসেছিল জিসানের। তাই স্বল্পদৈর্ঘ্য অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটির আবহ হিসেবে এ গানটিই ব্যবহার করেছেন তিনি।
জিসান বলেন, ‘বাংলাদেশে থ্রিডি অ্যানিমেশন খুব বেশি দেখা যায় না। সেই জায়গা থেকে আমার এই উদ্যোগ। আমি হলিউডের মান অনুসরণের চেষ্টা করেছি।’ সামনের দিনগুলোতে থ্রিডি অ্যানিমেশন নিয়েই থাকতে চান এ তরুণ নির্মাতা।
জিসান ইসলামের তৈরি অ্যানিমেশনটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।