যে ৫ বদভ্যাস শিশুরা সহজেই রপ্ত করে, জেনে রাখুন সমাধান
শিশুরা অনেকটা স্পঞ্জ বা চোষকাগজের মতো। আশপাশে যা দেখে-শোনে, বুঝে হোক বা না বুঝে, তা-ই তারা শুষে নেয়। মূলত এরাই সেই ছাত্র, বিশ্বজোড়া পাঠশালা যাদের। কিন্তু এই বিশ্বসংসারের সবকিছু তো শিশুর জন্য কল্যাণকর নয়। এর মধ্যে অনেক কিছুই ক্ষতিকর। এর মধ্যে আবার এমন কিছু নেতিবাচক আচরণ বা বদভ্যাস আছে, যা শিশু দ্রুত শেখে। বলা যায়—শুনলাম, দেখলাম, শিখলাম! মা-বাবা যত তাড়াতাড়ি এসব নেতিবাচক আচরণ ধরতে পারবেন, শিশুর জন্য ততই মঙ্গল। এমনই পাঁচটি বদভ্যাস সম্পর্কে জানুন। সঙ্গে থাকছে এসব থেকে শিশুকে দূরে রাখার উপায়ও।
১. ভুল স্বীকার না করা
ভুল থেকেই শিখবে শিশু। ভুল করে করেই বেড়ে উঠবে। অনেকেই এমন ভাবেন। তাতে কারও আপত্তিও নেই। কিন্তু সমস্যা হলো, শিশু যদি ভুলটা স্বীকার না করে। আপনি ভাবতে পারেন, সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ভুল একদিন ফুল হয়েই ফুটবে। কিন্তু এমনটা না-ও হতে পারে। বরং অস্বীকারের এই প্রবণতা থেকে মিথ্যা বলা, নিজের দায়িত্ব নিতে না শেখাসহ আরও বড় সমস্যার দিকে যেতে পারে শিশু। তাই সময় থাকতেই শিশুকে শুধরে দিতে হবে, তার মনে ভুল স্বীকার করার সৎ সাহস তৈরি করতে হবে।
শিশুরা সাধারণত লজ্জা বা শাস্তির ভয়ে ভুল করে তা অস্বীকার করে। তাই এমন পরিবেশ তৈরি করুন, যাতে ভুল করার পর তাকে লজ্জা না দেওয়া হয়, শাস্তির মুখোমুখি না হতে হয়। ভুল করার পর হাসাহাসিসহ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া না দেখালে ভুল করলেও সে স্বীকার করবে। এতে তার মধ্যে দায়িত্ব নেওয়ার গুণ তৈরি হবে। এটা তাকে সততাও শেখাবে।
২. বিলম্ব
অনেক সময় কোনো কাজ দিলে শিশুর মনে দুনিয়ার আলসেমি ভর করে। কাজ করলেও তা করে নির্ধারিত সময়ের পর করে। এমনটা হতে পারে শিশুর স্কুল থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ অথবা গৃহস্থালির টুকিটাকি কাজেও। ছোটবেলায় এমন করলেও বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে, এটা ভাবার সুযোগ কম। বরং এটা তার অভ্যাসে পরিণত হতে পারে, যা পরে শোধরানো কঠিন হয়। সে দেরি করার এক দুষ্টচক্রে পড়ে যেতে পারে। সব কাজেই দেরি করে বন্ধুমহলে সে পরিচিতি পেতে পারে ‘লেট লতিফ’ নামে।
সাধারণত যেসব কাজে শিশু উৎসাহ পায় না বা আকর্ষণ বোধ করে না, সেসব কাজে সে বিলম্ব করে। কাজটি তার কাছে পর্বতসম কঠিন ও বড় মনে হলেও সে অনাগ্রহী হতে পারে। এমন অবস্থায় কাজটির ইতিবাচক দিক তুলে ধরে শিশুকে আগ্রহী করে তুলুন। অসময়ের দশ ফোঁড় সম্পর্কে তাকে ধারণা দিন। বড় ও কঠিন কাজের ক্ষেত্রে শিশুকে কাজ ছোট ছোট ভাগ করে করতে সাহায্য করুন। ছোট লক্ষ্য ঠিক করে এগোতে বলুন। নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারলে তার প্রশংসা করুন, এমনকি পুরস্কারও দেওয়া যেতে পারে।
৩. অন্যের মতামত বিবেচনা না করা
শিশুরা আত্মকেন্দ্রিক হতে পারে। কোনো একটা বিষয়ে অন্যের মতামত থাকতে পারে, সেটা সে না-ও বুঝতে পারে। এ কারণে সে ভাইবোন, খেলার সঙ্গী, এমনকি বড়দের সঙ্গেও অকারণ তর্ক করতে পারে। এমন অবস্থা থেকে উত্তরণে তাকে সবার সঙ্গে মিশতে দিন। নানামুখী সম্পর্কের চর্চা করার সুযোগও দিতে হবে। তাকে ভালো শ্রোতা হিসেবে গড়ে তুলুন। অন্যের বিষয়ে সমমর্মী হওয়ার গুরুত্ব বোঝান। পরিবারের যেকোনো বিষয়ে সবার মতামত নেওয়ার সময় শিশুরও মতামত নিন। তার মতামতেরও যে গুরুত্ব আছে, তা বোঝান। তখন অন্যের মতামত নেওয়ার গুরুত্বও সে বুঝতে পারবে।
৪. পরচর্চা
শিশু বিভিন্নভাবে অন্যের সমালোচনা করা শিখতে পারে। স্কুলের বন্ধুবান্ধব, বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যম, এমনকি পরিবার থেকেও। অন্যকে নিয়ে নেতিবাচক কথাবার্তা শুনলে যে সম্পর্কের ক্ষতি হয়, শিশু তা বুঝতে পারে না। পরচর্চার কারণে অন্যের প্রতি সুন্দর অনুভূতি নষ্ট হয়ে যায়। বন্ধুত্বেও ফাটল ধরে। কারও অনুপস্থিতিতে যে তার সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বলতে নেই, এটা শিশুকে বোঝাতে হবে। সম্পর্কে যে শ্রদ্ধা থাকতে হয়, তা বলতে হবে। সমালোচনা নয়, বরং শিশুর সামনে অনুপস্থিত কারও প্রশংসা করুন।
৫. স্বাস্থ্যবিধিতে শিথিলতা
ছোটবেলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন দরকার নেই বলে মনে করেন কেউ কেউ। কিন্তু ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা ছোটবেলা থেকেই শেখাতে হয়। না হলে বড় হয়ে শিশু স্বাস্থ্যবিধি কম মানতে পারে, শিথিলতা দেখাতে পারে। তখন তা বড় স্বাস্থ্যসমস্যা তৈরি করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রশিক্ষণ দিতে শিশুকে ঠিকঠাকভাবে শেখাতে হবে, কীভাবে হাত ধুতে হয়, ব্রাশ করতে হয়, নখ কাটতে হয় কিংবা টয়লেট ব্যবহার করতে হয়। না হলে এসব ছোটখাটো কাজ ভবিষ্যতে বড় স্বাস্থ্যসমস্যার কারণ হতে পারে। ছোটবেলায় এসব কাজকে শিশুর জন্য আনন্দদায়ক করতে হবে এবং সঠিকভাবে করতে পারলে পুরস্কৃত বা প্রশংসা করা যেতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া