শিশুর কাছে ‘গোপন’ কথা?

ভালো ও খারাপ স্পর্শ সম্পর্কে শিশুকে জানিয়ে রাখুন। মডেল: সুমি ও আরশি
ছবি: কবির হোসেন

‘বিএফ’, ‘জিএফ’ আর ‘ক্রাশ’-এর দুনিয়ায় শিশুর কাছ থেকে মানবসম্পর্কের কোনো দিক ‘গোপন’ রাখার ভাবনাটাই এক ভীষণ ভুল। গোটা বিশ্বই তো আজ উন্মুক্ত। তাই নব্বইয়ের দশকে বেড়ে ওঠা সরল শিশুমনের সঙ্গে এ যুগের শিশুমনের পার্থক্য বিশাল। আপনার দিক থেকে ‘গোপন’ রাখা তথ্য নানান মাধ্যম থেকে ঠিকই কিন্তু জানতে পারে আজকের শিশু। আর ‘অজানা’কে অন্য কোনো জায়গা থেকে জানা শিশুর জন্য ভালো হবে নাকি মন্দ, তা কিন্তু শিশুর অভিভাবক নিজেও জানেন না। তাই আপনার বেড়ে ওঠার সময়টাতে আপনি কীভাবে কখন কতটা জেনেছিলেন, সেই হিসাব আজকের দিনে বাড়তে থাকা আপনার সন্তানের বেলায় খাটবে না। তা ছাড়া সঠিক জ্ঞানের অভাবে আপনার সন্তান অজান্তেই ভুল পথে পা বাড়াতে পারে, এ সত্যকেও অস্বীকার করার উপায় নেই।

প্রেম এবং নারী-পুরুষের অন্তরঙ্গ বিষয়ে পারিবারিক পরিমণ্ডলে আলাপ করতে সংকোচ বোধ করেন অনেকেই। কিন্তু এই সংকোচ ভাঙার সময় এসেছে। স্বাভাবিকভাবে সন্তানের সঙ্গে আলাপ করা হলে ওর মনোজগতে এটি একটি স্বাভাবিক বিষয় হিসেবেই স্থান পাবে। এ নিয়ে বাড়তি আগ্রহও কাজ করবে না, ‘উটকো’ প্রশ্নের বাণে শিশু কাউকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতেও ফেলবে না। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নিজের ব্যক্তিগত জীবনে তার অনিরাপদ হয়ে পড়ার আশঙ্কাও কমে যাবে। তাই এমন বিষয় নিয়ে শিশুর সঙ্গে আলাপ করুন। আর এ নিয়ে আপনার নিজের ধারণাও হোক স্বচ্ছ।

সহজ আলাপ, সহজ ভাষা

আর দশটি বিষয় যেমন সহজভাবে শিশুর সঙ্গে আলাপ করেন, সেভাবেই এ বিষয় নিয়ে আলাপ করুন। হঠাৎ শিশু এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করলে বিব্রত হয়ে পড়া চলবে না। প্রশ্ন শুনে আপনি বিরক্ত হয়েছেন কিংবা শিশু তার সীমার বাইরে প্রশ্ন করে ফেলেছে—এ রকম যাতে ওর মনে না হয়। শিশুর প্রশ্নে একদমই রাগ করা যাবে না। প্রশ্নের উত্তরে ধমকানি বা তিরস্কারের ভাষা শুনলে শিশুর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার মতো ভুলও করা যাবে না।

শিশুর প্রশ্নগুলোর উত্তরে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা দিতে চেষ্টা করুন
ছবি: কবির হোসেন

সত্যরে লও সহজে

‘ভালো’ স্পর্শ এবং ‘খারাপ’ স্পর্শ সম্পর্কে শিশুকে জানিয়ে রাখুন, যাতে ও ভালো আর খারাপের পার্থক্য বুঝতে পারে। ছোট্ট শিশু বাড়তে থাকে প্রতিদিন। বয়ঃসন্ধিকালে তার নিজের ভেতরেও আসে নানান পরিবর্তন। এই সময়টা কিন্তু মানবজীবনের এক নিদারুণ ‘উথাল-পাথাল’ সময়। নিজের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তনের কারণেই নানান প্রশ্ন উদয় হতে পারে ওর মনে। সম্ভাব্য প্রশ্নগুলোর উত্তর অর্থাৎ বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যাখ্যা অভিভাবকের নিজেরও জানা থাকা জরুরি।

আস্থায়-জ্ঞানে বেড়ে ওঠা

সন্তানের বয়স বুঝে একটু বিস্তারিত আলাপও করতে হবে। ওর নিরাপত্তার খাতিরেই যৌনবাহিত রোগ সম্পর্কে জানাতে হবে। উঠতি বয়সের সঠিক জ্ঞান ভবিষ্যতে ব্যক্তিজীবনে তার দায়িত্বশীল আচরণ নিশ্চিত করে। সন্তানের সঙ্গে সম্পর্কের সব বিষয়ে স্বচ্ছতা রাখলে ভবিষ্যতে সে আপনার অজান্তে ভুল পথে পা বাড়াবে না। ওর ভালো লাগা, ভালোবাসা—সবটাই জানতে পারবেন অনায়াসে। ওর আস্থা অর্জন করাটা জরুরি। ওর বিশ্বাসী মানুষের তালিকায় যদি আপনিও থাকেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার বিশ্বাস ভাঙার মতো কাজে ও নিজেকে জড়াবে না। সন্তান এবং অভিভাবকের মধ্যে পারস্পরিক বিশ্বস্ততার সম্পর্কে চিড়ও ধরবে না কখনো।